আমরা হয় হিন্দু, না হয় মুসলমান, মানুষ নই!
প্রকাশ: ১১ মে ২০২১, ০৮:২২ | আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪
গত শতকের আশির দশকে সাপ্তাহিক যায়যায়দিন বের হলে প্রথম সংখ্যায় আমার নামেই একটি লেখা লিখেছিলাম। বিভুরঞ্জন সরকার। সেটা ছিল সাতদিনের ঘটনা নিয়ে পর্যালোচনা। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ লিখেছিলেন মতিউর রহমান, এখন প্রথম আলোর সম্পাদক। কিন্তু তার নাম হয়েছিল আশরাফ লতিফ।
মতি ভাই কিছু দিন পর লেখা ছেড়ে দিলে শফিক রেহমান আমাকেই রাজনৈতিক পর্যালোচনা লিখতে বললেন। যেহেতু এরশাদের সামরিক শাসনের জামানা, আসল নাম আড়ালে রেখে আমার লেখক-নাম হলো বিজন সান্যাল। তারপর একদিন শফি ভাই বললেন, তোমার মুসলমানি করতে হবে। বিজন সান্যালের লেখা পাঠক টানবে না, কেউ ধরে নেবে বিশেষ দেশ ও দলের 'দালাল'। ব্যস। নাম বদলে হলো তারিখ ইব্রাহিম। হিট।
খালেদা আমলে নতুন করে যাযাদি আবার বের হলো। ততদিনে কেউ কেউ নানাভাবে এটা জেনে গেছেন যে তারিখ ইব্রাহিম আসলে বিভুরঞ্জন সরকার। সংগ্রাম এবং ইনকিলাবে এই নাম গোপন করা নিয়ে ব্যঙ্গবিদ্রুপ করে উপসম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে।
শফি ভাই বললেন, এখন দেশে গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। তাই তারিখ ইব্রাহিম আবার বিভুরঞ্জন সরকার হয়ে যাক। হলো।
একদিন বাসে করে ঢাকার বাইরে যাচ্ছিলাম। পাশে এক ভদ্র লোক যায়যায়দিন পড়ছিলেন। একসময় পত্রিকা রেখে আমাকে বললেন, এখন আর যাযাদি পড়ে মজা পাই না। আগে তারিখ ইব্রাহিম লিখতেন। আগুন ঝরতো। এখন এক মালাউন ( বিভু) লেখে মেন্দা মারা লেখা। আরে হিন্দু কি আর মুসলমানের মতো লিখতে পারে! আমি চুপ করেই থাকলাম। আমিই সেই বিভু জানলে ভদ্রলোক টুটি টিপে ধরতেন কি না জানি না।
একবার পটুয়াখালী থেকে ঢাকা ফিরছি। লঞ্চে একজনের সঙ্গে আলাপ হলো। সারারাত নানা বিষয়ে কথা বললাম। ধর্মও বাদ গেল না। আমার সঙ্গে আলাপপরিচয়ে ভদ্রলোক খুশি হয়েছেন বলেই মনে হলো।
লঞ্চ থেকে নামার সময় তিনি করমর্দন করে আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন। আমি আমার নাম বলতেই তিনি আঁতকে উঠলেন, আপনি হিন্দু? হাত ছাড়িয়ে নিয়ে একটু স্বগতোক্তির মতো করে বললেন, আপনাকে আমি মুসলমান ভেবেছিলাম!
আমি আর কি বলি! চুপচাপ কেটে পড়লাম।
কয়দিন আগে ফেসবুকে জল শব্দ ব্যবহার করায় একজন পানি লেখার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি হয়তো জানেন না যে পানিও আরবি শব্দ নয়।
তবু জলকে না হয় পানি বলা হলো কিন্তু জলপাই তো এখনো পানিপাই হলো না!
লেখকঃ বিভুরঞ্জন সরকার সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত