অতিরিক্ত বইয়ের চাপে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে শিশুরা

  মোঃ হেদায়েতুল ইসলাম (উজ্জল)

প্রকাশ: ২৫ জানুয়ারি ২০২৩, ১২:২৫ |  আপডেট  : ১৬ মে ২০২৪, ০৪:৫২

এনসিবিটি কর্তৃক নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তক প্রতিটি শ্রেণির জন্য আলাদা করে সিলেবাস তৈরি করেছে। শ্রেণি অনুযায়ী এই বইগুলো পাঠ করলে এবং শিক্ষক পরিপূর্ণভাবে পাঠ্যবই পাঠদান করলে একজন ছাত্রের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু  বগুড়ার আদমদীঘির মত সারা বাংলাদেশে বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থীদের সরকার অনুমোদনহীন বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে অভিভাবকদের। বাণিজ্যিক ভাবনা থেকে শিক্ষার্থীদের কাঁধে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা এবং অভিভাবকদের কাধে বাড়তি খরচ তুলে দিচ্ছেন এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে নেওয়া হচ্ছে ভর্তি ফি অতিরিক্ত অর্থ। তাছাড়া শিক্ষকদের নিজেদের দায়িত্ব অবহেলার কারণে গাইড বই নির্ভর একটি প্রজন্ম তৈরি করছে এইসব বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনগুলো। এদিক থেকে অনেক সরকারী ও আধা সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কোন অংশে পিছিয়ে নেই। কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীদের দিক বিবেচনা করে সরকার ব্যাগের ওজন কমাতে পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা কমিয়ে দিলেও কোন কোন স্কুল কর্তৃপক্ষ অনেকটা জোর করে তাদের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা। তাছাড়া মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত অভিভাবক এইসব বাড়োতি বইয়ের খরচ যোগাতে হিমসিম খেতে হয় এর পাশাপাশি শিশুদের নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যা তাদের আরো উদ্বিগ্ন করে তুলছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিবিটি) নির্ধারিত বই ছাড়াও শিক্ষার্থীদের হাতে বাড়তি বইয়ের তালিকা দিয়েছেন বেসরকারি নানা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ফলে এ উপজেলার হাজার হাজার শিক্ষার্থী অতিরিক্ত বইয়ের চাপ ও বোঝাতে শারীরিকের পাশাপাশি মানসিক চাপ সহ্য করছে বলে অভিযোগ অভিভাবক মহলে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ও একটি পৌরসভার ছোট ছোট বসত-বাড়ি ভাড়া নিয়ে যেখানে সেখানে ব্যাঙ্গের ছাতার মতো গড়ে ওঠেছে অনুমোদনবিহীন নানা বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়। নীতিমালা না মেনেই সরকারি প্রাথমিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে প্রতিযোগিতা করে একই স্থানে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন কিছু কিছু অসাধু চক্র। উপজেলার বিভিন্ন কেজি স্কুল ও কয়েকটি বেসরকারি স্কুলে নানা সংখ্যার বই পড়ানো হচ্ছে। উপজেলার এসব কিন্ডারগার্টেন বিদ্যালয়ের বেবি শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীর স্কুল ব্যাগে বহন করছে ৫টি বই, ৩ টি গাইড, ৯টি খাতা, পেন্সিল বক্স, টিফিন বক্স ইত্যাদি। অপরদিকে সরকারী প্রাথমিক স্কুলে প্রথম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থী বহন করছে ৩টি বই, টিফিন বক্স, পেন্সিল বক্স ইত্যাদি। বর্তমানে একজন শিক্ষার্থী বা শিশু তার শরীরের ওজনের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশের বেশি বহন করছে। ফলে কোমলমতি শিশুরা শারীরিক চাপের পাশাপাশি মানসিক চাপও বয়ে বেড়াচ্ছে। সরকার প্রধানের নির্দেশনা ও আদালতের রায়ের পরও শিশুদের পাঠ্য বাইয়ের সংখ্যা কমছে না। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের একটি রায়ও আছে। সান্তাহার নাগরিক কমিটির সভাপতি ও সাবেক অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মোসলেম উদ্দীন বলেন, এটি বহুল আলোচিত একটি সমস্যা। শিশুদের কাঁধে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা কমাতে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীসহ বিশিষ্টজনরা আহবান জানিয়েছেন। আমিও এই বিষয়ে একমত। যে করেই হোক শিশুদের কাঁধ থেকে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা কমাতে হবে। আর একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাছাকাছি অসংখ্য কেজি স্কুল গড়ে উঠেছে। নিয়ম অনুযায়ী একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের দুরত্ব হবে ২ কিলোমিটার। সেই আইনও মানা হচ্ছে না। 

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফজলে রাব্বি বলেন, শিশুরা যখন ভারী স্কুল ব্যাগ ব্যবহার করে, তখন তাদের স্পাইনাল কর্ডে চাপ পড়ে। আর চাপ পড়ে কোমর ও শরীরের বিভিন্ন হাড়ের ক্যালসিয়াম ক্ষয় হয়। তা ছাড়া ঘাড়-ব্যাথা, মাথা- ব্যাথা ও চোখে ঝাপসা দেখতে পারে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তাহমিনা খাতুন বলেন, কিন্ডারগার্টেন স্কুলে আমরা শুধু সরকারি বই সরবরাহ করি। এখন এসব প্রতিষ্ঠান আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নির্ধারিত বই ছাড়া অতিরিক্ত কোন বই পড়ানো যাবে না। অবশ্যই শিশুদের কাঁধ থেকে অতিরিক্ত বইয়ের বোঝা কমানো উচিত।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত