এক মাস ধরে মুন্সীগঞ্জে সরকারি টিকার সরবরাহ বন্ধ, স্বাস্থ্যঝুঁকিতে শিশুরা
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৫৭ | আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৬
মুন্সীগঞ্জে এক মাস ধরে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি টিকার সরবরাহ বন্ধ থাকায় সময়মতো টিকা দেওয়া যাচ্ছে না হাজারো নবজাতক শিশুকে। অভিভাবকরা নবজাতকদের নিয়ে প্রতিদিন হাসপাতাল ও টিকাকেন্দ্রে যাচ্ছেন। কিন্তু টিকা না দিয়ে ফিরতে হচ্ছে। এতে শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে বলে জানালেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তবে কবে নাগাদ সরবরাহ শুরু হবে তাও জানা নেই তাদের।
স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, দ্রুত টিকার সংকট সমাধান না হলে পোলিও, রুবেলা, ডিপথেরিয়া, নিউমোনিয়া, কাশি, ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনাস ও জন্ডিসের মতো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা।
২৫০ শয্যার মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরবরাহ বন্ধ থাকায় সময়মতো টিকা দেওয়া যাচ্ছে না সদরের দুই হাজার ৭০০ শিশুকে। অভিভাবকরা তাদের নবজাতকদের নিয়ে বারবার হাসপাতাল ও টিকাকেন্দ্রে গিয়ে খালি হাতে ফিরছেন। কবে টিকা পাবেন, তাও নিশ্চিত করে জানানো হচ্ছে না তাদের। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন শিশুদের অভিভাবকরা।
হাসপাতালের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক মাস ধরে পোলিও, রুবেলা, ডিপথেরিয়া, নিউমোনিয়া, কাশি, ধনুষ্টঙ্কার বা টিটেনাস ও জন্ডিসের টিকার সরবরাহ বন্ধ আছে। এককথায় ইপিআই কর্মসূচির কোনও টিকার সরবরাহ নেই বলে জানালেন হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।
শহরের মহাকালী এলাকার বাসিন্দা মো. রতন মিয়া বলেন, ‘গত দেড় মাসে তিন দিন হাসপাতাল ও পৌরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তানকে টিকা দেওয়ার জন্য নিয়ে গেছি। কোথাও টিকা নেই। কবে আসবে তাও বলতে পারছেন না স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। গেলেই ফেরত পাঠাচ্ছেন। কবে টিকা পাবো, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।’
একই ভোগান্তির কথা জানালেন শহরের খালইস্ট এলাকার ময়না বেগম। তিনি বলেন, ‘গত এক মাসে চারবার গেছি টিকার জন্য। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন আগামী মাসের ২-৩ তারিখে যেতে, তাও পাবো কিনা নিশ্চিত না। প্রতিবার হাসপাতালে যেতে আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়। ভোগান্তি পোহাতে হয়। আমার শিশুর বয়স তিন মাস। প্রথম টিকা দিলেও এখনও দ্বিতীয়টি দিতে পারিনি। ইতিমধ্যে মাস পার হয়ে গেছে।’
মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (শিশু বিশেষজ্ঞ) ফায়েকা হাফিজ বলেন, ‘অনেক জায়গায় এই টিকাগুলোর সংকট আছে। এতে শিশুরা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। যেসব রোগের জন্য এসব টিকা দেওয়া হয়, সেসব রোগ কিন্তু আবার বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে শিশুদের শরীরে আসতে পারে। সেজন্য কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করবো, দ্রুত সময়ে টিকাগুলোর সরবরাহ নিশ্চিত করার।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদি শিশুরা এক মাস পরও এই টিকা না পায়, তাহলে তেমন সমস্যা নেই। তবে খুব বেশি দিন যাতে দেরি না হয়। দুটি টিকার মাঝখানে যে গ্যাপ সেটি যেন বেশি দিন না হয়। একটি টিকার পর এক মাসের গ্যাপ থাকে। সেটি যেন দুই-তিন মাস গ্যাপ না হয়। তাহলেই সমস্যা দেখা দিতে পারে। টিকা না দিলে যক্ষ্মা, হেপাটাইটিস, হাম, রুবেলা, পোলিও জাতীয় রোগগুলো হতে পারে। বিশেষ করে যক্ষ্মার মুখোমুখি হয় আমাদের দেশের অনেক মানুষ। টিকার মাধ্যমে রোগটি অনেক নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আগের তুলনায় রোগী কমেছে। সেজন্য শিশুর জন্মের পরপরই টিকাগুলোর কোর্স সম্পন্ন করার কথা বলি আমরা।’
কেন টিকার সংকট জানতে চাইলে মুন্সীগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘শুধু মুন্সীগঞ্জে নয়, সারা দেশে এসব টিকার সংকট দেখা দিয়েছে। মহাখালী থেকে এগুলো সরবরাহ করা হয়। আমাদের চাহিদা তাদের জানিয়েছি। প্রতিদিন তাদের সঙ্গে কথা বলছি। তবে দুই সপ্তাহ হয়েছে আমরা কোনও টিকা পাইনি। তারা আমাদের বলেছেন আরও কয়েকদিন অপেক্ষা করতে। কারণ সরবরাহ বন্ধ আছে। টিকাগুলো আসার পর যদি শিশুদের এক বছরের মধ্যেও দিতে পারি তাহলে কোনও সমস্যা হবে না। যদি তারও বেশি সময় লাগে তখন স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকবে। তবে অচিরেই সব টিকা পাবো বলে আশা করছি আমরা।’
- সর্বশেষ খবর
- সর্বাধিক পঠিত