অবশেষে আগামী থেকে শুরু হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী কুন্ডু বাড়ির মেলা

  এসআর শফিক স্বপন, মাদারীপুর প্রতিনিধি:

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৫:৩৮ |  আপডেট  : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ১৮:৩৪

অবশেষে সকল জল্পনা-জল্পনা-কল্পনা শেষে দুই দিনের জন্য অনুমতি পেয়েছে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ভুরঘাটা কুন্ডুবাড়ি মেলা। জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২১ ও ২২ অক্টোবর এ মেলা অনুষ্ঠিত হবে। মাদারীপুর
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবছর পাঁচ দিনব্যাপী কুন্ডুবাড়ি মেলা অনুষ্ঠিত হলেও এ বছর শুধুমাত্র দুই দিনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গত বছর মেলাটি তিন দিনব্যাপী হয়েছিল।

স্থানীয় সূত্র জানায়, প্রতিবছর এই মেলাকে ঘিরে অশ্লীলতা, মাদক, জুয়া ও চাঁদাবাজিসহ নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ ওঠে। এসব অনিয়মের প্রতিবাদে গত ১৬ অক্টোবর কালকিনির ভুরঘাটা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মেলা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেন স্থানীয় আলেম সমাজ।

পরবর্তীতে মেলা আয়োজক কমিটির আবেদন এবং সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মাদারীপুর জেলা প্রশাসন সীমিত পরিসরে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেয়।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে মেলার অনুমোদন দেন মাদারীপুরের সদ্য সাবেক জেলা প্রশাসক মোছা. ইয়াসমিন আক্তার।

এ বিষয়ে কালকিনি উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ উল আরেফিন বলেন, দুই দিনের জন্য কুন্ডুবাড়ি মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। মেলা নির্বিঘ্নে আয়োজনের জন্য আয়োজকদের বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মাদারীপুরের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিবুল আলম উপ সচিব জানান , মেলা পরিচালনার জন্য মোট ১৫টি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- অসামাজিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ, জুয়া ও মাদক বিক্রয় নিষিদ্ধ, উচ্চ শব্দে যন্ত্র ব্যবহার না করা, অবৈধ পণ্যের বিক্রি বন্ধ, ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ওপর কোনো দোকান না বসানো এবং রাত ১১টার পর দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালকিনি পৌর এলাকার গোপালপুরের কুন্ডু বাড়িতে ১৭৮৩ সালের নভেম্বরে দিপাবলী ও শ্রীশ্রী কালিপূজা উপলক্ষ্যে দীননাথ কুন্ডু ও মহেশ কুন্ডু এই মেলার প্রবর্তন করেন। তাই কুন্ডুদের বংশের নামানুসারে এই মেলা নাম করন করা হয় কুন্ডবাড়ির মেলা। এই সময় দিপাবলীর পরের দিন এই অঞ্চলের বিভিন্ন কালি প্রতিমা জড়ো করা হত। এর মধ্যে যাদের প্রতিমা সর্বাধীক থেকে সেরা হতো তাদের পুরস্কার প্রদান করা হত। সেই সময় চিত্তবিনোদনের জন্য পুতুল নাচ, কবিগান, জারি গান, পালাগান, নৌকাবাইচের আয়োজন করা হত। কালের বিবর্তনে পালাগান জারি গান, নৌকা বাইচ বন্ধ থাকলেও নাগর দোলার আয়োজন এখনো আছে। বংশপরম্পরায় প্রতি বছর এই মেলা আয়োজন করা হয়ে থাকে তার বংশধর।
 
বর্তমানে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ৪ একর জমির উপর এই মেলা বসে। শুধু কুন্ডবাড়ি জুড়ে নয় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গোপালপুর থেকে ভূরঘাটা পর্যন্ত সড়কের দুপাশে বসেছে শত শত দোকান। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দোকানিরা বিভিন্ন পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসে। কাঠের বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্রের জন্য এই মেলা বিখ্যাত। মেলায় মাদারীপুর ছাড়াও ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, শরিয়তপুর, বরিশাল, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা, যশোর, নড়াইলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা তাদের মাটির, বাঁশের ও কাঠের তৈরি বিভিন্ন মালামাল ট্রাকযোগে বিক্রির জন্য নিয়ে আসে। প্রতি বছরের তুলনায় এবার কাঠের ফার্নিচারের চাহিদা বেশি রয়েছে বলে জানিয়েছেন সাগর পাল নামে গোপালগঞ্জ থেকে আসা এক কাঠ ব্যবসায়ী। এ মেলায় ৮ থেকে ১০ কোটি টাকার পন্য বিক্রি হয় বলে জানান আরেক ব্যবসায়ী ঝুন্নু সরকার।

মেলার সার্বিক নিরাপত্তা সম্পর্কে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাঈমুল হাছান জানান,মেলায় সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার জন্য আমাদের পুলিশ বাহিনীর সাথে সাদা পোষাকেও আমাদের লোকজন থাকবে। আমরা পর্যাপ্ত ফোর্স টহলে থাকবে যাতে কোন অপ্রীতিকর কিছু না ঘটে। সে ব্যপারে আমরা সজাগ।আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে বিশেষ নজরদারি কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

কা/আ 

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত