সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩:৫১ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৯
দেশকে এগিয়ে নিতে সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করবে আশা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশের এই উন্নয়নের অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে তার জন্য সকলে প্রচেষ্টা চালাবেন—এটাই আমি আশা করি।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৪২তম জাতীয় সমাবেশে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গাজীপুরের আনসার ভিডিপি একাডেমিতে অনুষ্ঠিত এ সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে আনসার ও ভিডিপির ১৬২ সদস্যকে পদক দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এই পদক তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শান্তির দেশ। আমরা শান্তিতে বিশ্বাস করি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ থাকলেই দেশের উন্নয়ন হয়। আর দেশের উন্নয়ন মানে প্রতিটি পরিবারের উন্নয়ন। প্রতিটি পরিবার সচ্ছ্বলভাবে জীবনযাপন করুক, সুন্দরভাবে বাঁচুক- সেটাই আমরা চাই। সেজন্য একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রাখা একান্তভাবে প্রয়োজন।দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করতে বলেন তিনি।
সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা এবং কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কেমন হবে, ৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো, সে প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করে দিয়েছি। তারই ভিত্তিতে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে আমরা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। আমরা এখানেই থেমে থাকিনি, আমাদের শতবর্ষের প্রোগ্রামও আমরা নিয়েছি—ডেল্টা প্ল্যান ২১০০।
তিনি বলেন, এই বদ্বীপ অঞ্চল জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে যেন রক্ষা পায় এবং এদেশের মানুষ যেন উন্নত জীবন পায় সেদিকে লক্ষ্য রেখে, সেই পরিকল্পনাটাও আমি দিয়ে গেলাম। ২১০০ সাল পর্যন্ত পরিকল্পনা দিয়ে যাচ্ছি যাতে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কখনও কেউ ব্যাহত করতে না পারে। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, এগিয়ে যাবো। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে, আমরা প্রবৃদ্ধি বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। অর্থনীতি যথেষ্ট শক্তিশালী হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে আমি মনে করি, আপনাদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। সকলে সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন সেটাই আমরা আশা করি।
আনসার ও ভিডিপির কার্যক্রম তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস। যখন তারা বাস, গাড়ি, রিকশা, ভ্যান এমনকি রেলগাড়ি ও রেললাইনে যখন আগুন দিচ্ছিলো। আগুন দিয়ে জীবন্ত মানুষদের পুড়িয়ে মারছিলো। তখন রেললাইনের নিরাপত্তার দায়িত্ব আনসার-ভিডিপিকে দেওয়া হয়েছিলো। তারা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এই ধরণের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তাদের অনেককেই জীবনও দিতে হয়েছে।
সন্ত্রাস ও উগ্রবাদ নির্মূলে আনসার সদস্যদের ভূমিকার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই। এ লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করছি। এক্ষেত্রেও আমাদের আনসার ভিডিপি বাহিনী সব সময় সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, মৌলবাদ নির্মূলে বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন দায়িত্ব আনসার ও ভিডিপি যোগ্যতার সঙ্গে পালন করে যাচ্ছে। তাই সদস্য সংখ্যাও যৌক্তিকভাবে বৃদ্ধি করে দিচ্ছি। এই বাহিনীর কর্মরতদের পদোন্নতির বিষয়ে যে সমস্যা ছিলো তার সমাধান করে দিয়েছি। আপনাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে আমার বিশেষ নজর রয়েছে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরে আনসার ও ভিডিপির বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৯৯৮ সালে আনসার বাহিনীকে প্রথম সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা প্রদান করেছিলাম।
বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট গঠনের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। কাজ করতে পারেন না, বয়োবৃদ্ধ হয়ে যান। নানা ধরণের অসুবিধায় পড়েন। তখন এই ট্রাস্ট থেকে সহযোগিতা করা যায়, তার জন্য এটা করা হবে।আনসার ও ভিডিপি ব্যাংক তৈরি করে দিয়েছি। করোনাকালে এই ব্যাংকে ৫০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছিলাম, যাতে করে এই বাহিনীর সদস্যরা ঋণ নিতে পারেন এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারেন। আমি খুবই আনন্দিত যে, এই ব্যাংক থেকে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আনসার ও ভিডিপি ব্যাংকের কোনও ভবন নেই। আমাদের বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো যাতে একই জায়গায় থাকে সেই ব্যবস্থাও আমরা নিচ্ছি।যারা যে কাজের দায়িত্ব পালন করছেন, তারা যেন সেই কাজ আন্তরিকতার সঙ্গে যথাযথভাবে করতে পারেন—সেই দিকটা, সেই সুযোগ-সুবিধাটা সৃষ্টি করা আমাদের সরকারের দায়িত্ব। আমরা সেই বিষয়ে নজর দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আনসার ও ভিডিপির বিরাট অবদান রয়েছে। তারা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত। এই সংগঠনটি প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ নিজ গ্রামে যায় এবং সেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রাখে।আমাদের বাঙালির ইতিহাসে আনসার বাহিনীর অবদান সর্বক্ষেত্রে। যেমন ভাষা আন্দোলনে অবদান রয়েছে। ঠিক তেমনি মহান মুক্তিযুদ্ধেও অবদান রয়েছে। এই বাহিনীর ৬৭০ জন অকুতোভয় বীর সৈনিক জীবন দিয়ে গেছেন। ১৯৭১ সালে গঠিত মুজিবনগর সরকারকে গার্ড অব অনার দেওয়ার ক্ষেত্রে আনসার বাহিনী মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলো।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান শামীম। বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত