কোন কোন জীবাণুর কারণে ব্লাড ক্যান্সার হয়?

  ডা এ.কে.এম. আরিফ উদ্দিন আহমেদ

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৩০ |  আপডেট  : ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩:৩৫

ব্লাড ক্যানসার বা রক্তের ক্যানসার হলো রক্ত কোষের ক্যানসার। লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা ও মায়োলোমা, প্রধানত এই তিন ধরনের ক্যানসারই হলো ব্লাড ক্যানসার বা রক্তের ক্যানসার।

রক্ত কোষ তৈরি হয় বোন ম্যারো বা অস্থিমজ্জায়। তৈরির পর কয়েকটি ধাপে কোষগুলো পরিণত হয়ে তারপর রক্তপ্রবাহে আসে। যদি কোনো কারণে এই কোষগুলো অতিমাত্রায় বিভাজিত হয় এবং ঠিকভাবে পরিপক্ব না হয়ে রক্তপ্রবাহে চলে আসে, তখন এরা শরীরের কোনো কাজে তো আসেই না উল্টো নানা ধরনের উপসর্গ তৈরি করে। মূলত নানা ধরনের শ্বেত রক্তকণিকাই এতে আক্রান্ত হয় বেশি।

রক্তের ক্যানসার এর কারণ নির্দিষ্ট করে বলা কঠিন। দীর্ঘদিন দীর্ঘসময় ধরে উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয় রশ্মি বা রেডিয়েশনের সংস্পর্শে এলে রক্তের ক্যানসার হতে পারে। রঙের কারখানার বর্জ্য, ক্ষতিকর রাসায়নিক বর্জ্য যেমন রেডিয়াম, অ্যাসবেস্টসের গুঁড়ো, টার বা আলকাতরা, কীটনাশক ইত্যাদির সংস্পর্শে এলে, ধূমপান করলে ও বিশেষ কিছু ভাইরাসের কারণেও রক্তের ক্যানসার হতে পারে।

ক্যানসারের কারণ কী? ক্যানসার রোগীরা যেসব খাবার খেতে পারবেন নাক্যানসারের কারণ কী? ক্যানসার রোগীরা যেসব খাবার খেতে পারবেন না

এসব কারণে শরীরের কোষাভ্যন্তরে যে জিন থাকে সেগুলোর মিউটেশন হয়, ক্রোমোজোমের বাহুগুলোতে ও কিছু জিন এর গঠনে কিছু পরিবর্তন হয়। তখন কোষ বিভাজনে কিছু অস্বাভাবিক সিগন্যাল যায়। ফলশ্রুতিতে রক্তের কোষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যাপক হারে উৎপাদিত হয় এবং উৎপাদিত কোষগুলো অস্বাভাবিক অপরিণত অবস্থায় রক্তপ্রবাহে চলে আসে এবং অস্বাভাবিক কার্যক্রম করতে থাকে।

যে সকল জীবাণু সংক্রমণের কারণে রক্তের ক্যানসার হতে পারে, সেগুলো হলো:

এপস্টেইন-বার ভাইরাস, যা থেকে বার্কিট লিম্ফোমা নামক ক্যানসার হতে পারে।
হিউম্যান টি লিম্ফোট্রপিক ভাইরাস এর কারণে টি-কোষ লিউকেমিয়া হতে পারে।
হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস, হিউম্যান ইমিউনোডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস থেকে লিমফোমা হতে পারে।
দীর্ঘদিনের জ্বর, রক্তশূন্যতা, ত্বকে লাল র‌্যাশ, দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্তপাত, হাড়ে ব্যথা, বারবার সংক্রমণ ইত্যাদি সব উপসর্গ নিয়ে প্রকাশ পেতে পারে ব্লাড ক্যানসার। অনেক সময় কেবল রুটিন পরীক্ষা করতে গিয়েই ধরা পড়ে। রক্তের কাউন্ট ও পেরিফেরাল ব্লাড ফিল্মই বেশির ভাগ সময় রোগ ধরিয়ে দেয়। তবে বোনম্যারো পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয়। ফ্লো সাইটোমেট্রি, ইমিউনোফেনোটাইপিং ইত্যাদি আধুনিক পরীক্ষা করা যায় ব্লাড ক্যানসার নিশ্চিত করার জন্য। সাইটোজেনেটিক্স করা হয় রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের জন্য এছাড়াও সাইটোজেনেটিক্স করলে রোগের কেমোথেরাপি কী ধরনের দিতে হবে তার সম্পর্কে ভালো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, রোগ ভাল হওয়ার সম্ভাবনা আঁচ করা যায়।

অতিরিক্ত স্টেরয়েড খেয়ে নিজের ক্ষতি করছেন কি?অতিরিক্ত স্টেরয়েড খেয়ে নিজের ক্ষতি করছেন কি?
লিউকেমিয়া চিকিৎসায় ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। শিশুদের অ্যাকিউট লিউকেমিয়ার চিকিৎসায় নিরাময়ের হার উন্নত বিশ্বে ৯০ শতাংশ ছাড়িয়েছে। বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ও আধুনিক কেমোথেরাপি রোগীদের সেরে ওঠার আশার আলো দেখাচ্ছে।

ব্লাড ক্যানসারের চিকিৎসা, রোগীর ধরণ, পর্যায় এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে। সাধারণ পদ্ধতির মধ্যে রয়েছে:

কেমোথেরাপি: ক্যানসার কোষকে মেরে ফেলতে বা বৃদ্ধিতে বাধা দিতে ওষুধ ব্যবহার করে। ওষুধগুলি দ্রুত বিভাজনকারী কোষগুলিকে লক্ষ্য করে কাজ করে, তবে সাধারণ কোষগুলিকেও প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়।
রেডিওথেরাপি: ক্যানসার কোষকে লক্ষ্য করে কাজ করে এবং ধ্বংস করার জন্য উচ্চ-শক্তির বিকিরণ ব্যবহার করে, প্রায়ই স্থানীয় ক্যানসার বা লিম্ফোমা দ্বারা প্রভাবিত নির্দিষ্ট এলাকার জন্য ব্যবহৃত হয়।

টার্গেটেড থেরাপি: ওষুধগুলি ক্যানসার এ জড়িত কোষগুলোকে লক্ষ্য করে কাজ করে, যা বিশেষভাবে তাদের জেনেটিক বা আণবিক বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে ক্যানসারের কোষগুলিকে লক্ষ্য করে। এই পদ্ধতির লক্ষ্য স্বাস্থ্যকর কোষের ক্ষতি কমানো।

ইমিউনোথেরাপি: এমন চিকিৎসা নিযুক্ত করে, যা ক্যানসার কোষগুলিকে চিন্তে এবং আক্রমণ করতে শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে উদ্দীপিত করে। এর মধ্যে মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি বা অন্যান্য ইমিউন-ভিত্তিক পন্থা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট: ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হওয়া অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন করে একজন দাতার থেকে সুস্থ অস্থি মজ্জা দিয়ে। এটি গুরুতর রক্তের ক্যানসারের ক্ষেত্রে বা নিবিড় চিকিৎসার পরে ব্যবহার করা যেতে পারে।
সাপোর্টিভ কেয়ার: অ্যানিমিয়া, সংক্রমণ এবং অন্যান্য জটিলতা মোকাবেলায় সহায়ক ব্যবস্থাসহ উপসর্গ এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি চিকিৎসার উপর ফোকাস করে।
লেখক: জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পরিচালক, বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ হসপিটাল, চট্টগ্রাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত