আজও উত্তাল শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস

  শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ জানুয়ারি ২০২২, ১১:৪৩ |  আপডেট  : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৭

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সোমবারও উত্তাল শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) ক্যাম্পাস। দিনভর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেওয়া হয় রবিবার। রাত ১২টায়ও ক্যাম্পাসজুড়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, শাবিপ্রবিতে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার জন্য উপাচার্য দায়ী। হামলায় প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর আহত হওয়াকে ন্যাক্কারজনক বলে মন্তব্য করছেন আন্দোলনকারীরা। এসবের জের ধরে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করছেন। তবে পরবর্তী কর্মসূচি সম্পর্কে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

এর আগে রবিবার সন্ধ্যায় এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য শাবিপ্রবি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। এসময় সোমবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দাফতরিক কার্যক্রম সচল থাকবে বলেও জানানো হয়।

এদিকে রবিবার বিকালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করে অবরুদ্ধ উপাচার্যকে রক্ষা করতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হঠাৎ করে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করে পুলিশ।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ ঘটনায় পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী কথা, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাকিয়া, মাশেদ হাসান, অংকিতা, অন্যান্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সজল কুন্ড, গুলজার রহমান, আবু সালেহ মো. নাসিম, বুশরা, ছোয়া, মাজেদুল ইসলাম সিজন, শিক্ষকদের মধ্যে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক ড. জহীর উদ্দিন আহমদসহ অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

এ ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হন।

এদিন দুপুরে ক্যাম্পাসের উত্তপ্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি প্রতিনিধি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক, হল প্রভোস্টসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। পরে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে না নিলে একপর্যায়ে ‘প্রশাসন ধিক্কার, প্রশাসন ধিক্কার’ বলতে বলতে শিক্ষার্থীরা এই প্রতিনিধি দলের পিছু নেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, প্রক্টর, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকসহ প্রশাসনের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিয়ে হলের গুণগত মান উন্নত করা এবং অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের কাছে এক সপ্তাহের সময় চায় প্রশাসন।

কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি না মানায় সময় বাড়াতে অস্বীকৃতি জানান আন্দোলনকারীরা। পরে প্রশাসনিক টিমের সদস্যরা সেখান থেকে চলে যাওয়ায় পথে শিক্ষার্থীরা পেছন পেছন ‘প্রশাসন ধিক্কার, প্রশাসন ধিক্কার’ বলে স্লোগান দিতে দিতে অর্জুন তলা পর্যন্ত যান।

এরপর একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক বডির পিছু নেওয়ার পর অর্জুন তলা থেকে উপাচার্য কার্যালয়ের দিকে আসেন। এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমদকে সামনে পান আন্দেলনকারীরা। তখন উপাচার্যকে ঘিরে ধরে তার পিছু নিয়ে ‘ধিক্কার ধিক্কার’, ‘প্রশাসন ধিক্কার’ বলে স্লোগান দিতে দিতে আইআইসিটি ভবনের দিকে আগান। তখন উপাচার্যকে নিয়ে উপস্থিত শিক্ষক, কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসিটি দিকে এগুলে শিক্ষার্থীরা তার পেছন পেছন সেখানে যান।

পরে আইআইসিটি ভবনে ঢুকলে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে ফেলেন শিক্ষার্থীরা। প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ রাখার পর উপাচার্যকে আইআইসিটি ভবন থেকে মুক্ত করে তার বাসভবনে পৌঁছে দেয় পুলিশ।

এর আগে এদিন প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগের দাবিসহ তিন দফা দাবি আদায়ে ছাত্রীদের চলমান আন্দোলনে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগে সকাল থেকেই রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এসময় ক্যাম্পাসে কোন ধরনের যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হয়নি।

পরে দুপুর পৌঁনে ৩টার দিকে গোলচত্বরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, প্রক্টর ড. আলমগীর কবীর, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমদ, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মহিবুল আলম।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সিলেট মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, পুলিশ শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়নি। ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝাতে গিয়েছিলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরাই তাদের ওপর চড়াও হন।

পুলিশ তাদের পেছনে অবস্থান নিয়েছিল। হঠাৎ শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করলে তিনিসহ পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন। ফলে পুলিশ জানমাল রক্ষার্থে সাউন্ড গ্রেনেড ছুঁড়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে। বর্তমানে পুলিশ ক্যাম্পাসে অবস্থান করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত