অকুতোভয় শেখ হাসিনা
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:১৫ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:২০
একুশে আগষ্টের গ্রেনেড হামলার উপর নির্মাণ আজ একটি ভিডিও ক্লিপ দেখলাম। উপর্যপুরি গ্রেনেড হামলার মধ্যেও দেহরক্ষী কর্পোরেল মাহবুব মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বুলেট প্রুফ গাড়ির দরজার কাছে দণ্ডায়য়মান নেত্রীকে তাঁকে গাড়ির ভিতর ঢুকে পড়ার জন্য অনুরোধ করছেন। কিন্তু নেত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে রেখে গাড়ির ভেতর ঢুকতে রাজি না হওয়ায় মাহবুর ঠেলে নেত্রীকে গাড়ির ভেতর ঢুকিয়ে দেন। পরক্ষনেই ঘাতকদের একটি বুলেট মাহবুবের মাথা বিদ্ধ করে এবং তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। গাড়ি চালক দ্রুত জননেত্রীকে নিয়ে ঘটনাস্থল [২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ] ত্যাগ করেন। জননেত্রী মৃত্যু ভয় উপেক্ষা করে জিদ করে দাঁড়িয়ে থেকে সবকিছু পর্যবেক্ষন করতে চেয়েছিলেন। এই ভিডিও ক্লিপটি আমাকে তিন দশক আগের কথা স্মরণ করিয়ে দিল।
আমি তখন ব্রাসেলস স্টুডেন্টস ফেডারেশনের (বেলজিয়ামে) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। মাস্টারস শেষ করার পর ১৯৯০ সালে ডক্টরেট গবেষণার শেষ পর্যায়। আমার কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিল রেজাউল করিম পান্না [ব্রাসেলসের স্থায়ী বাসিন্দা শ্রদ্ধেয় নওয়াব ভাইয়ের জামাই]। জননেত্রী শেখ হাসিনার ইউরোপ সফরকে সামনে রেখে আমরা দু’জন ঠিক করলাম, তাঁকে আমরা ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেল-এ সম্ভার্ধনা দিব। সে লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ অফিসে চিঠি লেখলাম এবং তিনি সম্মতি দিলেন। দুতাবাস আমাদের প্রতিকুলে ছিল। বিশেষ করে একজন কর্মকর্তা অব. মেজর তাহের। কথাবার্তায় বোঝা যেত ফ্রিডম পার্টির। আওয়ামীগ সমর্থক সংখ্যায় কম হলেও আমাদের ভিতরে ঐক্য ছিল। যাহোক, তাঁর নিরাপত্তা প্রস্তুতি আমাদের ছিল। তখন গ্রীষ্মকাল [মাস ও তারিখটি মনে নেই, কারও জানা থাকলে জানাবেন]। ইউনিভার্সিটির ১১৮ নং কক্ষে সভা। ঠিক তার আগের দিন, একই কক্ষে এবং একই সময়ে প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদ তাঁর সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা আসম আব্দুর রবকে ওই কক্ষে সভা করতে পাঠালেন। আমাদের ছোট কম্যুউনিটি। জাতীয় পার্টির আব্দুস সোবহান চোধুরী (সভাপতি) ও মোতাহার হোসেন চোধুরী (সেক্রেটারি) আমাদের দাওয়াত দিলেন এবং আমরাও গেলাম। দেখলাম জার্মানি ও লুকসেম্বর থেকে কিছু লোক এসে সভায় যোগ দিয়ে রব ভাইকে প্রশ্ন বাণে জর্জরিত করছেন এবং তিনি বিব্রত বোধ করছিলেন। ওরা জাসদ থেকে ইউরোপে আগত পলিটিক্যাল এসাইলাম।
যাহোক, পরদিন একই স্থানে একই সময়ে মাননীয় জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা সম্ভার্ধনা দিলাম। ওডিয়েনস আমাদের একই। সভা শেষে আমরা ৪/৫ জন নেত্রীকে গাড়িতে তুলে দেয়ার জন্য নীচে নামলাম। ইউনিভার্সিটি বিল্ডিংয়ের পেছনে নির্জন সরু রাস্তায় নেত্রীকে বহনকারী কার। নেত্রী কারের দরজার কাছে, আমি তাঁর বাম পাশে এবং নেত্রীর পেছনে পান্না। তিনি আমাদের বিদায় জানিয়ে কারে উঠবেন, ঠিক ওই মুহূর্তে রাস্তার অপর দিকে দণ্ডায়মান ৭/৮ জনের মধ্য থেকে একটি ছেলে এসে আমার বাম পাশের ছেলেটিকে ধারালো চাকু দিয়ে আঘাত করলো এবং দৌড়ে রাস্তার ওপারে গেল। চাকুটি তার বাম হাতে বিঁধে ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে লাগলো। ’৭৫-এর ১৫ আগষ্টে নেত্রীরা দু’বোন ব্রাসেলসে ছিলেন।
পরদিন সেখানকার রাষ্টদূত ভয় পেয়ে ড্রাইভার তনু মিয়াকে দিয়ে তাঁদের জার্মানির বনে পাঠান। তনু মিয়া ব্রাসেলসে ছিল। তাঁর কাছ থেকেই শুনেছি তাঁদের নিয়ে যাওয়ার ঘটনা। যাহোক, ছুরি মারার পর সে মুহূর্তে নেত্রীর নিরাপত্তা নিয়ে আমি ভয় পেয়ে গেলাম। আমি তাঁকে বললাম, আপা তারাতারি কারে উঠুন। তিনি ভীষণ রেগে গেলেন এবং চিৎকার করে রাস্তার ওপারে দাঁড়ানো যুবকদের বললেন, তোরা আমাকে ভয় দেখাবি? আয় দেখি কত সাহোস, আমি দাঁড়িয়েই আছি, আয়, আয় না! উনি কারে ঢুকলেন না। দাঁড়িয়েই রইলেন। ওরা সবাই ভয় পেয়ে গেল। তারপর ধীরে ধীরে সবাই চলে গেল। এরপর আমরা নেত্রীকে বিদায় দিলাম। পরে জানলাম, এটা ছিল জাসদের ভিতরের কলহ। জননেত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যু ভয় নেই। বিজয়ের মাসে আমি তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করি।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত