জাপানসহ পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব
ফায়দা লুটতে চায় মিয়ানমার, তবে উসকানিতে বাংলাদেশ পা দেবে না
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৪:৪৫ | আপডেট : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:১১
রোহিঙ্গাদের না ফিরিয়ে আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরি করে ফায়দা লুটতে চায় মিয়ানমার। তবে তাদের এই উসকানিতে বাংলাদেশ পা দেবে না বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) মো. খোরশেদ আলম।
মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে জাপানসহ পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এই কথা বলেন।সীমান্তে মিয়ানমারের হঠকারিতা ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ সম্পর্কে জানাতে রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব। তবে বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রদূত ছিলেন না বলে জানা গেছে।
বৈঠক প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমারের আচরণ সম্পর্কে কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে। তাদের কিছু করণীয় থাকলে সেটা করতে বলা হয়েছে। কূটনীতিকরা আশ্বাস দিয়েছেন, এ ব্যাপারে তারা নিজ নিজ দেশের সঙ্গে কথা বলবেন।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব বলেন, আমরা দূতদের বলেছি, আমরা আপনাদের সাহায্য চাই। যাতে করে মিয়ানমার এই অঞ্চলে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ভবিষ্যতে ফায়দা লুটতে না পারে, যাতে করে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে না হয়। এটাও বলে দিয়েছি, আমরা চরম ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি অবলোকন করছি এবং আমরা কোনোভাবেই চাই না এখানে জড়িত হতে।
খোরশেদ আলম বলেন, এখানে জড়িত হলে মিয়ানমার একটা সুযোগ পাবে। রোহিঙ্গাদের না নেওয়ার বিষয়ে একটা অজুহাত পাবে। সে রকম কোনো অজুহাত আমরা মিয়ানমারকে এ মুহূর্তে দিতে চাই না। এ সময় তিনি জানান, বিদেশি কূটনীতিকরা বাংলাদেশের ধৈর্যের প্রশংসা করেছেন।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সর্বস্তরেই মিয়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। যাতে মিয়ানমার বুঝতে পারে এ রকম একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তাদের জন্যও বিপজ্জনক। বাংলাদেশ এটা কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না।
এর আগে সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের চলমান উত্তেজনা পরিস্থিতি সম্পর্কে ঢাকায় অবস্থিত আসিয়ানের মিশন প্রধানদের জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশের ভেতরে মর্টার শেল নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণের ঘটনায় ঢাকার গভীর উদ্বেগের কথা তিনি আসিয়ান দূতদের জানান।
আসিয়ানের দূতরা বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিবের উদ্বেগের বিষয়টি তাদের নিজ নিজ দেশের সরকারকে জানাবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।
এদিকে সোমবার ইয়াঙ্গুনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মঞ্জুরুল করিম খান চৌধুরীর সঙ্গে আলোচনায় নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে মিয়ানমার। দেশটি এই ঘটনার জন্য আরাকান আর্মির পাশাপাশি রাখাইনের সশস্ত্র সংগঠন আরসার ওপর দায় চাপিয়েছে। দেশটি বলেছে, বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যমান ‘আন্তরিক সম্পর্ক’ নষ্ট করতে এই দুই পক্ষ মিলে সীমান্ত এলাকায় চলমান পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
গত ২০ আগস্ট মিয়ানমার থেকে মর্টার শেল এসে বাংলাদেশ সীমানায় পড়ার পরদিন ২১ মিয়ানমার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। এক সপ্তাহ যেতে না যেতে ২৮ আগস্ট ফের মর্টার শেল পড়ার খবর পাওয়া যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২৯ আগস্ট রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আবারও সতর্ক করা হয়।
ছয় দিন পর ৩ সেপ্টেম্বর সকালে মিয়ানমারের অন্তত চারটি যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দুটি গোলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন এলাকায় পড়ে। পরদিন মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত অং কিয়াউ মো-র হাতে এ-সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদপত্র দেওয়া হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর চতুর্থবারের মতো প্রতিবাদ জানানো হয় ঢাকার পক্ষ থেকে।
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত