শাহরিয়ার আদনান শান্তনু
ছবির এই মানুষটির সাথে আপনাদের কি পরিচয় আছে? আমাদের কিশোরকালের সময়টায় এই মানুষটির জন্য অপেক্ষায় থাকতাম। কারণ, তিনি এলে আমাদের ডাব, নারিকেল খাওয়া হতো। এই মানুষকে ডাকা হতো ‘গাছি’। আগে চট্টগ্রাম শহরে বাসার সামনের বাগানে নারিকেল, সুপারি, আম, কাঁঠাল ও লিচু গাছ ছিল। কিন্তু এখন আর তেমনটি নেই। বাগানের জায়গায় আধুনিক ডিজাইনে বিশাল অট্টালিকা গড়ে উঠেছে।

যাক, এখন ‘গাছি’র কথা বলি। গাছি দুই / তিন মাস পরপর আসতো। গাছ পরিষ্কার করে ডাব- নারিকেল ইত্যাদি পেরে দিত। তার কাছে একটা হিসাব থাকতো, গাছের ফল কখন কী অবস্থায় থাকবে। সেই হিসাব অনুযায়ী গাছি আসতো। আবার কোন গাছের বেশি বয়স হয়েছে, কোন গাছ ঝড় হলে পরে যাবে রাস্তায় তা অনুমান করে সেই গাছ কেটে ফেলার পরামর্শ দিত গাছি।
গাছির পারিশ্রমিক ছিল বেশ মজার। অনেকটা বিনিময় প্রথার মত। একটি গাছের কিছু ফলের অংশ নিলে, টাকা নিত না। আবার এমনও হয়েছে ফল-টাকা দুটোই নিত। আবার গাছি কিন্তু মৌসুমি ফল গাছগুলো নিয়ম মেনে পরিস্কার করে দিত, যাতে ফলন ভালো হয়।
তো, এই গাছি এখন শহর থেকে উধাও। দেখা যায় না কোথাও। তবে গ্রামে কদাচিত দেখা মেলে।ক’দিন পর হয়তো গ্রামে আর একজন গাছিও দেখা যাবে না।
আমাদের কিশোর বেলাকার সেই ‘ গাছি’ হারিয়ে যাচ্ছে। কারণ, আমরা গাছ কেটে ফেলছি। পরিবেশের ক্ষতি করছি। সময়ের বিবর্তনে লুপ্ত পেশায় যুক্ত হয়েছে এই ‘গাছি’।