শাহজালালে যাত্রীর সঙ্গে ২ জনের বিধিনিষেধ শুধু ‘কাগজে কলমে’

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ৩ আগস্ট ২০২৫, ১১:৩৮ |  আপডেট  : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:০৮

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীর সঙ্গে সর্বোচ্চ দুই জন স্বজন যাওয়ার বিধিনিষেধ শুধু কাগজে কালমেই। বাস্তবে এর কোনও প্রয়োগ নেই। এমনকি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বিমানবন্দরে নিয়োজিত কোনও বাহিনীকে ব্যবস্থা নিতেও দেখা যায়নি। যার ফলে বিধিনিষেধ জারি হলেও এর কোন প্রভাব নেই। একজন যাত্রীর সঙ্গে ৪-৫ জন কিংবা তারও বেশি স্বজন দেখা যাচ্ছে। বিমানবন্দরের ক্যানোপিতে শৃঙ্খলার লেশমাত্র নেই। সরেজিমন বিমানবন্দর ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৭ জুলাই ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগত ও গমনকারী যাত্রীদের সঙ্গে সর্বোচ্চ দুই জন সঙ্গী প্রবেশ করতে পারবেন’ মর্মে নির্দেশনা জারি করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দর এলাকার ডিপারচার ড্রাইভওয়ে ও অ্যারাইভাল ক্যানোপিতে যাত্রীপ্রতি সর্বোচ্চ দুই জন ব্যক্তি ভেতরে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। যাত্রীদের যাতায়াত স্বাভাবিক রাখা, যানজট নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়, বিমানবন্দর এলাকায় আগত সবাইকে সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল ও কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানানো হচ্ছে। ঈদ, ছুটি বা শিক্ষাবর্ষ শেষে অভিভাবকসহ ভ্রমণপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের আগমনে বিমানবন্দরে বাড়তি ভিড় লক্ষ্য করা যায়। এমন পরিস্থিতিতে যানজট এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের পদক্ষেপকে জরুরি বলছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রয়োজনে এই নিয়ম আরও কড়াকড়ি করা হতে পারে। এজন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়।

সরেজমিন বিমানবন্দর ঘুরে দেখা যায়, এই নির্দেশনার ছিটেফোঁটাও নেই। কিংবা নির্দেশনা বাস্তবায়নে কেউ কাজ করছেন এমনটিও চোখে পড়েনি। তবে এই বিধিনিষেধের কথা বিমানবন্দরে কর্মরত সব সংস্থার লোকজনই জানেন। তাদের সামনেই যাত্রীর সঙ্গে ৩-৪ জন করে স্বজন আসছেন। এছাড়াও আগমনী যাত্রীর সঙ্গে ক্যানোপির ভেতরেই গাড়ি ভর্তি লোকজন উঠছেন। সবকিছু হচ্ছে তাদের সামনেই। অথচ কেউ এ বিষয়ে কোনও কথা বলছেন না।

বিমানবন্দরে বর্হিগমন ক্যানোপিতে কথা হয় আব্দুল আহাদ নামের এক যাত্রীর সঙ্গে। তিনি সৌদি আরব যাচ্ছেন। তাকে বিদায় জানাতে স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, মা, বাবার সঙ্গে সঙ্গে এসেছেন আরও দুই প্রতিবেশী। একটি হাইস গাড়ি ভাড়া করে নিয়ে এসেছেন। বিধিনিষেধের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমরা এটা জানি না। কেউ আমাদের বলেনি। প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে বসে আছি। কেউ তো এ বিষয়েও কিছু বললোও না।’

একইভাবে আশরাফুল নামের আরেক যাত্রী সঙ্গেও ৫ জন এসেছেন বিদায় জানাতে। বিধিনিষেধের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সম্পর্কে জানি না। যদি জানতাম, অবশ্যই নিয়ম মানতাম।’

আগমনী টার্মিনাল ১ ও ২ এর চিত্র একই। ক্যানোপির ভেতরে লোকে ঠাসা। আর সেখানেই গাড়ি পার্কিং করে যাত্রীর সঙ্গে ৫-৬ জন করে উঠছেন। সব কিছুই হচ্ছে কর্তব্যরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই। কিন্তু কেউ কিছু বলছেন না।

দায়িত্বরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘এখানে কেউ কোনও নিয়ম মানতে চায় না। যাত্রীর সঙ্গে দুই জনের বেশি আসা যাবে না- এটি আমরা জানি, কিন্তু বাস্তবায়ন করা অনেক কঠিন। লোকজনকে বললে তারা কোনও কথা শোনে না। আমরা চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না। কিছু বললে যাত্রী ও তার স্বজনরা উল্টো হুমকি দেয়। আবার এটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেয়। এখানে আমরা কী করবো বলুন।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এভাবেই যতটুকু পারা যায় আমরা শৃঙ্খলা রাখার চেষ্টা করছি। লোকজন সচেতন না হলে এ রকম নির্দেশনা বাস্তবায়ন কঠিন।’

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) মুখপাত্র কাওছার মাহমুদ বলেন, ‘বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। যেসব কারণে এই বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছে সেগুলোর জন্য লোকজনকে বোঝানো হচ্ছে।’

 

সৌজন্যে : বাংলা ট্রিবিউন

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত