সান্তাহারে রেলওয়ের ১০৬ বিঘা জমি বেদখল ,গড়ে উঠেছে বস্তি ও বিভিন্ন স্থাপনা
আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৪০ | আপডেট : ৬ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৫৮
পশ্চিম বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী রেলওয়ে জংশন ষ্টেশন সান্তাহার। বৃটিশ সরকারের আমলে গড়ে ওঠা এই জংশন ষ্টেশনটি এক সময় হাজারো রেল কর্মচারীদের পদচারনায় মূখরিত থাকলেও পরবর্তিতে নানা কারনে এবং বিভিন্ন সরকারের অবহেলায় এটি অনেকটা তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে ষ্টেশনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন শাখা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই শাখা গুলোর জায়গা চলে গেছে অবৈধ দখলদারদের দখলে। সান্তাহার জংশন ষ্টেশনের কর্মচারীদের বসবাসের জন্য এই শহরে প্রায় আট থেকে নয়শত বাসা ছিল। বর্তমানে রেল জমির পাশাপশি দখলে চলে গেছে সে সকল বাসা। এ ছাড়া শহরের চার থেকে পাঁচটি জায়গায় গড়ে উঠেছে অবৈধ বস্তি। সান্তাহার রেলওয়ে ভূসম্পতি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে,বর্তমানে সান্তাহার শহরের পরিত্যাক্ত জমির পরিমান প্রায় ১০৬ বিঘা।
সান্তাহার জংসন ষ্টেশনকে কেন্দ্র করে সান্তাহার ইয়ার্ড কলোনি,লোকো কলোনী, সাহেবপাড়া, চাবাগান, ষ্টেশন কলোনী মহল্লায় প্রচুর রেলকর্মচারী বসবাস করতেন। এই কর্মচারীদের বসবাস করার জন্য সারি সারি একতলা বাসা নির্মাণ করা হয়। পাকিস্থান সরকারের আমলে সান্তাহার রেলওয়ের বেশিরভাগ কর্মচারী ছিলেন অবাঙালী (বিহারী)। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে বাঙালী অবাঙালীর এক ভয়াবহ সংঘর্ষে অবাঙালীরা উচ্ছেদ হলে বাসাগুলো জনমানব শুন্য হয়ে পড়ে। পরে এ সব বাসার টিন, ইট থেকে শুরু করে সব কিছু লুট হয়ে যায়। এক পর্যায়ে জায়গাগুলো পতিত জমিতে পরিনত হয়। এরপরও সান্তাহার শহরের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে আটশতাধিক বাসা। রেল কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা এবং অবহেলার কারনে এই বিশাল এলাকা অবৈধ দখল শুরু হয়। বর্তমানে সেখানে শত শত ঘর নির্মাণ করে বিভিন্ন ব্যক্তি অবৈধভাবে বসবাস করছেন। আবার কেউ কেউ রেলওয়ে জায়গা দখল করে বাসা নির্মাণ করে সেগুলো চড়া দামে বিক্রি করছেন।
সরেজমিন সান্তাহার শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পূর্বের দখল করা জায়গা ছাড়াও বর্তমানে নতুন করে রেলভূমি দখল করে পাকা ও আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। এ সকল বাসা নির্মাণে পৌর কর্তৃপক্ষের কোন অনুমোদন না লাগায় গড়ে উঠছে একের পর এক বাসা। সান্তাহার জংশন ষ্টেশনের দক্ষিন পাশে ছিল বিশাল আকারের ট্রান্সশীপমেন্ট ইয়ার্ড। বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলে সান্তাহার ইয়ার্ডে ট্রান্সসিপমেন্ট কাজের জন্য বিশাল এই এলাকা ব্যবহত হত। হাজারো রেলওয়ে কর্মচারীদের কর্মব্যস্তায় এই এলাকা মুখরিত থাকতো। সান্তাহার ৭ নং ইয়ার্ডে বিশাল এলাকাজুড়ে নানা পণ্যে এই এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গোডাউনে চলে যেত। রেলওয়ের আধুনিকায়ন হওয়ায় এই এলাকার অধিকাংশ কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার বর্তমানে এই এলাকা বিরান ভুমিতে পরিনত হয়েছে। এই এলাকার প্রায় ৩০ বিঘা রেলওয়ের জমি বর্তমানে পতিত অবস্থায় পড়ে আছে।
সান্তাহার সাহেব পাড়া খ্যাত এক সময়ের অভিযাত এলাকা বর্তমানে বস্তি এলাকায় পরিনত হয়ে অনেক পতিত জমি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। এখানেও কয়েকশত রেলওয়ে বাসা বেদখলে চলে গেছে। এক অনুসন্ধানে জানা গেছে, এখানকার রেলওয়ের ১৮৫ কোয়াটারের ৭৮৭ ইউনিটের ৬৪৭টি ইউনিটই বহিরাগতদের দখলে রয়েছে। সম্প্রতি বগুড়ার সান্তাহার রেলওয়ের জংসনে কোয়াটারে দুনীর্তি দমন কমিশনের (দুদক) এনফোসমেন্ট ইউনিটের অভিযানেও মিলেছে এমন অভিযোগের সত্যতা।
সান্তাহারের লোকো কলোনী এলাকাজুড়ে পততি অবস্থায় পড়ে আছে প্রায় ৩০/৪০ বিঘা জমি। এই এলাকার রেললাইনের কোল ঘেসে গড়ে উঠেছে বিশাল বস্তি। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভাসমান মানুষ এসব বস্তিতে বসবাস করেন। এই এলাকার বাসিন্দা রহিম উদ্দীন বলেন. রেল কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলে এইসব জমি, বাসা, পরিত্যক্ত স্থাপনা ইজারা দিতে পারতো। তাহলে সরকারের রাজস্ব আসতো। বছরের পর বছর এসব জমি বেদখলে চলে গেছে। সান্তাহার নাগরিক কমিটির অন্যতম সদস্য সাবেক অধ্যাপক শুধু মাত্র সঠিক পরিকল্পনার অভাবে রেলভ’মির এই বেহাল দশা। ইজারা প্রথার মাধ্যেমে রেল ভ’মি বরাদ্দ দেওয়া হলে রেলওয়ের কোষাগারে বিপুল পরিমান রাজস্ব আসা সম্ভব ।
সান্তাহার রেলয়ের পরিতাক্ত ১৯ একর জমিতে পুকুর খনন করে অবৈধভাবে চাষাবাদ করতেন কিছু ব্যাক্তি। সম্প্রতি রেল কর্তৃপক্ষের এক ভ্রা¤্রামাণ আদালত অভিযানে এসব পুকুর দখলমুক্ত হয়। এ বিষয়ে সান্তাহার রেলওয়ে ভূসম্পত্তি বিভাগের কানুনগো মনোয়ার হোসেন বলেন,সান্তাহার রেলওয়ের যে সব জমি পরিতাক্ত অবস্থায় অবৈধ দখলদাদের কাছে চলে গেছে, তা উদ্ধার কাজ শুরু হয়েছে। অবিলম্বে সান্তাহার শহরের সকল রেল ভূমি অবৈধ দখলদারদের দখল থেকে উদ্ধার করা হবে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত