কৃষি কর্মকর্তাকে মারধরের অভিযোগ ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে মামলা
শেরপুর প্রতিনিধিঃ
প্রকাশ: ৬ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৩ | আপডেট : ৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৮:৫৪
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার রুমের সিসিটিভির ফুটেজ
শেরপুরে কৃষি প্রণোদনার তালিকায় নিজের পছন্দের লোকদের নাম না থাকায় নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাহাত হাসান কাইয়ুম ও তার সহযোগী ফজলুর বিরুদ্ধে। বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা কৃষি অফিসে ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় রাতেই নকলা থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে। মামলায় রাহাত ও সহযোগী ফজলুকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, অপরাধীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে, রাতেই কৃষি কর্মকর্তার প্রত্যাহার দাবি করে নকলা শহরে মিছিল করে রাহাতের অনুসারীরা। অপরদিকে, ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (কৃষি) এসোসিয়েশন।
অভিযুক্ত রাহাত নকলা উপজেলার ধুকুরিয়া গ্রামের সুরুজ মোওলার ছেলে এবং ফজলু একই গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, বুধবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে রাহাত ও ফজলু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে জানতে চান, কৃষি কর্মকর্তা কেন এখনো বদলি হচ্ছেন না, কারা কৃষি প্রণোদনা পেয়েছেন এবং নেতাদের ভাগ কতো। এরপর তারা ছাত্রদলের ভাগ দিতে হবে বলে দাবি করেন। এসময় কৃষি কর্মকর্তা জানান, সরকারি প্রণোদনা প্রকৃত কৃষকদের জন্য। রাজনৈতিকভাবে কারো ভাগ দেওয়ার সুযোগ নেই। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। কৃষি কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক বিষয়টি স্থানীয় বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলমকে জানালে রাহাত আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং সহযোগী ফজলুকে নিয়ে অফিসের ভেতরেই কর্মকর্তাকে মারধর শুরু করেন।
ঘটনার সিসি টিভির ফুটেজে দেখা যায়, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার মোরসালিন মেহেদীর কক্ষে প্রবেশ করে আলোচনা করছেন রাহাত। এসময় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাকে থাপ্পড় মারেন রাহাত। পরে আবার ওই কর্মকর্তাকে হামলা করলে বাইরে থাকা লোকজন তাদের থামানোর চেষ্টা করেন।
কৃষি কর্মকর্তা শাহারিয়ার মুরসালিন বলেন, “বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে রাহাত ও ফজলু আমার অফিসে এসে জানতে চান, আমি এখনো কেন বদলি হচ্ছি না, কারা কৃষি প্রণোদনা পেয়েছে এবং নেতাদের ভাগ কত। এরপর তারা বলেন, ছাত্রদলের ভাগ তাদের দিতে হবে। আমি জানাই, সরকারি প্রণোদনা প্রকৃত কৃষকদের জন্য, রাজনৈতিকভাবে কারো ভাগ দেওয়ার সুযোগ নেই। এতেই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। আমি বিষয়টি স্থানীয় বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলমকে জানাই। পরে রাহাত আরো ক্ষিপ্ত হয়ে হন এবং সহকারী ফজলুকে নিয়ে আমাকে অফিসের ভেতরেই মারধর করেন। পরে আমি চিৎকার করলে তারা দ্রুত পালিয়ে যান।”
শেরপুর জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাইম হাসান উজ্জ্বল বলেন, “ঘটনাটি শুরুতে জানতাম না। পরে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বিস্তারিত জেনেছি। একজন কর্মকর্তার গায়ে হাত তোলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে রাহাত হাসান কাইয়ুমের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাসেম সিদ্দিকী বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। ঘটনার সত্যতা যাচাই করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রদল একটি সুসংগঠিত দল। এখানে কোন অপরাধীর ঠাঁই নেই। কেউ অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
নকলা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, “রাহাত উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব। কৃষি কর্মকর্তা আমাকে ফোনে বিষয়টি জানান। আমি রাহাতের জেঠাত ভাই যুবদল নেতা লুটাসকে বিষয়টি বললে, তিনি রাহাতকে ফোনে ধমক দেন। তারপরও তিনি এমন কাণ্ড ঘটিয়েছেন।”
অভিযুক্ত উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাহাত হাসান কাইয়ুমের ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
শেরপুরের জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. মিজানুর রহমান ভূঁঞা বলেন, “ইতোমধ্যে মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।”
কা/আ
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত