আইএমএফ বলেছে বাংলাদেশের অর্জন অসামান্য : অর্থমন্ত্রী

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২২, ২০:০৯ |  আপডেট  : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:০২

সম্প্রতি সফরে আসা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছে বলে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল  বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কোথায় আছে, কোন স্টেজে সেটা দেখার জন্য আইএমএফ প্রতিনিধিদল ঢাকায় এসেছিলেন। তারা প্রাণখুলে বাংলাদেশের অসামান্য অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এ অর্জনগুলো একে একে হয়নি, শুধু সরকারের হাত দিয়েও হয়নি। করদাতাদের বড় অবদান রয়েছে। আমাদের এগিয়ে যেতে দেশের সবার অংশ নিতে হবে।

শনিবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারীদের পুরস্কার ও সম্মাননা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম।

মন্ত্রী বলেন, ১৪ বছর আগে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার ছিল ১০০ বিলিয়ন ডলার, এখন তা চারগুণ বেড়ে আমাদের ৪৬৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। তেমনি মাথাপিছু আয় ৬৮৬ ডলার ছিল তা বেড়ে হয়েছে তা এখন ২৮৬৪ ডলার। আমাদের এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় করদাতাদের ভূমিকা অনেক। আপনাদের ত্যাগের কারণে আজ এখানে আমরা আসতে পারছি।

তিনি বলেন, আমরা এখন মধ্যম আয়ের দেশ। আমাদের লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে নিয়ে যাওয়া। আর ২০৪১ এ উন্নত দেশের কাতারে যাওয়া। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে জন্য ট্যাক্স দিতে হবে। আপনার যদি ট্যাক্স না দিলে আমাদের পিছিয়ে পড়া মানুষগুলোর জন্য কিছু করতে পারতাম না। শিগগির ভ্যাট সংগ্রহ পদ্ধতিকে আধুনিকায়ন করে আমরা এগিয়ে দেবো। আমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রত্যেককে অংশ নিতে হবে। এটা করলে টেকসই উন্নয়ন হবে।

ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য মন্ত্রী বলেন, আমাদের পরামর্শ দেন, আমরা আপনাদের পরামর্শ নেবো। আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনাদের শক্তিশালী করে ভ্যাট সংগ্রহ করা। এ ভাবেই দেশ এগিয়ে যাবে। আর দেশকে আরও এগিয়ে নিতে গেলে সবার এগিয়ে আসতে হবে।

যারা নিয়মিত ভ্যাট দিচ্ছেন তাদের হয়রানি না করে নতুন নতুন ক্ষেত্র শনাক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এখনো যাদের মূসক কর জালের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি তাদের মূসকের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। যারা নিয়মিত ভ্যাট দিচ্ছেন তাদের হয়রানি না করে নতুন নতুন ভ্যাট-ক্ষেত্র শনাক্ত করে রাজস্বের আওতায় আনা জরুরি। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যের বৈষম্য দূর হবে। মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে খাতাপত্র আটক করা, হয়রানি করা, নোটিশ দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির যে অভিযোগ পাওয়া যায় তা স্থিতিশীল ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের জন্য সহায়ক নয়। তবে, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে রাজস্ব ফাঁকি দেয় আমরা তাদের পক্ষে নই।

তিনি বলেন, এনবিআর মেইড ইন বাংলাদেশের যে লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে তা যদি বাস্তবায়ন করতে হয় তাহলে ব্যাক ওয়ার্ড ইন্ডাস্ট্রিগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। এর পাশাপাশি অটোমেশনটা জরুরি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে সোর্স ট্যাক্স বা উৎসে কর। রাজস্ব সংগ্রহের অন্যতম উৎসে কর কিন্তু পরবর্তীতে যা সমন্বয় করা হয় না। এ বিষয়টি এনবিআরের ভেবে দেখা উচিত।

অনুষ্ঠানে জাতীয় পর্যায়ে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। ‘উন্নয়নের ভ্যাট নীতি, ভ্যাট দিয়ে গড়ব জাতি’ স্লোগানকে সামনে রেখে ঢাকাসহ সব বিভাগীয় শহর ও কমিশনারেট কার্যালয়ে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উদযাপন হচ্ছে। একই সঙ্গে ১০ থেকে ১৫ ডিসেম্বর ভ্যাট সপ্তাহ উদযাপনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি নিয়েছে এনবিআর।

সভাপতির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, গত তিন বছরে করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতি ও বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আরেক দফা সংকটে আছি। সেদিক থেকে আমরা রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে পড়েনি। ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধির মধ্যে আছি। রাজস্বে গত বছরের প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশ ছিল, এ বছরও আগের মতোই প্রবৃদ্ধি থাকবে। সামনে উন্নয়নশীল দেশের চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চ্যালেঞ্জকে আমরা সুযোগও হিসাবে দেখি। এতে আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। দেশের অভ্যন্তরিণ উৎপাদন থেকে নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে পারি, সে কারণেই আমাদের ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ স্লোগান।

তিনি বলেন, আমরা অটোমেশনের কাজ হাতে নিয়েছি। আমরা পলিসি সাপোর্টের মাধ্যমে কর প্রক্রিয়া সহজীকরণের ব্যবস্থা নিয়েছি। অনেক ক্ষেত্রে করহার কমিয়ে আনা হয়েছে। করহারের হ্রাসের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করছি। আমরার করনেট যত বৃদ্ধি করতে পারবো, ততই কর হার কমাতে সক্ষম হবো। আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে, সেটা পূরণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য বিজনেস ও ইন্ডাস্ট্রিজকে সহায়তা করে যাওয়া।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত