অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পাওয়ায় অনিশ্চয়তা: অন্য তৎপরতা শুরু করেছে সরকার
প্রকাশ: ৯ এপ্রিল ২০২১, ০৯:৩০ | আপডেট : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৪
দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরুর দুই মাসের মাথায় সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা পাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। বিশেষ করে চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে টিকা পাওয়ার জন্য তৎপরতা শুরু করেছে সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই দুটি দেশের টিকা দ্রুত নিতে চায় বলে দুই দেশের দূতাবাসকে জানিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া যেকোনো দেশই টিকা দিতে চাইলে সরকার নেবে বলে মনস্থির করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, টিকা নিরাপদ, এটা নিশ্চিত হয়েই এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ গ্যাভি-কোভ্যাক্স ফ্যাসিলিটি বাংলাদেশকে ১ লাখ ৬১০ ডোজ টিকা বিনা মূল্যে সরবরাহ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সরকার তাদের টিকা গ্রহণ করবে বলে গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে।
চায়না সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনের উৎপাদিত পাঁচ লাখ টিকা বাংলাদেশকে উপহার হিসেবে দেওয়ার কথা বলেছিল চীনা দূতাবাস। এই টিকার অনুমোদনসংক্রান্ত বিষয়ে কিছু প্রশ্ন ওঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে সময় নেয়। এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দিয়েছে, তারা সেই উপহার নেবে। এ ছাড়া তারা যদি বাংলাদেশে কর্মরত চীনা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই টিকা দিতে চায়, তা–ও দিতে পারবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর সূত্র বলছে, ফেব্রুয়ারি মাসে চীনা দূতাবাস টিকা উপহার দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারকে জানায়। অনুরোধের বিষয়টি আসার পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত ২ মার্চ অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে চিঠি দিয়ে জানায়, চায়না সিনোফার্ম ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশনের উৎপাদিত টিকা নেওয়ার অবকাশ নেই। কারণ, সিনোফার্মের টিকার অনুমোদন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স বা জাপান দেয়নি। বাংলাদেশে নতুন কোনো ওষুধ বা টিকা ব্যবহারের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা এই দেশগুলোর অনুমোদন থাকার প্রয়োজন হয়।
কিন্তু ৫ এপ্রিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে আবার চিঠি দিয়ে জানানো হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন করোনার টিকাসংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনায় সিনোফার্মের তৈরি টিকাকে তিনটি সূচকে ইতিবাচক বলে উল্লেখ করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিকাটি নেওয়ার ব্যাপারে মত দেন।
অন্যদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে স্পুতনিক-ভি ভ্যাকসিন কেনার বিষয়ে কথা বলেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। শুরুতে রাশিয়া বাংলাদেশকে কাঁচামাল দিতে চায় এবং টিকাটি স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের প্রস্তাব দেয়। সেই প্রস্তাব পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ টিকাটি রাশিয়ার কাছ থেকে সরাসরি কিনতে চায় বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
এদিকে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় চালানের আংশিক পাওয়া গেছে। তৃতীয় চালান এখনো আসেনি। তবে স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বেক্সিমকো সরকারকে গতকাল জানায়, তারা সময়মতো টিকা পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। বেক্সিমকোর মাধ্যমে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা পাওয়ার কথা। এখন পর্যন্ত পেয়েছে ৭০ লাখ ডোজ। এদিকে সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা রপ্তানির ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘চীনের টিকা নেব, সেটা আমরা আগেই জানিয়ে দিয়েছি। তাদের দূতাবাসকে আমরা এটাও বলেছি, তোমরা যদি এখানে তৈরি করতে চাও, তাহলেও আমরা নেব। কিন্তু তারা এমন কিছু বলেনি। এখন তারা কবে দিতে পারবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। অগ্রগতি শিগগিরই জানা যাবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও তাঁদের কথা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও কথা বলেছে। তবে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা এখনো পাওয়া যায়নি বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারত বলেছে তারা পাঠাবে। কিন্তু সময়মতো না পাওয়ায় চিন্তিত সবাই।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত