অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাদক সংশ্লিষ্টতা দুঃখজনক: রাষ্ট্রপতি
প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২২, ২১:২৫ | আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২:১১
পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাদক সংশ্লিষ্টতা দুঃখজনক মন্তব্য করে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে শুদ্ধি অভিযান চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে 'পুলিশ সপ্তাহ-২০২২' উপলক্ষে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এ নির্দেশনা দেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, পুলিশসহ সরকারি বিভিন্ন দফতরের কিছু অসাধু কর্মচারীরাও এ অপরাধে জড়িত থাকার খবর প্রায়ই গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়, যা খুবই অনভিপ্রেত ও দুঃখজনক। যুব সমাজকে মাদকের ভয়াবহ ছোবল থেকে রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, পুলিশকে এক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নিয়ে আরও বেশি সক্রিয় ও তৎপর হতে হবে। প্রয়োজনে শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। মাদক একটি বড় সামাজিক ব্যাধি হিসেবে দেখা দিয়েছে। দেশের তরুণ সমাজের একটি অংশ মাদক সংক্রান্ত অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। জঙ্গি দমন বাংলাদেশ পুলিশের অন্যতম প্রধান সাফল্য হিসেবে বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান সরকার সরকারি সব সেবা মানুষের দোর গোড়ায় পৌঁছাতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। জনগণকে দ্রুততম সময়ে পুলিশি সেবা প্রদান আপনাদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। জনগণের সেবা প্রাপ্তি সহজীকরণে আপনাদেরকে আরও তৎপর ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সেবা প্রত্যাশী মানুষের সমস্যার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তাদেরকে দ্রুত আইনি সেবা প্রদানে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সাধারণ মানুষ বিপদে পড়েই আইনি সেবা পেতে পুলিশের কাছে আসে। আপনারা এসব বিপদাপন্ন মানুষের সমস্যা ও অভিযোগ মনযোগ দিয়ে শুনবেন, তাদেরকে আন্তরিকতার সঙ্গে আইনি সেবা দিতে কখনও কুণ্ঠাবোধ করবেন না। সেবা প্রার্থীরা যেন হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে আপনাদের খেয়াল রাখতে হবে।
তিনি বলেন, মনে রাখবেন, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পুলিশ সপ্তাহে-১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সদস্যদের বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ‘তোমরা জনগণের পুলিশ। ’ আপনারা প্রকৃত অর্থে জনগণের পুলিশ হওয়ার লক্ষ্যে ‘বন্ধু’ হিসেবে জনগণের পাশে দাঁড়াবেন, মানবিক পুলিশ হবেন এবং জনগণকে সেবা প্রদান এবং তাদের আস্থা অর্জনের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন।মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশপ্রেম, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য আমি আপনাদের প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি।
সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে জনসম্পৃক্তা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া পুলিশের একার পক্ষে অপরাধ দমন সম্ভব নয়। কমিউনিটি পুলিশিং এবং বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে আরও নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ পুলিশকে ‘জনবান্ধব ও মানবিক পুলিশ’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য আপনাদেরকে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট থাকতে হবে। পুলিশ সদস্যদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি বাংলাদেশ পুলিশে সব পদমর্যাদার সব সদস্যের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বছরে কম পক্ষে একবার বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী। এ ধরনের প্রশিক্ষণের ফলে পুলিশ সদস্যদের পেশাগত উৎর্কষ সাধিত হবে বলে আমার বিশ্বাস। '
পুলিশের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার আহ্বান জানিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, 'বাংলাদেশ পুলিশের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসমূহের সক্ষমতা বাড়িয়ে এগুলোকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার জন্য আমি আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশ্বমানের পর্যায়ে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যেন বিদেশি পুলিশ কর্মকর্তারাও বাংলাদেশে এসে প্রশিক্ষণ নেওয়ায় আগ্রহী হয়। '
রাষ্ট্রপতি বলেন, সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় পুলিশের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির আধুনিক কলা কৌশলে সমৃদ্ধ, প্রশিক্ষত ও দক্ষ জনবল তৈরি করতে হবে। পুলিশ সদস্যদের সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষতা অর্জন করে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। '
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত