'ব্ল্যাক ফাঙ্গাস' ৫ বিষয়ে সর্তক করলেন বিশেষজ্ঞরা

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২৬ মে ২০২১, ১৩:৪৫ |  আপডেট  : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৪:০৯

করোনার বোঝার ওপর শাকের আঁটি হয়ে দেখা দিয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ওরফে কালো ছত্রাক। ইতোমধ্যেই রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়েছেন দেশে এমন অন্তত দুজনের শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। অবশ্য পরীক্ষার আগে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাবে না বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)।

বারডেমে চিকিৎসাধীন দুই রোগী ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত কিনা প্রশ্নে আইইডিসিআর-এর পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষার পর নিশ্চিত বলতে পারবো। বারডেমে চিকিৎসাধীন দুই রোগীর নমুনা সংগ্রহ করা হবে।’

ইতোমধ্যে এ হাসপাতালে মারা যাওয়া একজন ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে মারা গেছেন বলে সন্দেহ করছেন চিকিৎসকরা। তার নমুনা পরীক্ষাও চলছে।

কালো ছত্রাকের সংক্রমণকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় মিউকরমাইকোসিস। এ ছত্রাক মাটি, পচে যাওয়া জৈব পদার্থ যেমন পচা ফলমূল, পাতা বা পশুর বিষ্ঠায় থাকে। এগুলোকে ল্যাবরেটরির কৃত্রিম মিডিয়াতে যখন বৃদ্ধি করা হয়, তখন রং হয় গাঢ় বাদামি বা কালো। এ কারণেই ডাকা হয় ব্ল্যাক ফাঙ্গাস নামে।

ছড়ানোর যত কারণ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস যে কেবল করোনার কারণেই হবে তা নয়। এটি  হাসপাতাল থেকেও ছড়াতে পারে বলে মন্তব্য করেন তারা। বলছেন, এটা সহজে মানুষকে সংক্রমণ করে না, তবে ঝুঁকিপূর্ণ রোগী হলে তখন এটা প্রাণঘাতী হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্টেরয়েডের অধিক ব্যবহার, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস বা ক্যান্সারের কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে কিংবা অপরিচ্ছন্ন মাস্ক, দূষিত অক্সিজেন মাস্ক সেটাপ এবং ব্যক্তিগত অপরিছন্নতার কারণেও ব্ল্যাক ফাঙ্গাস দেখা দিতে পারে।

তাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে এবং একান্ত প্রয়োজন না হলে স্টেরয়েড বা অক্সিজেন না দেওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের।

অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের সঙ্গে ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের ঘনিষ্টতা বেশি। আবার অঙ্গ প্রতিস্থাপন যারা করেছেন, বা করোনা থেকে সুস্থ হওয়া রোগীদের যারা স্টেরয়েড নিয়েছেন কিংবা অক্সিজেন নিতে হয়েছে, আইসিইউতে ছিলেন অথবা ভেন্টিলেটরে যেতে হয়েছিল, তারাও এ ছত্রাকের শিকার হতে পারেন।

পরিবেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস বা কালো ছত্রাক, এমনটা জানিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা বলেন, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, তাদেরকেই ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রমণ করে। এ ছাড়া এটি বিরল রোগ। এতে মৃত্যুঝুঁকি শতকরা ৫০ ভাগ।

ডা. নুসরাত সুলতানা আরও বলেন, ‘সাধারণত করোনা রোগী সুস্থ হওয়ার ১৫-১৮ দিনের মধ্যে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস আক্রমণ করছে। স্টেরয়েড এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কিন্তু রোগী বাঁচাতে স্টেরয়েড দেওয়া হচ্ছে। আবার অক্সিজেন দেওয়ার সময় লিক থাকলে বা আর্দ্রতার কারণেও মাস্কে ছত্রাক জন্মাতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘কাপড়ের মাস্ক নিয়মিতভাবে পরিষ্কার করা না হলেও এ রোগ হতে পারে। ময়লা সার্জিক্যাল মাস্ক থেকেও হতে পারে।’

ব্ল্যাক ফাঙ্গাস সংক্রমণের পেছনে বড় কারণ অপরিচ্ছন্নতা এবং না ধুয়ে টানা দুই-তিন সপ্তাহ একই মাস্ক পরা। এমনটা বলেছেন অল ইন্ডিয়া মেডিক্যাল সায়েন্সেস ইনস্টিটিউটস (এআইএমএস)-এর কয়েকজন চিকিৎসক।

এআইএমএস-এর স্নায়ুবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক, ডা. পি শরৎ চন্দ্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‌‘অনেকেই ২-৩ সপ্তাহের বেশি সময় না ধুয়ে একই মাস্ক ব্যবহার করেন। তা থেকেও ছড়াতে পারে এই সংক্রমণ। নোংরা পরিবেশে যেতে হলে জুতো পরতেই হবে। ফুল স্লিভ পোশাক পরতে হবে এবং বাগানে কাজ করার সময় গ্লাভস পরতে হবে।’

কাতারের ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলোজিস্ট ও ওয়েল কর্নেল মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ রুবায়েত হাসান বলেন, ‘হাসপাতালের ব্যবহার্য সামগ্রী যেমন-ব্যান্ডেজ, মাস্ক, আবার অপরিষ্কার এসি বা এয়ার ফিলট্রেশন সিস্টেম ও কনস্ট্রাকশনের প্রক্রিয়া থেকেও কালো ছত্রাক ছড়ায়।’

উল্লেখ্য, এরইমধ্যে করোনা সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় (২৪-২৫ মে) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪০ জন। যা গত দুই সপ্তাহে সর্বোচ্চ। বিশেষজ্ঞরা আগেই জানিয়েছিলেন, ঈদের ছুটির পর নতুন করে সংক্রমণ বাড়বে। এখন তৃতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কাও করেছেন তারা।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত