কবরীর ঠোঁট, চোখ, কণ্ঠ সব কথা বলত: তারকাদের টুকরো স্মৃতি

  অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২১, ১৫:৪০ |  আপডেট  : ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৬

ঢালিউডের ‘মিষ্টি মেয়ে’ সারাহ বেগম কবরী এখন অনন্তকালের যাত্রী। করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ দিনের মাথায় গত শুক্রবার রাতে মারা যান বড় পর্দার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। গত শনিবার বাদ জোহর জানাজা শুরুর আগে মুক্তিযোদ্ধা এই অভিনেত্রীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। তাঁর মৃত্যুতে দেশের বিনোদন অঙ্গনে নেমে এসেছে শোক। দেশের বিনোদনজগতের তারকারা জানিয়েছেন শোক ও শ্রদ্ধা। বিদায়বেলায় ভাগ করে নিয়েছেন এই শিল্পীর সঙ্গে তাঁদের টুকরো স্মৃতি।
 
শক্তিশালী একজন অভিনেত্রী ছিলেন-সুজাতা

আমার কাছে কবরী ছিলেন একজন পাওয়ারফুল অভিনেত্রী। তিনি অনেক সুন্দরভাবে অভিনয় করতেন। ব্যক্তিগতভাবে তিনি স্পষ্টবাদী ছিলেন। যে কারণে হয়তো অনেকেই তাঁকে ভুল বুঝতেন। ভালো-খারাপ দুটোই তিনি সরাসরি বলে দিতেন। এটা আমার খুব ভালো লাগত। বাস্তব চরিত্রগুলো ফুটিয়ে তুলতে অভিনেত্রী হিসেবে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। তিনি সহজেই যেকোনো চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে যেতেন। যে কারণে তিনি ছিলেন সফল অভিনেত্রীর নাম। সহশিল্পী হিসেবে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। প্রায় একই সময়ে আমরা চলচ্চিত্রে এসেছি। তিনি খোলা মনের মানুষ ছিলেন।

 সংসদ সদস্য হওয়ার পরও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হতো। সবাইকে একদিন পৃথিবী ছেড়ে যেতে হবে। তারপরও কবরীর চলে যাওয়ায় বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল।

নায়িকাদের মধ্যে কবরী ছিলেন সেরা-উজ্জ্বল

বাংলাদেশের একজন বাঙালি নায়িকা কেমন হবে, কবরী ছিলেন তার সংজ্ঞা। চেহারা, চলনবলন, কথাবার্তা, ব্যক্তিত্ব—সব দিক থেকে কবরী ছিলেন আদর্শ। কবরী ছিলেন একেবারে স্বচ্ছন্দ, স্বাভাবিক। আমরা তাঁকে দেখে মুগ্ধ ছিলাম। আমি যখন কাজ শুরু করি, কবরী তখন দেশের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা।

আমি মাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোনো যুবক। তিনি আমাকে সহজ করার জন্য কত কথা বললেন! তিনি ছিলেন বাকপটু আর মিশুক। সহকর্মীদের সঙ্গে মজা করতেন, খুনসুটি করতেন। তিনি যতই আমাকে সহজ করার চেষ্টা করছিলেন, আমি ততই আড়ষ্ট হয়ে যাচ্ছিলাম। পরে অবশ্য ভালোভাবে অভিনয় করেছি। তখনকার নারীর যে ইমেজ ছিল, যেমন লজ্জাবতী, আকর্ষণীয়, প্রেমিকা—সব দিক দিয়ে কবরী ছিলেন সেরা।

এভাবে চলে যাবেন, কখনোই ভাবিনি-সুচন্দা

কবরী ও আমি দুটো সিনেমায় কাজ করেছি। সেই দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে। অসংখ্য স্মৃতি আমাদের। আমরা দুজনই সুভাষ দত্তের হাত ধরে সিনেমায় এসেছিলাম। যখনই শুনেছি কবরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, আমার মনে হচ্ছিল, তিনি সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন। তিনি এভাবে আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন, কখনোই ভাবিনি। তাঁর মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে সারা দিন কোনো কিছুতেই মন বসেনি। দারুণ প্রতিভাময়ী একজন গুণী শিল্পী ছিলেন। গ্রামীণ পটভূমির ছবিতে তাঁকে অসাধারণভাবে পেয়েছি। 

গল্পের চরিত্রগুলো দেখে মনে হতো তাঁর জন্য সৃষ্টি করা। ব্যক্তিগত জীবনেও তিনি ছিলেন ভালো মানুষ। তাঁর চলে যাওয়ায় আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল।

নতুন হলেও কবরী আমাদের মূল্য দিতেন-আলমগীর

কবরীর দুটি দিক। প্রথমত তিনি অভিনেত্রী আর দ্বিতীয়ত অসাধারণ মানুষ। অভিনেত্রী কবরী সম্পর্কে বলা আমার ধৃষ্টতার মধ্যে পড়ে না। তিনি যে মাপের অভিনয়শিল্পী, তাঁর আশপাশেও আমি নেই। এইটুকুই বলব, তিনি অনেক বড় মাপের অভিনয়শিল্পী ছিলেন।

 আর মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অসাধারণ। স্পষ্টভাষী, সত্য কথা বলতে পিছপা হতেন না। আমাদের স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। যখন প্রথম কাজে আসি, আমাদের এক পয়সা মূল্য ছিল না। তখন তিনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। একবার কুমিল্লায় শুটিংয়ে গিয়েছি। ইউনিট থেকে আমাকে ও চিত্রগ্রাহক মাহফুজকে চাদর দিয়ে বারান্দায় শুতে দেওয়া হয়েছে। এটা কবরী দেখেছিলেন। পরদিন তিনি প্রোডাকশন ম্যানেজারকে ডেকে নিজে টাকা দিয়ে চৌকি এবং তোশক কেনার ব্যবস্থা করেছিলেন।

তিনি অনেক স্নেহ করতেন-ববিতা

কবরী আপা অসাধারণ গুণী শিল্পী। তিনি লাখো মানুষের স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছেন। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাদেশের সোনালি অধ্যায় পরিসমাপ্তির দিকে চলে এল। এই শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। আসলে প্রকৃত নক্ষত্রের মৃত্যু নেই। আপার সঙ্গে সর্বশেষ রাজা সূর্য খাঁ নামে একটি সিনেমা করেছিলাম। পরিচালক গাজী মাহবুব চাইছিলেন ঐতিহাসিক এই সিনেমায় কবরী আপা থাকলে ভালো হয়। আপা তখন সাংসদ। 

আপাকে অনুরোধ করে বললাম, আমরা একসঙ্গে কাজটি করব। আপা শতব্যস্ততার মাঝেও না করতে পারলেন না। সেবার আমাদের অনেক গল্প, আড্ডা হয়েছিল। আমি আপার জন্য খাবার নিয়ে যেতাম। তিনি অনেক স্নেহ করতেন। গত রাতে যখন শুনলাম আপা আর নেই, রাতে একটা সেকেন্ডও ঘুমাতে পারিনি।

ছোটবেলা থেকেই তাঁর ভক্ত ছিলাম-শিবলী

আমি ছোটবেলা থেকেই কবরীর ভক্ত ছিলাম। বড় হয়ে রবীন্দ্রনাথের ‘আবেদন’ কবিতায় তিনি রানি আর আমি ভৃত্যের নৃত্যাভিনয় করি। সেই থেকে তাঁর সঙ্গে আমার গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। তাঁর ছেলে অঞ্জন আমার বন্ধু ছিল। সে কারণে আমি তাঁকে মাসি ডাকতাম। তিনি আমার আম্মাকে আপা ডাকতেন। আম্মার সঙ্গে তাঁর ভীষণ বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আমরা দুজন জীবনের এমন কোনো ঘটনা নেই, যা পরস্পরের সঙ্গে বিনিময় করিনি। গত বছরও রোজার ভেতরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আড্ডা দিয়েছি। তিনি আমার জীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে যাওয়া একটা মানুষ।

মাসি আর আসবেন না, মাসি আর আমাকে আদর করবেন না, আবদার করবেন না, আমার বেডরুমে বসে গুড় দিয়ে চিতই পিঠা খাবেন না—ভাবতেই পারছি না।

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত