তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলার অবনতি: উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১০ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:১১

প্রতীকী ছবি

 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। রাজনৈতিক কর্মসূচি, পাল্টাপাল্টি মিছিল, সহিংস সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড—সব মিলিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে নির্বাচনি মাঠ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে, সাধারণ মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়েই শঙ্কিত।

সংশ্লিষ্টদের মতে, তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনি রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠা বাংলাদেশে নতুন নয়। তবে এবারের পরিস্থিতি আগের যেকোনও সময়ের তুলনায় ভিন্ন ও উদ্বেগজনক। তফসিল ঘোষণার পরদিনই গত ১২ ডিসেম্বর রাজধানীতে ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে। দেশে চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হলেও ১৮ ডিসেম্বর রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সারাদেশে বিক্ষোভ ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধরা দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালায়। হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের হাত থেকে রেহাই পায়নি গণমাধ্যম এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানও।

এসব ঘটনার বাইরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে নৃশংস সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় লক্ষ্মীপুরে বসত ঘরের বাইরে থেকে তালা দিয়ে আগুন লাগিয়ে একটি শিশুকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। একই সময়ে ময়মনসিংহে এক যুবককে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এসব ঘটনায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরের ঘটনাটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কিনা—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, একাধিক দিক বিবেচনায় নিয়ে তদন্ত চলছে।

ময়মনসিংহের ভালুকায় ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আরও ভয়াবহ। ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগ তুলে দিপু চন্দ্র দাস (২৭) নামের এক যুবককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে মরদেহে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে।

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. মো. তৌহিদুল হক বলেন, ‘হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে অবনতি দেখা যাচ্ছে, তা মানুষের মধ্যে নানা প্রশ্ন তৈরি করছে। রাজনৈতিক মতভেদ থাকবে, ভিন্ন আদর্শের চর্চা থাকবে—কিন্তু সেগুলোকে পুঁজি করে সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ড ঘটলে নির্বাচনকালীন স্থিতিশীলতা গুরুতর হুমকির মুখে পড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। তবে সে জন্য আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি শিথিলতা দেখায়, অপরাধীরা আরও সক্রিয় হয়ে উঠবে।’

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়নের (র‌্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী জানান, সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারিসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বর্তমানে প্রায় দুই শতাধিক টহল দল মাঠে কাজ করছে। সহিংসতা ও নাশকতার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ময়মনসিংহের ঘটনায় ইতোমধ্যে সাতজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে।

সর্বশেষ, গত ১৫ ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলারের সঙ্গেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করছেন আইজিপি। ওই বৈঠকে নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা প্রস্তুতি এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়েও পুলিশের প্রস্তুতির কথা তুলে ধরা হয়।

তফসিল ঘোষণার পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাসউদ বলেন, ‘রবিবার (২১ ডিসেম্বর) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট প্রধানদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের একটা বৈঠক রয়েছে। ইতোমধ্যে যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর যেন আর পুনরাবৃত্তি না হয়- সেটি বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে বৈঠকে আলোচনা করবো। আমাদের লক্ষ্য হলো এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে ভোট দিতে পারবেন। নির্ধারিত সময়েই ভোট অনুষ্ঠিত হবে—এই বার্তাটি মানুষের মধ্যে আস্থা সৃষ্টি করবে। সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইন অনুযায়ী ও যথাযথ দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তাদের ভূমিকা পালন করবে।’

সাম্প্রতিক সহিংসতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে প্রয়োজনীয় তদারকি ও সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হবে, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে তারা প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেবে।’

নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাসউদ আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আরও সচেষ্ট ও সজাগ থাকবে। সাম্প্রতিক সময়ে যেভাবে হঠাৎ করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা বা বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে, ভবিষ্যতে যেন এমন কোনও কর্মকাণ্ড না ঘটে, সে বিষয়ে তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।’

কা/আ 

সৌজন্যে - বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত