শুধু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে নজরুলসংগীতের চর্চা ব্যাহত হচ্ছে
 অনলাইন ডেস্ক
  অনলাইন ডেস্ক
                                    
                                    প্রকাশ: ২৫ মে ২০২১, ১১:১৬ | আপডেট : ৩১ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩৮
 
                                        
                                    বর্তমান প্রজন্মে প্রতিষ্ঠিত এমন অনেক আধুনিক গানের শিল্পী আছেন, যাঁরা একটা সময় নজরুলসংগীতের চর্চা করতেন। এখনো বিশেষ দিবসে, উৎসবে তাঁরা নজরুলসংগীত প্রকাশ করেন। টেলিভিশন চ্যানেলগুলোও তাদের অনুষ্ঠানে বৈচিত্র্য আনতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন অথবা প্রয়াণের দিন আধুনিক গানের শিল্পীদের নিয়ে নজরুলসংগীতের অনুষ্ঠান তৈরি করে। এটাকে দর্শকদের চমক দেওয়ার চেষ্টা বলে মত দিয়েছেন নজরুলসংগীতের বরেণ্য শিল্পী সুজিত মুস্তাফা।
নজরুলসংগীতের বরেণ্য শিল্পীদের প্রায় সবাই মনে করেন, সঠিক ও যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বাংলাদেশে নজরুলসংগীতের চর্চা ব্যাহত হয়েছে। তরুণেরা আগ্রহী হলেও শুধু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে নজরুলসংগীতের চর্চা ব্যাহত হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, বরেণ্য শিল্পীরাও হতাশ, নজরুলসংগীত চর্চার ব্যাপারে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অসহযোগিতায়। নজরুলসংগীত নিয়ে ভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান প্রচারের ক্ষেত্রে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো খুব একটা আগ্রহী থাকে না বলে মত দিয়েছেন বরেণ্য শিল্পীরা।
নজরুলসংগীতের বরেণ্য শিল্পী ফাতেমাতুজজোহরা নজরুলসংগীত নিয়ে একুশে টেলিভিশনে ‘নীল পায়রার গান’ নামে একটি অনুষ্ঠান করতেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নজরুলের দুই হাজার গান তরুণ শিল্পীদের দিয়ে গাওয়াবেন। কিন্তু সাড়ে তিন বছরে সাড়ে ৫০০ গান প্রচারের পর অনুষ্ঠানটি বন্ধ হয়েছে। শিল্পীর ভাষায়, বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও অনুষ্ঠানটি আর চালানো সম্ভব হয়নি, পাননি কোনো স্পনসর।
ফাতেমাতুজজোহরা বললেন, ‘একান্তই নিজেদের তাগিদ থেকে এবং অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে তরুণেরা নজরুলসংগীতের চর্চা করছেন। তাঁদের অনেকের মধ্যে নজরুলের যে বিদ্রোহী চেতনা, তা-ও রয়েছে। নজরুলের চেতনাকে মনের মধ্যে ধারণ করে তাঁরা গাইছেন। তাঁদের আরও বেশি করে সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে।’
অনেক তরুণ শিল্পী ভেতরে-ভেতরে নজরুলসংগীতের চর্চা করে চলছেন। তবে সংখ্যাটা কম। বিকাশের সুযোগ করে না দিলে তাঁরা এগিয়ে যেতে পারবেন না বলে মনে করেন ফাতেমাতুজজোহরা। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের অনেক কিছু ছেড়ে দিয়ে নজরুলসংগীতে নিজেকে সঁপে দিয়েছি। এখনকার তরুণেরা তো সে রকম ধৈর্য ধারণ করতে পারবে না।’ তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রীয়ভাবেও সুযোগ তৈরি করে তরুণ শিল্পীদের পৃষ্ঠপোষকতা না করলে একটা সময় তাঁরা আরও দূরে সরে যাবে। তাঁর চেতনাকে ধারণ করে তেমন কিছু করা হচ্ছে না বলে মনে করেন সংগীতশিল্পী সুজিত মুস্তাফা।
তিনি মনে করেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে যথাযথভাবে স্মরণ করা হচ্ছে না। শুধু জন্মদিন ও মৃত্যুদিবসে তাঁকে নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সবাই। করপোরেট সোসাইটিও নজরুলের ব্যাপারে আগ্রহ দেখায় না। নজরুল নিয়ে অনুষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যায় না। শুরুর দিকে তরুণ শিল্পীরা নজরুলসংগীতে আগ্রহী হলেও পরবর্তী সময়ে আধুনিকে ব্যস্ত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটিকে এভাবেই ব্যাখ্যা করলেন সুজিত মুস্তাফা, ‘গান তো সবাই শেখে আসলে—গায়ক হতে, খ্যাতি পেতে, অর্থ উপার্জন করতে। গানের আরেকটা শিক্ষার উদ্দেশ্য, নিতান্তই ভালোবাসা। কিন্তু শুধু ভালোবাসায় আবার পেটও ভরে না। অতএব একটা সময় যারা যত প্রতিভা নিয়ে আসুক না কেন, তারা শেষ পর্যন্ত দেখতে পায়, নজরুলের গানের সেই চাহিদা নেই। চাহিদা অনেক কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। তার মধ্যে নজরুলসংগীতকে এখনো মান্ধাতা আমলে উপস্থাপনের ব্যাপারটা।’
রাষ্ট্রের উদ্যোগে নজরুল ইনস্টিটিউট চলছে, কিন্তু সেখানে সুন্দর পরিকল্পনা এবং সম্মিলিত ভাবনার প্রকাশ থাকা উচিত বলে মনে করছেন সুজিত মুস্তাফা। নজরুলসংগীতশিল্পী ও শিক্ষক ফেরদৌস আরা বলেন, ‘আমরা যারা শিক্ষক, বুঝতে পারি, তরুণদের মধ্যে নজরুল কতটা উদ্দীপনা জাগিয়ে রেখেছেন। কিন্তু এটা আরও বেশি দরকার। সারা বিশ্বের যাঁরাই বাংলাকে চর্চা করে থাকেন, তাঁরা নজরুলের আদর্শ ও চেতনা নিয়ে ভাবেন।’
নজরুলের গান নিয়ে তরুণ শিল্পীদের অনেকে নিরীক্ষাও করছেন বলে মত দিয়েছেন জ্যেষ্ঠ শিল্পীদের কেউ কেউ। তাঁদের মতে, এখনকার তরুণেরা অনেক অভিজ্ঞ। গানের ক্ষেত্রে তাঁরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। ১০-১৫ বছর আগেও এমনটা ছিল না। তবে যেভাবে নজরুলের গান নিয়ে তরুণেরা ভাবছেন, সেভাবে এসব কাজ লালন করার মতো মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে। প্রতিভার মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। সঠিক পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে নজরুলের চর্চাটা অব্যাহত রাখতে হবে।
নজরুলসংগীত শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, ‘নজরুলের বিভিন্ন পর্যায়ের ভিন্ন ভিন্ন ধারার গান আছে। এসব গান অ্যালবামে গাওয়ার জন্য প্রচুর অনুশীলন দরকার। এ জন্য অ্যালবাম বেশি বের না করে সঠিকভাবে গাওয়ার চেষ্টা করি। অন্যদেরও সেই পরামর্শ দিই।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত
 
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
             
    
            