নিউজ ডেস্ক: চিকিৎসা দিতে গিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৮৭ জন চিকিৎসক, ৩৩ জন নার্স ও ৪৬ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে থেকে ৪২ জন চিকিৎসক, ৩ জন নার্স ও ২ জন অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী সুস্থ হয়েছেন। শুধু তাই নয়, সুস্থ হয়ে তারা আবার যোগ দিয়েছেন কাজে। কাজে যোগদানের সময় তাদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (১৬ মে) হাসপাতালে প্রবেশ করার সময় সুস্থ হওয়ায় স্বাস্থ্যকর্মীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া। অন্যান্য চিকিৎসকরা করতালি দিয়ে তাদের স্বাগত জানান।
এপ্রিলের শেষের দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বিপুল সংখ্যক কর্মীর করোনা আক্রান্তের ঘটনায় প্যাথলজি বিভাগ, রেডিওলজি বিভাগ, পেডিয়াট্রিক বিভাগ আংশিক এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) পুরোটাই লকডাউন করা হয়। ব্যাহত হয় চিকিৎসা সেবা।
হাসপাতালটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, করোনা আক্রান্ত মধ্য থেকে যারা সুস্থ হয়েছেন তারা আজ কাজে যোগ দিলেন। তারা আবার চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত হবেন। তারা তাদের মনোবল ধরে রেখে আবারও কাজে যোগ দিয়েছেন তাই তাদের স্বাগত জানিয়েছি। সারাদেশের অন্যান্য চিকিৎসকরাও তাদের দেখে অনুপ্রাণিত হবেন আশা করছি।
ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, জেনারেল হাসপাতাল হিসেবেই সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ, রেডিওলজি বিভাগ, পেডিয়াট্রিক বিভাগ আংশিক এবং নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) পুরোটাই লকডাউন করা হয়েছিল, এখন সেগুলো পুনরায় চালু করা হয়েছে।
৮ মাসের প্রেগন্যান্সি নিয়েই কাজ করে যাচ্ছিলেন সিনিয়ার স্টাফ নার্স জেরিন লাকি। এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখ করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে তার। নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে জেরিন লাকি বলেন, যখন রিপোর্ট পেলাম আমি করোনা আক্রান্ত তখন স্বাভাবিকভাবেই একটু ভয় পেয়েছিলাম। আর আমি যেহেতু গর্ভবতী তাই বাচ্চাকে নিয়ে টেনশনে পড়ে যাই। পরে অবশ্য জানতে পারলাম গর্ভের সন্তানের কোনও ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অবশেষে আমি করোনা জয় করে সুস্থ হয়ে উঠেছি, আজ আবার কাজে ফিরলাম। আসলে মনে সাহস রাখলে আমরা করোনাকে জয় করতে পারবো।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর বাসায় চিকিৎসা নিয়েছিলেন হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক ও ফ্লু কর্নারের ইনচার্জ ডা. মো. আল আমিন। তিনি বলেন, বাসায় চিকিৎসা নেওয়ার প্রথম শর্ত আইসোলেশন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। তা না হলে তারাও আক্রান্ত হবেন। বেশি বেশি গরম পানি খেতে হবে, পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। ভিটামিন সি, ডি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। মনে সাহস রাখতে হবে, করোনা মানেই মৃত্যু নয়। তবে কারও যদি বেশি মাত্রায় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তাহলে তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে।
ডা. মো. আল আমিন বলেন, এই মুহূর্তে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। বাইরে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। সচেতনতার কোনও বিকল্প নেই।
সহকারী অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন খান বলেন, চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমি আক্রান্ত হয়েছি। মনের শক্তি ধরে রাখতে হবে। কষ্ট করে ১৪ দিন আইসোলেশন থাকতে হবে। তবে কারও যদি বেশি সমস্যা হয়, তাহলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়ম মেনে চললে বাসায় সুস্থ হওয়া সম্ভব।
হাসপাতালের প্যাথলজিতে কাজ করতে করোনায় আক্রান্ত হন প্যাথলোজিস্ট মো. জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, ল্যাবের স্যাম্পল কালেকশনের কাজ করতাম আমি। যখন সবার টেস্ট করা হলো তখন আমারও করোনা ধরা পড়ে। বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়েছিলাম। আজ সুস্থ হয়ে কাজে ফিরলাম। ভালো লাগছে যে আমি আবার মানুষের সেবায় নিয়োজিত হতে পারলাম।