আজ সরস্বতী পূজা, সারাদেশে চলছে বিদ্যার দেবীর আরাধনা
প্রকাশ: ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৬:৩৩ | আপডেট : ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮:৩৭
জ্ঞান ও বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনার দিন আজ সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি)। সরস্বতী পূজা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। সরস্বতী বৈদিক দেবী হলেও পূজার বর্তমান রূপটি আধুনিককালে প্রচলিত হয়েছে। তবে প্রাচীনকালে তান্ত্রিক সাধকরা সরস্বতী-সদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন বলে জানা যায়।
শাস্ত্রীয় বিধান অনুসারে, মাঘের শুক্লাপঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এ তিথি বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। শ্বেত-শুভ্র বসনা স্বরসতী দেবীর এক হাতে বেদ, অন্য হাতে বীণা। এ জন্য তাকে বীণাপানিও বলা হয়। সনাতন ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, জ্ঞান ও বিদ্যার অধিষ্ঠাত্রী দেবী তার আশীর্বাদের মাধ্যমে মানুষের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করতে প্রতি বছর আবির্ভূত হন ভক্তদের মাঝে। সরস্বতী খুশি হলে বিদ্যা ও বুদ্ধি অর্জিত হবে। ঐশ্বর্যদায়িনী, বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আঁধার হিসেবে সরস্বতী দেবীর আরাধনা করা হয়। তিনি বাগদেবী, বাগদেবী অর্থে তিনি নব হৃদ পবিত্র করেন। তিনি সুন্দর ও মর্ত্যবাক্যের প্রেরণকাত্রী। তিনি মহাসমুদ্রের মতো পরমাত্মার প্রকাশ করেন। তিনি সমুদয় মানব-মানবীর হৃদয়ে জ্যোতি সঞ্চারিত করেন। পরমাত্মার মুখ থেকে তার আবির্ভাব।
সোমবার সকালে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ছাত্রছাত্রীদের বাসা ও পূজামণ্ডপে সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। সকালে পূজা শেষে ভক্তরা অঞ্জলি গ্রহণ করেন। এদিন শিশুদের হাতেখড়িরও আয়োজন করা হয়। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি সরস্বতী পূজার আয়োজন করেছে। সকাল ৮টায় পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতিবারের মতো এবারও সবচেয়ে বড় পূজার আয়োজন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল খেলার মাঠে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল অভ্যন্তরে হল প্রশাসনের পূজাসহ ৭৪টি বিভাগ বা ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনায় সরস্বতী পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ঢাবির জগন্নাথ হল প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, পূজায় দেশ-বিদেশ থেকে হাজারও পুণ্যার্থী এসে জড় হয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট এবং অনুষদ তাদের নিজ নিজ মণ্ডপ নিয়ে বসেছেন। ছোট-বড় এসব মণ্ডপ সেজেছে বিভাগ ইনস্টিটিউটগুলোর নিজস্ব সৃজনশীল কারুকাজের সাজে। এছাড়াও জগন্নাথ হল সংলগ্ন পুকুরে স্থাপন করা হয়েছে দেবী সরস্বতীর সবচেয়ে বড় প্রতিমা। চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীদের বানানো এই প্রতিমা প্রতি বছর পূজা দিতে আসা মানুষদের নজর কাড়ে।
পূজার সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধানে জগন্নাথ হল প্রশাসনের মোট ১১টি উপ-কমিটি কাজ করছে। পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি দেবাশীস পাল বলেন, ‘গত জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে আমরা বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ার এক মহান প্রত্যয় গ্রহণ করেছি। এবারের সরস্বতী পূজা এক ভিন্ন আঙ্গিকে আয়োজিত হচ্ছে। জগন্নাথ হলের উপাসনালয়ে দুই দিনব্যাপী এ আয়োজনের মধ্যে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া, প্রসাদ বিতরণ, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, রক্তদান কর্মসূচি ইত্যাদি রয়েছে।
নিরাপত্তার বিষয়ে পূজা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মিঠুন কুমার সাহা বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সার্বক্ষণিক ও কার্যকর তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে জগন্নাথ হল প্রশাসন হল উপাসনালয়ে তথা পূজামণ্ডপ থেকে শুরু করে সমগ্র হল প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় লোকবল ও কারিগরি সহায়তা দিয়ে আমাদের পাশে রয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), শাহবাগ থানা, ফায়ার সার্ভিস, বর্ডার গার্ড অব বাংলাদেশসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা এজেন্সি। এ জন্য আমরা জগন্নাথ হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবার প্রতি ধন্যবাদ জানাই।’
এদিকে পূজা উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনুস। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। সোমবার সকালে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে এসে তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং পূজার সার্বিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নেন।
এদিকে সোমবার সকালে বাণী অর্চনার মধ্য দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। মণ্ডপগুলোতে সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরা বিদ্যার দেবীর সামনে প্রার্থনায় অংশ নেন। পূজা শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছাড়াও পুরান ঢাকার এলাকাবাসী ও আশেপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা পূজায় অংশ নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক রবীন্দ্রনাথ মণ্ডল জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৩টি বিভাগ, দুটি ইনস্টিটিউট, চারুকলা অনুষদ ও একমাত্র ছাত্রী হলের মণ্ডপে করা হয়েছে পূজার আয়োজন।
তিনি বলেন, ‘সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পূজা সম্পন্ন হয়েছে। দিনের বাকি সময়ও আনন্দের সঙ্গে পূজা উদযাপন করা হবে। নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত সবকিছু ঠিকভাবেই চলছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী আদিত্য বলেন, ‘সকালে অঞ্জলি দিয়েছি, প্রসাদ খেয়েছি, সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে আনন্দঘন সময় কাটাচ্ছি। বিদ্যাদেবী যেন আমাদের আশীর্বাদ দিয়ে যান এটাই চাওয়া।’
কা/আ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত