শিউ মতিন
ঈদ আগমনী সাজ সাজ রব পড়ে যেতো ২৬ রোজার বিকাল থেকে, পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে। মেহেদি গাছ আছে যাদের বাড়ি, তাদের বাড়িতে যেয়ে ইচ্ছেমতো মেহেদি তুলে নিয়ে আসতাম আর বাটার ধুম পড়তো সন্ধ্যার পর। তারপর হাতে দেওয়ার পালা, কে কতটা সুন্দর করে আল্পনা করে হাত রাঙাতে পারে, কার কত বেশি লাল হলো, এ নিয়ে হুড়োহুড়ি।
পরদিন সাতাশ রোজা, রাখতেই হবে, সারাদিন ওড়না পাজামা পড়ে, কী এক ভাব নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। এদিকে ঈদের জামা কাপড়, জুতা, ব্যাগ,চুড়ি আরো কত কী।সব তৈরী কিন্তু কেউ যেন দেখে না ফেলে, এ নিয়ে কত লুকোচুরি, মান অভিমান, এমন কী রং, ডিজাইনও যেন কেউ না জানে! মাকে, বড় বোনকে কত কিরা-কসম কাটাতাম, ঘুনাক্ষরেও যেন মুখ দিয়ে একটি শব্দ ও না প্রকাশ পায়, যদি কোন কারণে এসব খবর বের হয়ে যায়, ঈদ শেষ…
কান্নাকাটি করে জীবন যেতো।
এর মাঝে পাড়া-প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের বাড়িতে ইফতার পাঠানো ছিল এক মহা ধুমধামের বিষয়। ট্রে ভরে ইফতার নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাওয়া ছিল আমাদের জন্য এক মহাউৎসব, এবং আমরা সেই উৎসবে উৎসাহ ও আনন্দের সাথে অংশ নিতাম। শেষ রোজার ইফতার হতো দেখার মতো, কত যে আইটেম হতো তা গুনে শেষ করা যেতো না।
ঈদের আগের রাতে ঘুম নেই চোখে। দৌড়াদৌড়ি, হুড়োহুড়ি চলতো, আর চলতো সারারাত মায়েদের রান্না। কী জমজমাট ঈদ ও তার আয়োজন।। সম্পৃক্ত থাকতো বাড়ির প্রতিটি মানুষ। ঈদ সকালে নামাজে যাওয়ার প্রস্তুতি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মজার। বাড়ির ছেলেরা, জামাইরা এবং বাবার প্রস্তুতি। কে কার আগে গোসল করবে, কাপড় পড়বে, তার এটা কই , তার সেটা কই, এ নিয়ে হাসাহাসি এক অভূতপূর্ব আনন্দময় হাস্যরসের অবতারণার মধ্য দিয়ে ঈদগাহের উদ্দেশ্যে যাত্রা।
বাড়িতে আমরা যারা মেয়েরা ছিলাম তড়িঘড়ি করে গোসল ও সাজগোছ সমাপন করতে হতো, বাড়ির ছেলেদের নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার আগে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব সালাম শেষে সালামী পাওয়া। এরপর বন্ধুদের নিয়ে পাড়া বেড়ানো দুপুর পর্যন্ত। বাসায় সবাই মিলে দুপুরের খাবার খেতে হতো।
তারপর সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরে বেড়ানো। রাত থেকে খুব মন খারাপ হতো, হায় ঈদটা চলে গেলো! ছোটবেলার আনন্দভরা ঈদটা কোথায় হারিয়ে গেল আর খুঁজে পাইনা। সেই মেহেদি পড়া হাত, সাতাশে রোজা, শেষ রোজার গ্র্যানড ইফতার, সেই পায়েশ সেমাই পোলাও কোর্মা! মা বাবা, ভাইবোন, খেলার সাথী, পাড়া-প্রতিবেশী, কোথায় হারিয়ে ফেলেছি। তবে কি ছেলেবেলা অনেক দূরে ফেলে এসেছি?