অণুগল্প  ভালোবাসা

  অণুপা দেওয়ানজী

প্রকাশ: ৬ জুলাই ২০২১, ১১:৪৬ |  আপডেট  : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৪

বিয়ের পরে দুজনের সংসারে মহুয়া চা বানাতে গেলেই  তার নিজেরটা যেমনই হোক স্বামী রবীনের চায়ে চিনি মিশিয়ে  ছোট্ট একটা চুমুক  দিয়ে আগে বুঝে নিতো  চিনিটা ঠিকঠাক হয়েছে কিনা।
রবীন তা দেখে হাসতে হাসতে বলতো  চিনি না হয় নাই দিলে তোমার ওই  ঠোঁটের ছোঁয়াতেই চা যথেষ্ট মিষ্টি হয়ে যাবে।
মহুয়া এ কথায় লজ্জা পেলেও অভ্যেসটা কখনো ছাড়তে পারে নি।
দিনের পিঠে দিন গড়িয়ে একসময়ে সে সন্তানের মা হয়েছে। সংসারিক নানা অভিজ্ঞতাও তার বেড়েছে।সেই অভিজ্ঞতার আলোকে মহুয়া শুধু রবীনের কাপে নয় কার কাপে কতটুকু চিনি দিতে হয় তাও জানে। তারপরেও রবীনের চায়ের কাপে ঠোঁট ছুঁয়ে না দিলে তার মনে হত চা টা বুঝি ঠিকঠাক হল না।
এই নিয়ে দুই ছেলেমেয়েও মাকে খেপাতে ছাড়তো না।
দীর্ঘ পঁয়ত্রিশ  বছরের সংসার জীবনে মহুয়ার এই নিয়মের এতটুকু বদল হয় নি।
এই পঁয়ত্রিশ বছরের সংসার জীবনে একসময়ে তাদের ছেলেমেয়ে দুটি বড় হল। তারা বাবা মার গড়া ছোট্ট  খাঁচা ছেড়ে বিশাল পৃথিবীতে নিজেদের ডানা মেলে উড়াল দিয়ে চলেও গেলো 
 মহুয়া আর রবীনের আবার সেই আগের মতো দুজনের সংসার। 
রবীনের এখন অবসর জীবন।কিছুদিন আগে তার রক্তে চিনি ধরা পড়েছে।ডাক্তার তাই তার জন্যে চিনি সম্পূর্ণ বারণ করে দিয়েছে।
একথা জানার পরে মহুয়া রবীনের জন্যে চিনি ছাড়া চায়েই দীর্ঘ দিনের অভ্যেস মতো চুমুক দিতে গিয়ে থমকে গিয়ে নিজেকে সামলে নিলো।
প্রৌঢ় রবীন তা দেখে চায়ের কাপটি মহুয়ার ঠোঁটের সামনে নিয়ে বললো আজ নিশ্চয় তুমি চায়ের কাপে ঠোঁট ছুঁয়ে দাও নি তাই তো চাটা মিষ্টি হয় নি। একটি বার তোমার ঠোঁটটি  ছুঁয়ে দাও। 
প্রৌঢ়া মহুয়ার দুটি চোখ তার অজান্তেই জলে ভরে উঠলো।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত