"লাইলাতুল ক্বদর "

  ওমর ফারুক 

প্রকাশ: ১০ মে ২০২১, ০৮:৫২ |  আপডেট  : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬:৩২

ইসলামে অস্পষ্টতা নেই।নেই বিভ্রান্তির সুযোগ।ইসলামের সব ঘটনার বর্ণনা রয়েছে,  কালের ধারাক্রম রয়েছে। রয়েছে দালিলিক প্রমাণ। ইসলামের কতগুলো মৌলিক বিষয় রয়েছে।সলাত, সাওম, হজ্জ্ব, যাকাত তার মধ্যে অন্যতম। ইসলামের প্রামাণ্য গ্রন্থ কুরআন মাজিদ।কুরআন নাযিলের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।রয়েছে কুরআন নাযিলের প্রেক্ষাপট। এক সাথে কুরআন নাযিল হয়নি।পুরো ২৩ বছর লেগেছে কুরআন অবতীর্ণ হতে।কুরআনে কোনো অস্পষ্টতা নেই, নেই অসঙ্গতি। 

প্রাক ইসলামি যুগের লোকেরা কুরআনের হুকুম আহকাম নাযিলের অপেক্ষায় থাকতেন। তখন লোকজন বলতে সাহাবায়ে কেরাম তটস্থ থাকতেন কখন কুরআন নাযিল হবে।তাদের সামনে, তাদের অবলম্বন করেই কুরআন নাযিল হয়েছে।কুরআন প্রথম নাযিল হয় ৬১০ খ্রিস্টাব্দে। রাসূল (স) এর বয়স তখন ৪০ বছর। সুরা আলাকের পাঁচটি আয়াত হেরা গুহায় নাযিল হয়।নবিজি মদিনায় হিজরত করেন ৬২২ কিংবা ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে। এ হিসেব অনুযায়ী তিনি নবুয়ত লাভের পর মক্কায় ছিলেন সর্বসাকুল্যে ১৩ বছর। এই ১৩ বছরের মধ্যে তিনি কি সারা বছর সাওম পালন করেছেন?  বিশুদ্ধ মতে পাওয়া যায় এ সময় নবি(স) এবং সাহাবায়ে কেরাম "আইয়ামুল বিজ" অর্থাৎ প্রত্যেক চন্দ্র মাসের ১৩,১৪,১৫ তারিখের রোজা রাখতেন।এছাড়া ১০ ই মহরমের রোজা রাখতেন।তখন পর্যন্ত এই রোজাগুলোই ফরজের সমতুল্য গুরুত্ব বহন করতো।

সাওম প্রাচীন কাল থেকেই ছিলো। সব নবি,রাসূল সাওম পালন করতেন।কিন্তু নবি(স) এর উপর কুরআন নাযিল হওয়ার পর দ্বিতীয় হিজরি অর্থাৎ ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে রোজা ফরজ করা হয়।আর তখন থেকেই ৩০ দিন সাওমের নিয়ম চলে আসছে।কুরআন মাজিদে সাওম ফরজের বিষয়ে বলা হয়েছে,  " হে ইমানদারগণ!  তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে,  যেরূপ ফরজ করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর,  যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পারো।"[সুরা বাকারা, আয়াত - ১৮৩ ] মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় নেয়ামত কুরআন। আর এই কুরআন নাযিল হয়েছে রমজান মাসে।

এতোকিছু বলার একটা উদ্দ্যেশ হলো সবচেয়ে মহিমান্বিত রজনী, বরকতময় রাত খুঁজে বের করা।কুরআনে বরকতময় রাত হিসেবে একমাত্র কুরআন নাযিলের মাসকেই বোঝানো হয়েছে। আর সে মাসটি রমজান, কোনোক্রমেই শাবান নয়।সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, " রমজান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কুরআন,  যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। "

হযরত মুহাম্মদ (স) এর পূর্বে হযরত আদম(স), হযরত ইব্রাহীম (আ), হযরত দাউদ (আ), হযরত মুসা(আ) এবং হযরত ঈশা(আ) রোজা পালন করতেন।যদিও তখন রোজার বিধিবিধান অনেক কঠোর ছিলো। সুরা বাকারা, সুরা ক্বদর, এবং সুরা আদ দুখানে স্পষ্ট করা হয়েছে বরকতময় রজনী অর্থাৎ " লাইলাতুলকদর " হলো রমজান মাসে।আর এই রজনীতে প্রত্যেক বস্তুর ভাগ্য স্থির করা হয়।অর্থাৎ কর্মফল নির্ণয় করা হয়।সুরা দুখানের ৩-৬ নম্বর আয়াতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, " আমি একে নাযিল করেছি এক বরকতময় রাতে, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী।এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়।আমার পক্ষ থেকে আদেশক্রমে,  আমিই প্রেরণকারী। আপনার পালনকর্তার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ, তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।

এছাড়া শবে ক্বদর নিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটা সুরা রয়েছে।নবিজি বসেছিলেন মসজিদে নববীতে।জিব্রাইলের আগমন ঘটলো। তিনি এসে জানালেন পূর্ববর্তী উম্মতের হায়াতের বিষয়ে,  এবাদতের দীর্ঘতার বিষয়ে। নবিজির মন ভারাক্রান্ত হলো। কারণ এই উম্মতের বয়স ৬০-৭০ বছর গড়ে।কিন্তু পূর্ববর্তী উম্মতের হায়াত ছিলো শত বছরের অধিক। তারা অনেক বেশি এবাদত করতে পারতো। জিব্রাইল সুসংবাদ দিলেন নবিজিকে।তিনি লাইলাতুলকদরের সুসংবাদ দিলেন।নাযিল হলো সুরা ক্বদর।নবিজির মুখে হাসির রেখা দেখা দিলো।
সুরা ক্বদরে বলা হয়েছে, " আমি একে নাযিল করেছি শবে ক্বদরে।শবে ক্বদর সমন্ধে আপনি কি জানেন?  শবে- ক্বদর হলো হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। এতে প্রত্যেক কাজের জন্যে ফেরেশতাগণ ও রূহ অবতীর্ণ হয় তাদের পালনকর্তার নির্দেশক্রমে। এটা নিরাপত্তা,  যা ফজরের উদয় পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

ক্বদরের রাতের গুরুত্ব সর্বাধিক। কারণ এটি কুরআন নাযিলের রাত।এবং এ রাতে মানুষের ভাগ্য নির্ণয় হয়।আগামী এক বছর কার কিরকম অবস্থা হবে, কে জন্ম নেবে, কার মৃত্যু হবে, কে ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে সবই স্থির হয় লাইলাতুলকদরের রাতে।হাদিসে এ রাত এবং এ রাতের গুরুত্ব ফজিলত নিয়ে নানা বর্ণনা এসেছে।মুসলিম,বুখারী,তিরমিজি, ইবনে মাজা শরীফের সহীহ হাদিস রয়েছে।তিরমিজি শরীফের একটি হাদিস থেকে জানা যায় হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা) নবিজিকে প্রশ্ন করেন," ইয়া রাসূলুল্লাহ আমি যদি লাইলাতুলকদর  পেয়ে যাই তাহলে আমার করণীয় কি? 
নবিজি উত্তরে বলেন," তাহলে তুমি এই দোয়া পড়বে,

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া,ফাফু আন্নি - হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, তুমি আমাকে ক্ষমা করো।[তিরমিজি ]

লাইলাতুলকদর কবে, কখন এনিয়ে হাদিসে বিভিন্ন মত আছে।তবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মত হলো বিশ রমজানের পর যেকোনো বিজোড় রজনীতে শবে ক্বদর হতে পারে।ইবনে উমর, ইবনে আব্বাস,হযরত আয়েশা,উবায় ইবনে কাব থেকে ভিন্ন ভিন্ন মত রয়েছে।আবার অনেকে সুনির্দিষ্টভাবে ২৭ রমজানকেই সাব্যস্ত করেছেন।কুরআন ছাড়াও অন্যসব আসমানী কিতাব রমজান মাসে নাযিল হয়েছে। 

কুরআনের ভাষ্যকার হলো তাফসির।মশহুর তাফসিরগুলো সাক্ষ্য দেয় সৌভাগ্যের রজনী হলো লাইলাতুলকদরের রজনী। তাফসিরে ইবনে কাছির,  তাফসিরে ইবনে আব্বাস, তাফসিরে রুহুল মা'আনি, তাফসিরে কুরতুবি, তাফসিরে যিলালিল কুরআন,  তাফসিরে জালালাইন,তাফসিরে মা'আরেফুল কোরআন প্রভৃতিতে লাইলাতুলকদরকেই মহিমান্বিত রজনী বলে মত দেয়া হয়েছে।কুরআনের দিকে ফিরে গেলে সঠিক সমাধান পাওয়া যাবে।কারণ কুরআন সুস্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট বর্তমান।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত