আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা নিয়ে ট্রাম্পের ভিন্নমত

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২১, ১১:০০ |  আপডেট  : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:১৪

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিবৃতি দিয়েছেন। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা ফিরিয়ে আনার সময়সীমা ১১ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ না করেন।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার ২০ বছর পূর্তির আগেই শেষ মার্কিন সেনা আফগানিস্তান ছেড়ে আসবে বলে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ঘোষণা করেছেন। তাঁর এই ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প এই তারিখ পুনর্নির্ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন।

১৮ এপ্রিল দেওয়া এক বিবৃতিতে সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি মনে করেন, তাঁর গৃহীত পদক্ষেপ অনুযায়ী ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করা উচিত। এ ছাড়া ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার জনগণের কাছে ভিন্নভাবে স্মরণীয় একটি দিন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তাঁর মতে, এই তারিখটিকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের শেষ দিন হিসেবে নির্ধারণ করা কোনোক্রমেই ঠিক নয়।  ট্রাম্প তাঁর বিবৃতিতে বলেন, ১ মের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময় নির্ধারণ করে এসেছিলেন তিনি।

১৯ বছরের যুদ্ধে যথেষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে ট্রাম্প বলেন, তাঁর ক্ষমতার মেয়াদে তিনি আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাসংখ্যা কমিয়ে ২ হাজারের কাছাকাছি নিয়ে এসেছিলেন।  আফগানিস্তানে দীর্ঘ যুদ্ধে লিপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের সরঞ্জামাদি ইতিমধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে বলে জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ১১ সেপ্টেম্বরের আগেই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর সেটাই করা উচিত।

১১ সেপ্টেম্বর বা ৯/১১ আমেরিকার জন্য শোক প্রকাশের এক দিন। এই দিনটিকে তার ভাবগাম্ভীর্যের জায়গায় রাখা উচিত বলে মনে করেন ট্রাম্প। তিনি বিবৃতিতে বলেন, ‘১১ সেপ্টেম্বর আমরা সেই সব মহান আত্মাকে স্মরণ করব, যাঁরা এদিন প্রাণ হারিয়েছিলেন।’

আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চলে আসাকে একটি চমৎকার উদ্যোগ বলে বর্ণনা করেন ট্রাম্প। সাবেক এই প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি ১৮ মাসের পরিকল্পনা নিয়ে ১ মের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সীমা নির্ধারণ করেছিলেন। আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের তারিখ তাঁর নির্ধারিত সময়সীমার কাছাকাছি রাখার জন্য তিনি বর্তমান প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন সম্প্রতি ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আফগান পরিস্থিতি একটি আদর্শ অবস্থানে পৌঁছাবে, এমনটা মনে করে সেনা প্রত্যাহারের সময় বারবার পেছাতে পারি না।’

বাইডেন তাঁর ঘোষণায় বলেন, তিনি চতুর্থ মার্কিন প্রেসিডেন্ট, যাঁকে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে।

দেশের বাইরে দীর্ঘতম এই যুদ্ধ থেকে সরে আসতে অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের মতো সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও চেষ্টা করেছেন।

তালেবান হটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে আফগানিস্তানে সরকার গঠন করা হয়। কিন্তু এই সরকার এখনো আফগান জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারেনি।

আফগান সরকার টিকিয়ে রাখার জন্য সামরিক-বেসামরিক নানা খাতে হাজার হাজার কোটি ডলার অর্থ খরচ করেছে আমেরিকা। তারপরও আফগান সরকারের ভিত্তি মজবুত হয়নি। দেশটির পরিস্থিতিরও তেমন উন্নতি হয়নি। এ অবস্থায় আফগানিস্তান থেকে একেবারেরই চলে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন ছিল।

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর আফগানিস্তানে তালেবান আবার শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, তালেবানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ আল-কায়েদা আবার আফগানিস্তানকে তাদের জঙ্গি কার্যক্রমের অভয়ারণ্যে পরিণত করতে পারে।

১৮ এপ্রিল এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন আফগান ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানান। তিনি বলেন, ২০০১ ও ২০২১ সাল এক নয়।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এখন ২০০১ সাল নয়, ২০২১ সালের কাচের স্বচ্ছতা দিয়ে পরিস্থিতিকে বিবেচনা করতে হবে।’

জঙ্গিবাদের ঝুঁকিস্থলের পরিবর্তন ঘটেছে উল্লেখ করে ব্লিঙ্কেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখন আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অগ্রাধিকার হিসেবে আছে। তার মধ্যে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক, জলবায়ু সংকট, করোনা সংকটসহ দেশের জ্বালানি সম্পদের দেখভালের বিষয়গুলো রয়েছে। এখন এই বিষয়গুলোতে যুক্তরাষ্ট্রকে অধিকতর মনোযোগ দিতে হচ্ছে।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর সেখানে কী ঘটবে, এ নিয়ে কেউ কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে ২০১১ সালে ইরাক থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে আফগানিস্তানে।

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর ইরাকের বিভিন্ন এলাকা জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের দখলে চলে গিয়েছিল। ফলে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের ফের ইরাকে পাঠাতে হয়েছিল।

সুলিভান বলেছেন, মার্কিন সেনাদের চলে আসার পর আফগানিস্তানের পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা নিয়ে কেউ কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না। তবে প্রত্যাহারের পর পুনরায় সেখানে সেনা পাঠানোর কোনো চিন্তা প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নেই বলে জানান তিনি।

মার্কিন–সমর্থিত আফগান সরকারের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি বলেছেন, তাঁদের সরকার দুর্বল বলে যে প্রচারণা চলছে, তা অমূলক। গত দুই বছর ধরে ৯০ শতাংশ জঙ্গি হামলা আফগান বাহিনী এককভাবে মোকাবিলা করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আশরাফ আস্থার সঙ্গে দাবি করেন, আফগানিস্তানের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তাঁর সরকার পুরোপুরি সক্ষম।

গত জানুয়ারি মাসে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আফগানিস্তানে এখনো ৫০০ জনের মতো আল-কায়েদার জঙ্গি সক্রিয় রয়েছে। এই জঙ্গিদের সঙ্গে তালেবানের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তবে তালেবানের দাবি, তাদের জানামতে আফগানিস্তানে আল-কায়েদার উপস্থিতি নেই।

মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, জাতিসংঘ আফগান পরিস্থিতির ওপর নজর রাখবে। সেখানে নিরাপত্তার কোনো ঝুঁকি সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলার সক্ষমতা জাতিসংঘের আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুলিভান বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন আফগানিস্তান থেকে একেবারে চোখ সরিয়ে নেবেন, বিষয়টি এমন নয়। আমেরিকা যেকোনো সময় যেকোনো স্থানে নিজের নিরাপত্তার জন্য অবস্থান গ্রহণে সক্ষম।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত