আদমদীঘিতে কাঁচা মরিচ চাষে কাঁচা পয়সা পাচ্ছে কৃষক 

  আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৪, ২১:৪২ |  আপডেট  : ২৭ জুন ২০২৪, ১৪:২২

বগুড়ার আদমদীঘিতে বিগত কয়েক বছর যাবৎ কৃষকরা ইরি-বোরো ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা ধান চাষের পাশাপাশি এখন মরিচ চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। চলতি ইরি-বোরো মওসুমে ধান বিক্রি হয়েছে প্রকার ভেদে ৮শ থেকে ১০০০ টাকা দরে। মরিচ চাষ বেশ লাভজনক হওয়ায় এলাকার কৃষকরা ধান চাষের পাশাপাশি মরিচ চাষের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। কাঁচা মরিচ চাষ করে কাঁচা পয়সা পেয়ে কৃষকদের মুখে হাসি দেখা গেছে। উপজেলায় এবার মোট ২৫ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের চাষাবাদ করা হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলে গ্রীষ্ম ও শীতকালে মরিচ চাষ হয়ে থাকে। চলতি মওসুমে উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। মরিচ ক্ষেতের পরিচর্যা ও মরিচ বিক্রিতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে উপজেলার মরিচ চাষীরা। 

জানা গেছে, উপজেলা সদর ইউনিয়ন, ছাতিয়ানগ্রাম, চাঁপাপুর, কুন্দগ্রাম, নশরতপুর, সান্তাহার ইউনিয়নের কৃষকরা বিগত বছর গুলোতে মরিচ চাষ করে সংসারে আর্থিক স্বচ্ছলতা এনেছেন চাষীরা। বর্তমানে দেশী মরিচ অপেক্ষা হাইব্রিড জাতের মরিচের চাষ করছে। এতে তারা লাভবানও হচ্ছে। তবে এলাকার অনেক কৃষকের অভিযোগ, কাঁচা মরিচের গাছ গুলোর পাতা শুকিয়ে মরে যাচ্ছে। মরিচ ক্ষেতে হাজার হাজার টাকা খরচ করে আগামী বর্ষা মৌসুমে কিভাবে তারা এই মরিচ গাছ গুলো টিকিয়ে রাখবে এটা নিয়ে তারা বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তাদের দাবী উপজেলা কৃষি অফিস যদি তাদের একটু পরামর্শ দিত তাহলে তারা বেশি লাভবান হত। কিন্তু তাদের দেখাই মেলে না। এমনকি তাদের ফোন দিয়েও খোঁজ পাওয়া যায় না। তারা স্থানীয় বাজার থেকে নিজেদের ইচ্ছেমত কীটনাশক ক্রয় করে ক্ষেতে প্রয়োগ করে থাকেন কিন্তু তাতে কোন কাজ হয় না।

উপজেলার জিনইর গ্রামের কালাম ফকির জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে কম ঝুকিপুর্ন এবং লাভজনক ফসল হওয়অয় তিনি বিগত কয়েক বছর থেকে মরিচ চাষ করে সংসারে স্বচ্চলতা এনেছেন। এবারও তিনি ২৯ শতক জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। এতে তার সর্বমোট খরচ হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা। ইতোমধ্যে প্রায় ১৫ হাজার টাকার বেশী মরিচ বিক্রি করেছেন। ২৯ শতক জমির মরিচ থেকে কম পক্ষে লক্ষাধিক টাকা আয় করার আশা করছেন তিনি। তার মতে ফাল্গুন মাসে মরিচের বীজ বপন করে বৈশাখ মাসে জমি তৈরি করে মরিচের চারা রোপন করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। আবহাওয়া ভাল থাকলে জৈষ্ঠ্য থেকে শুরু করে আশ্বিন মাস পর্যন্ত জমি থেকে মরিচ বিক্রি করা যায়। 

উপজেলার কেশরতা গ্রামের মরিচ চাষী রফিকুল ইসলাম তার বর্গা নেয়া ২৮ শতক জমিতে গত দুই বছর যাবৎ মরিচ চাষ করে আসছেন। গত বছর তার খরচ বাদ দিয়েও প্রায় লক্ষাধিক টাকার মরিচ বিক্রি করেছেন বলে তিনি জানান। তবে তার অভিযোগ, মরিচের গাছ গুলি বড় হওয়ার পর কি যেন অজানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গাছের পাতা শুকিয়ে গাছ গুলো মরে যায়। কিন্তু কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কোনই পরামর্শ পাওয়া যায় না। উপরোন্ত পরামর্শের জন্য তাদের বার বার ফোন দিলেও তাদের সারা পাওয়া যায় না।

উপজেলা কৃষি অফিসার মিঠু চন্দ্র অধিকারী জানান, মরিচ উষ্ণ ও শুষ্ক জলবায়ুর উপযোগী মসলা জাতীয় ফসল যা ১২ মাস চাষ করা যায়। সব ধরনের দো-আঁশ মাটিতে মরিচ চাষের উপযোগি। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে গাছে ফুল আসা কিছুটা ব্যাহত হয়ে থেকে জমিতে মরিচের চারা রোপনের এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে গাছে ফুল আসা শুরু হয়ে দুই মাসের মধ্যে কৃষকরা মরিচ বিক্রি শুরু করতে পারে। প্রতি হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের ফলন ১০ থেকে ১২ টন পাওয়া যায়। 
 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত