সায়েদুর রহমান
আমরা যারা প্রবাসে আছি, তারা সত্যিকার অর্থেই ঈদের আনন্দ ও উৎসবটাকে তেমনভাবে উপভোগ করতে পারিনা। ঈদের দিন অনেকক্ষেত্রেই আমাদের মন খারাপ করার দিন। বিশেষ করে যারা স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-¯^জন, বন্ধু-বান্ধব দেশে ফেলে রেখে একাকী প্রবাসজীবন কাটাচ্ছেন, তাদের জন্য ঈদ সত্যিকার অর্থেই এক বিষাদময় কাব্য। আমি আমার দীর্ঘ প্রবাসজীবনে এমন অনেককে দেখেছি যারা ঈদের দিন ইচ্ছে করে কাজ করেন। অনেক সময় প্রশ্ন করেছি, ‘ভাই আজকে তো আপনার ছুটি ছিল, কাজে এসেছেন কেন?’ বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উত্তরটি এমন ছিল- ‘ভাই, ঈদের দিন ঘরে বসে থাকতে খারাপ লাগে। কাজ করলে তাও সময়টা কেটে যায়।’ অর্থাৎ দুঃখকে ভুলে থাকার জন্য আমরা কাজ করি, প্রিয়জনকে ভুলে থাকার জন্য আমরা কাজ করি। এছাড়া প্রবাসীদের জন্য আরেকটি বিড়ম্বনার দিক হল- একই দিনে বিশ্বের সব মুসলিম দেশে ঈদ না হওয়া। দেখা যায় মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে ঈদ যেদিন পালন করা হয়, ঠিক তার পরের দিন ঈদ পালন করা হয় বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ ভারতীয় উপমহাদেশে। অনেক সময় এসব দেশে দুইদিন পরও ঈদ পালন করতে দেখা যায়।
এবার আসি করোনা পরবর্তী ইউরোপে এবারের ঈদুল ফিতরের কথায়। যদিও বর্তমানে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা অধিকাংশ ইউরোপীয় দেশে কমে এসেছে, তা সত্তে¡ও ইউরোপের অধিকাংশ দেশগুলো হতে লকডাউন পুরোপুরি উঠিয়ে নেয়া হয়নি। কিছুক্ষেত্রে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। তাই সৌদী আরবের মত ইউরোপের মুসলিম ভাইদের ঘরে বসেই ঈদের নামাজ আদায় করতে হবে। প্রবাসে যারা পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন তারা অনাম্বড়ভাবে ঘরে থেকেই এবার ঈদ উদযাপন করবেন। অন্যান্য ঈদের সময়ের মত জমায়েতকে সকলেই পরিহার করছেন। স্বাভাবিক সময়ে ঈদের পরে ‘ঈদ পূর্নমিলনী’ অনুষ্ঠান আয়োজন করে প্রবাসী বাংলাদেশীরা একত্রিত হোন। এবার নিশ্চিতভাবে তাও বাদ যাবে। তারপরও প্রত্যাশা করি, ঈদুল ফিতর সবার জীবনে বয়ে আনুক আনন্দের বার্তা, সবার জীবন হয়ে উঠুক কল্যাণময়। সবাইকে ঈদ মুবারক।
লেখক: অষ্ট্রিয়া প্রবাসী বাংলাদেশী।