আজ মা দিবস

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ মে ২০২৪, ১২:৪৫ |  আপডেট  : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:০৭

মা, পৃথিবীর সবচেয়ে মধুরতম শব্দ। সদ্য জন্ম নেয়া শিশুর পরম আশ্রয়ের মানুষ মা। মায়ের পরম মমতায়, ভালোবাসায়, আদরে-যত্নে লালিত হতে থাকে ছোট্ট শিশুটি।

শত বিপদ-আপদ থেকে মা তার সন্তানকে আগলে রাখেন সবসময়। চেখের আড়াল হলেই সন্তানের জন্য মায়ের চিত্ত যেন উদগ্রীব হয়ে থাকে সবসময়। তাই একজন সন্তানের জীবনে মায়ের ঋণ কোনো কিছুর বিনিময়ে শোধ করা যায় না। আজ সেই মায়েদের দিন, বিশ্ব মা দিবস।

মা দিবস বা মাতৃ দিবসে মাতৃত্বকে সমাজে একটি স্থান দেয়ার জন্য পালন করা হয়। এটি বিশ্বের অনেক অঞ্চলে বিভিন্ন দিনে, সাধারণত মার্চ, এপ্রিল বা মে উদ্‌যাপন করা হয়। এটি বাবা দিবসের অনুপূরক, যা পিতার সম্মান প্রদর্শন জনক অনুষ্ঠান।

বিশ্বের সর্বত্র মায়ের এবং মাতৃত্বের অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন করতে দেখা যায়। এ গুলোর অনেকই প্রাচীন উৎসবের সামান্য প্রামাণিক সাক্ষ্য, যেমন, সিবেল গ্রিক ধর্মানুষ্ঠান, হিলারিয়ার রোমান উৎসব যা গ্রিকের সিবেল থেকে আসে, অথবা সিবেল এবং হিলারিয়া থেকে আসা খ্রিস্টান মাদারিং সানডে অনুষ্ঠান উদ্‌যাপন। কিন্তু আধুনিক ছুটির দিন হল একটি আমেরিকান উদ্ভাবন যা সরাসরি সেই সব অনুষ্ঠান থেকে আসেনি। তা সত্ত্বেও, কিছু দেশসমূহে মা দিবস সেই সব পুরোনো ঐতিহ্যের সমার্থক হয়ে গেছে।

ছুটির দিনটি ক্রমে এত বেশি বাণিজ্যিক হয়ে পড়ে যে এটির স্রষ্টা আনা জার্ভিস এটিকে একটি "হলমার্ক হলিডে" অর্থাৎ যে দিনটির বাণিজ্যিক প্রয়োজনীয়তা অভিভূত করার মতো, সেই রকম একটি দিন হিসাবে বিবেচিত করেন। তিনি শেষে নিজেরই প্রবর্তিত ছুটির দিনটির নিজেই বিরোধিতা করা শুরু করেন।

একটি গোষ্ঠীর মতে এই দিনটির সূত্রপাত প্রাচীন গ্রীসের মাতৃ আরাধনার প্রথা থেকে যেখানে গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল-এর উদ্দেশ্যে পালন করা হত একটি উৎসব। এশিয়া মাইনরে মহাবিষুব -এর সময়ে এবং তারপর রোমে আইডিস অফ মার্চ (১৫ই মার্চ) থেকে ১৮ই মার্চের মধ্যে এই উৎসবটি পালিত হত।

প্রাচীন রোমানদের ম্যাত্রোনালিয়া নামে দেবী জুনোর প্রতি উৎসর্গিত আরো একটি ছুটির দিন ছিল, যদিও সেদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হত।

মাদারিং সানডের মতো ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে বহু আচারানুষ্ঠান ছিল যেখানে মায়েদের এবং মাতৃত্বকে সম্মান জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবারকে আলাদা করে রাখা হত। মাদারিং সানডের অনুষ্ঠান খ্রিস্টানদের অ্যাংগ্লিকানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পঞ্জিকার অঙ্গ। ক্যাথলিক পঞ্জিকা অনুযায়ী এটিকে বলা হয় লেতারে সানডে যা লেন্টের সময়ে চতুর্থ রবিবারে পালন করা হয় ভার্জিন মেরি বা কুমারী মাতার ও "প্রধান গির্জার" সম্মানে। প্রথানুযায়ী দিনটিকে সূচিত করা হত প্রতিকী উপহার দেওয়া এবং কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রান্না আর ধোয়া-পোছার মত মেয়েদের কাজগুলো বাড়ির অন্য কেউ করার মাধ্যমে।

মা দিবস ছাড়াও বহু দেশে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয় ৮ই মার্চ।

জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত "মাদার্স ডে প্রক্লামেশন" বা "মা দিবসের ঘোষণাপত্র" মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের গোড়ার দিকের প্রচেষ্টাগুলির মধ্যে অন্যতম। আমেরিকান গৃহযুদ্ধ ও ফ্রাঙ্কো-প্রুশীয় যুদ্ধের নৃশংসতার বিরুদ্ধে ১৮৭০ সালে রচিত হোই-এর মা দিবসের ঘোষণাপত্রটি ছিল একটি শান্তিকামী প্রতিক্রিয়া। রাজনৈতিক স্তরে সমাজকে গঠন করার ক্ষেত্রে নারীর একটি দায়িত্ব আছে, হোই-এর এই নারীবাদী বিশ্বাস ঘোষণাপত্রটির মধ্যে নিহিত ছিল।

১৯১২ সালে আনা জার্ভিস স্থাপন করেন মাদার'স ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন্ (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি) এবং "মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার" আর "মা দিবস" এইসব শব্দবন্ধের বহুল প্রচার করেন।

"She was specific about the location of the apostrophe; it was to be a singular possessive, for each family to honour their mother, not a plural possessive commemorating all mothers in the world."

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস দ্বারা দিনটিকে সরকারী ছুটির দিন হিসাবে অনুমোদন করার জন্য বিল পাশের সময় আইনে এই প্রচারণারই সাহায্য নেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উড্রো উইলসন এবং অন্যান্য মার্কিন রাষ্ট্রপতিরা। আমেরিকান প্রেসিডেন্সি প্রজেক্ট থেকে প্রাপ্ত প্রেসিডেন্সিয়াল প্রক্লামেশনস বা রাষ্ট্রপতির ঘোষণাপত্র:

বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দিনে মা দিবস পালিত হয়। গুগল অনুসন্ধানের ফলাফলের প্রবণতা পরীক্ষা করে দেখলে দেখা যাবে যে প্রাথমিকভাবে দুই রকমের ফল পাওয়া যায়, ক্ষুদ্রতর ফলটি মাদারিং সানডে-এর ব্রিটিশ প্রথা অনুযায়ী লেন্ট-এর চতুর্থ রবিবার এবং বৃহত্তর ফলটি মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার।

যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ছুটির দিনটিকেই অন্যান্য দেশ এবং সংস্কৃতি একরূপে গ্রহণ করে সেহেতু যুক্তরাজ্যতে মাদারিং সানডে বা গ্রিসের মন্দিরে যিশুর প্রাচীনপন্থী পুজার্চনার মত মাতৃত্বের সম্মানে বিদ্যমান অনুষ্ঠানগুলির সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়ার জন্য তারিখটিকে সেইরকমভাবে পাল্টে নেওয়া হয। ক্যাথলিক দেশগুলোতে ভার্জিন মেরি ডে বা ইসলামিও দেশগুলোতে পয়গম্বর মুহাম্মাদ-এর মেয়ের জন্মদিনের মত, কিছু দেশে সেখানকার প্রধান ধর্ম অনুযায়ী তারিখটি পাল্টে দেওয়া হয়। অন্য বহু দেশে ব্যবহৃত হয় সেই তারিখটি যেটির একটি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে, যেমন বলিভিয়া যে তারিখটি ব্যবহার করে একসময় ওই তারিখে ওখানকার নারীরা একটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল। সম্পূর্ণ তালিকার জন্য দেখুন "আন্তর্জাতিক ইতিহাস ও আচারানুষ্ঠান"।

 

সান

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত