সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন করতে সক্ষম : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ: ৪ জুন ২০২৩, ১৭:২০ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৫
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাঁর সরকার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ৭৬১,৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট বাস্তবায়ন করতে সক্ষম। কারণ, তাঁরা তাদের সক্ষমতা আগেই দেখিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আকারের জাতীয় বাজেট দিয়েছি এবং আমরা এই বাজেট বাস্তবায়ন করতে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ। আমরা এটি বাস্তবায়ন করতে পারি এবং আওয়ামী লীগ তা করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী আজ চিলাহাটি-ঢাকা-চিলাহাটি রুটে নতুন আন্তঃনগর ট্রেন ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা গণভবন থেকে নীলফামারীর চিলাহাটি রেলস্টেশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে বলেন, অনেকেই (এই বাজেট নিয়ে) অনেক কথাই বলবে, কিন্তু আমরা আওয়ামী লীগ দেশের ও দেশের মানুষের মঙ্গল কিসে-তা জানি।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ২০০৬ সালে বিএনপি শাসনামলে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৬১,০০০ কোটি টাকা। কিন্তু আমাদের সরকার গত ১ জুন ৭৬১,৭৮৫ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেছিল।
তিনি বলেন, একদল লোক দেশে পর্যাপ্ত সংখ্যক টেলিভিশন চ্যানেল থাকায় এর অপব্যবহার করছে, আওয়ামী সরকারই বেসরকারি খাতে যেগুলোর লাইসেন্স দিয়েছে, সরকার যাই করুক না কেন, তারা এসি রুমে বসে সরকারের সব কাজের সমালোচনা করে ও ‘কিন্তু’ (ত্রুটি) খুঁজে বেড়ায়। তারা দেশের জনগণকে হতাশ করার জন্য এবং বিদেশিদের সামনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কিছু কথাও ছড়িয়ে দেয়।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘কিন্তু তারা এ থেকে কী পায়- আমি জানি না। তারা সম্ভবত কিছু হাদিয়া (টাকা) সংগ্রহ করে থাকতে পারে-আমি আসলে বলতে পারবো না। তবে, তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কথা বলে তৃপ্তি পায়।’
প্রতিবছর জাতীয় বাজেট পেশ করার পর সরকারের পক্ষে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না, যারা বলে-তাদের সম্পর্কে তিনি বলেন, সরকার বাস্তবায়নের মাধ্যমে তা করে দেখায়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি এই ধরনের লোকদের বলতে চাই যে-অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন, আপনি গত বছর কি বলেছিলেন এবং আজকের বাংলাদেশ কোথা থেকে কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে। অনুগ্রহ করে হিসাব করুন ও তুলনা করুন।’
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে বিশ্বজুড়ে প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ অন্যান্য দেশ থেকে জ্বালানি তেল, গ্যাস, খাদ্যসামগ্রী, গম, চিনি ও অন্যান্য যা কিছু আমদানি করছে, তার দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবহন খরচ বৃদ্ধি করা হয়েছে- যা দেশের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, আমরা পরিস্থিতি সামাল দিতে কিছু উদ্যোগ নিয়েছি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ৮০০ যাত্রী ধারণক্ষমতা সম্পন্ন আন্তঃনগর ট্রেন “চিলাহাটি এক্সপ্রেস” উদ্বোন করেন- যা সপ্তাহে ছয় দিন এই রুটে চলাচল করবে।
চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশন নীলফামারী জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল। কারণ, হলদিবাড়ি-চিলাহাটি রুটটি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করার জন্য পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে। পণ্য বোঝাই ওয়াগনের পাশাপাশি এই রুটে চলছে আন্তঃদেশীয় মিতালী এক্সপ্রেস।
মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জেল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেলওয়ে সচিব ড. মো. হুমায়ন কবির। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন রেলমন্ত্রী মো নুরুল ইসলাম সুজন, এমপি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রেলওয়ের উপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৪ বছরে মোট ৭৪০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ স্থাপন করেছে, ২৮০ কিলোমিটার রেলপথ-কে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করেছে এবং ১৩০৮ কিলোমিটার রেলপথ পুনঃস্থাপন করেছে।
এই সময়ের মধ্যে, বাংলাদেশ রেলওয়ে (বিআর)-এর জন্য ৬২৩টি নতুন যাত্রীবাহী গাড়ি ও ৫১৬টি পণ্যবাহী ওয়াগনসহ মোট ১১৪টি লোকোমোটিভ সংগ্রহ করা হয়েছে।
এছাড়াও, ১৩০টি রেলওয়ে স্টেশনের সিগন্যালিং সিস্টেম আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। এখন, যাত্রীদের চলাচলের জন্য ১৪২টি নতুন ট্রেন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার শতভাগ বিদ্যুৎ দেয়ার অঙ্গীকার করেছিল এবং তারা প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু আজ সারা বিশ্বে গ্যাস-তেল-কয়লার দাম বাড়ায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। টাকা দিয়েও এখন আর তা (গ্যাস-তেল-কয়লা) কেনা সম্ভব নয়।
তিনি আরো বলেন, ‘আমি জানি এজন্য এই গ্রীষ্মে মানুষ কয়েকটি সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। একদিকে মুদ্রাস্ফীতি অন্যদিকে লোডশেডিং- এই দুটি সমস্যায় আমার দেশের মানুষ ভুগছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, কেউ যদি বৈদ্যুতিক পাখায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তবে এটি ছাড়া থাকা তার পক্ষে আরো বেশি কষ্টকর হয়ে পড়ে। এটাও সত্য যে-আমরা এটাতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি, কিন্তু এটা এখন পাওয়া যাচ্ছে না।’
তিনি আরো বলেন, যদি যুদ্ধ না হতো এবং এর কারণে নিষেধাজ্ঞা না থাকত- তাহলে দেশ এ ধরনের কোন অসুবিধার সম্মুখীন হত না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারতাম। আজ, যুদ্ধের কারণে, বিশ্বের প্রতিটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখনো কোনো সংকটের মধ্যে পড়েনি এবং ইনশাআল্লাহ, দেশ এমন পরিস্থিতিতে পড়বে না।
তিনি বলেন, কিন্তু এ জন্য আমাদের দেশের জনগণকে একটা কাজ করতে হবে। আমি বারবার বলছি যে-আমাদের যত অনাবাদি জমি আছে তার সব চাষ করতে হবে। উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমাদের যত জলাশয় আছে সেখানে মাছ চাষ করতে হবে।’
দেশের উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলে চা উৎপাদন না হলেও আওয়ামী লীগ সরকার তার উদ্যোগে সেখানে চা চাষ শুরু করে। এখন পঞ্চগড় থেকে কুঁড়িগ্রাম পর্যনস্ত বিস্তীর্ণ এলাকা চা চাষের আওতায় আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার উত্তরাঞ্চলের মানুষের জন্য বহুবিধ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে।
রেল যোগাযোগ সম্পর্কে সরকার প্রধান উল্লেখ করেছেন যে-ট্রেন সাধারণ মানুষের পরিবহন এবং অধিকাংশ মানুষই এটি ব্যবহার করে।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, চিলাহাটি-ঢাকা-চিলাহাটি রুটে এই ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ চালু হওয়ার মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চল, বিশেষ করে নীলফামারীতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ভালো সুযোগ তৈরি হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, এটি কেবল জনগণের যাতায়াতের সুবিধাই নিয়ে আসবে না, বরং এর পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগও বাড়াবে।
প্রধানমন্ত্রী জনগণকে ট্রেনটি সাবধানে ব্যবহার করার, এর যতœ নেয়ার ও এটি পরিষ্কার রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সরকার সারাদেশে রেল নেটওয়ার্ক সম্প্রারণ করছে এবং পদ্মা সেতুতে রেল চালুর পর ভাঙ্গা থেকে বরিশালের রেল যোগাযোগ চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘বরিশালের মানুষ রেললাইন দেখতে পায়নি। তাই আমাদেরও বরিশাল থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেল যোগাযোগ স্থাপনের পরিকল্পনা করতে হবে।’
শেখ হাসিনা আরো বলেন, ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে তাঁর সরকার বিএনপি ও অন্যান্য সরকারের দ্বারা বন্ধ হওয়া সমস্ত রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করে।
এ প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, তাঁর প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতে রেল ট্র্যাক যুক্ত করা হয়েছে- যা আগে অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
তিনি বলেন, ‘এখন আমরা যমুনা নদীর ওপর একটি পৃথক রেল সেতু নির্মাণ করছি। একসময় বিশ্বব্যাংক বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুতে রেলপথের বিরোধিতা করলেও এখন তারা নদীর ওপর রেল সেতু নির্মাণে অর্থায়ন করছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, তাঁর সরকার যাত্রীসেবা ও পণ্য সরবরাহের জন্য ৪৬টি নতুন ব্রড-গেজ লোকোমোটিভ, ৪৬০টি নতুন ব্রড-গেজ যাত্রীবাহী গাড়ি, ১৫০টি নতুন মিটারগেজ যাত্রীবাহী গাড়ি, ১২৫টি আধুনিক লাগেজ ভ্যান ও ১৩১০টি নতুন ওয়াগন সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে। পরিবহনের পাশাপাশি রেলের বহুমুখী ব্যবহার।
এছাড়াও ২০০টি যাত্রীবাহী গাড়ির পুনর্বাসনের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি যে- এই নতুন লোকোমোটিভ, যাত্রীবাহী গাড়ি এবং ওয়াগনের মাধ্যমে রেলওয়ে পরিষেবা ৩/৪ বছরের মধ্যে একটি নতুন যুগে পা রাখবে।
মানুষ এর সুফল পাবে ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
গেট বন্ধ থাকার পরও মানুষ মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রেল লাইনে হেঁটে বা রেললাইন পার হওয়ার চেষ্টা না করার ব্যাপারে দেশবাসীকে সচেতন ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
শনিবার ভারতে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা সাধারণত ঘটে না।
এই ঘটনায় ২৮৮ জন মারা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে তার ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সমবেদনা জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটি সত্যিই খুব দুঃখজনক। এ ট্রেন দুর্ঘটনায় দুই বাংলাদেশী আহত হয়েছেন।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত