একটা ঈদ বাড়িতে না করলে কী হয়, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
প্রকাশ: ৯ মে ২০২১, ১৩:০২ | আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭:৫৯
জনসাধারণকে উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একটা ঈদ বাড়িতে না করলে কী হয়? নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ঈদ করুন। রোববার (৯ মে) পূর্বাচল প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের প্লট বুঝিয়ে দেওয়ার অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের নতুন আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট (ধরন) এসেছে, যেটা আরও বেশি মারাত্মক। এতে যারা সংক্রমিত হয়, তারা আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মারা যান। যে কারণে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা পার্শ্ববর্তী দেশে এ ভাইরাস আক্রমণ করেছে। আর প্রতিবেশী আক্রান্ত হলে তা থেকে দূরে থাকা কঠিন হয়ে যায়।
তিনি বলেন, নিজ নিজ অবস্থানে থেকে ঈদ করুন। কেননা বাড়ি যাওয়ার পথে কে ভাইরাস বহন করছেন, কে করছেন না, তা আমরা কেউ জানি না। কাজেই বাড়ি যাওয়ার পথে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই বলব, বাড়ি যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাড়ি যাওয়ার পথে আপনি ভাইরাস বহন করে নিয়ে যেতে পারেন আপনার পরিবারের কাছে। যাতে করে আপনার মা-বাবা, ভাই-বোনসহ পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হতে পারে। তাই আগে থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে সুরক্ষিত থাকতে হবে। নিজে সুরক্ষিত থেকে অন্যদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে। মাস্ক পরতে হবে।
অনেক সম্পদ থাকার পরও আরও চাই স্বভাবের মানুষগুলোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মরলে তো সবাইকে সেই কবরে যেতে হবে। মাত্র সাড়ে তিন হাত জায়গায়। এই ধন-সম্পদ কেউ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না।
যাদের অনেক সম্পদ আছে তাদের আরও লাগবে কেন? প্রশ্ন করে শেখ হাসিনা বলেন, যাদের এত বিশাল বিশাল অট্টালিকা, বাড়িঘর ফ্ল্যাট সবই আছে তাদের আরও লাগবে কেন? মরলে তো সবাইকে সেই কবরেই যেতে হবে। মাত্র তিন হাত, সাড়ে তিন হাত জায়গায়।
তিনি বলেন, এই ধন সম্পদ কেউ সঙ্গে নিয়ে যেতে পারবে না। এই কথাটা মানুষ কেন ভুলে যায় আমি জানি না।
শেখ হাসিনা বলেন, যখন পূর্বাচল শুরু হলো তখন আমি দেখেছি… এমনকি গুলশান, বারিধারায় বিশাল বিশাল অট্টালিকাও যাদের তাদেরও পূর্বাচলে একটা প্লট না থাকলে নাকি ইজ্জতই থাকে না। এই রকমও কিছু কিছু মানুষের মানসিকতা আমি দেখেছি।
পূর্বাচলে যারা প্লট বরাদ্দ পেয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে সরকার প্রধান বলেন, যাদের সত্যিকার প্রাপ্য, আপনারা কিন্তু বঞ্চিত ছিলেন। কাজেই সব সময় আমাদের একটা প্রচেষ্টা ছিল যে কীভাবে আপনাদের বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেব। আপনারা জমি দিয়েছেন অথচ আপনারা প্লট পাবেন না এটা হতে পারে না।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে পূর্বাচলে জাতির পিতার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটা প্রকল্পের অনুমোদন চেয়ে প্রস্তাব এসেছিল। যার অনুমোদন তিনি দেননি বলে অনুষ্ঠানে জানান।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, সেই ফাইলে আমি লিখে দিয়েছিলাম, এখানকার যারা আদিবাসী তারা প্লট পাবে তারপর আমি প্রকল্পের অনুমোদন দেব। তার আগে কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দেব না এবং কীভাবে প্লট বের করবে সেটা যেন মন্ত্রণালয় বা রাজউক যেন খুঁজে বের করে। সেই নির্দেশনাটাই আমি দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি এইটুকু চাই, বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। যেইটুকু পারি, যেভাবে পারি একটা মানুষকে একটা ঘর, একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই সেটা আমরা করে দেব এবং প্রত্যেকটা ঘরেই বিদ্যুৎ থাকবে, আলো জ্বলবে। প্রতিটি পরিবারেই শিক্ষিত মানুষ থাকবে, লেখাপড়া শিখবে।
যুব সমাজকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এবং সেই লেখাপড়া শুধু কেতাবি পড়া না। সাথে সাথে ভোকেশনার ট্রেনিং নিতে হবে, কারিগরি শিক্ষা নিতে হবে যেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়।
সরকার প্রধান বলেন, শুধু বিএ, এমএ পাশ করলে হবে না। চাকরির পেছনে ঘুরলে হবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। নিজেরা যেন চাকরি দিতে পারে সেভাবে নিজেদের কাজ করতে হবে। আমরা সেইভাবে এদেশের যুব সমাজকে গড়ে তুলতে চাই।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমদ অধিবাসী ও ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে প্লটের বরাদ্দপত্র তুলে দেন। মোট ১ হাজার ৪৪০ জন মূল অধিবাসী এবং সাধারণ ক্ষতিগ্রস্তকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়।
ইতোমধ্যে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের মূল অধিবাসী ও সাধারণ ক্ষতিগ্রস্তদের ৬ হাজার ৪৪২টি প্লটের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট মূল অধিবাসী ও সাধারণ ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ১ হাজার ৪৪০টি প্লটের বরাদ্দপত্র প্রদান করা হয়।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র প্রান্তে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমদ, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মোশাররফ হোসেন, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লাহ খন্দকার, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) চেয়ারম্যান এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী প্রমুখ।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত