সায়েদুর রহমান
একটি অস্থির সময় পার করছে বিশ্ববাসী। বাংলাদেশের মানুষও তার বাইরে নয়। করোনার এ মহামারীর সময় মানুষ নিশ্চিতভাবেই তার মনুষত্ব্য বিসর্জন দিয়েছে। তা নাহলে মৃত মানুষের লাশ রাস্তায় পড়ে থাকতে পারেনা, অসুস্থ মানুষকে মধ্যরাতে কেউ ঘর থেকে বের করে দিতে পারেনা। একমাসের বাসা ভাড়া না দিতে পারার কারণে কাউকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয় কীভাবে? সেই দিতে পারে যার মনুষত্ব্যের মৃত্যু ঘটেছে। ছেলে-মেয়ে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী ও পরিচিতজন সবাই আজ এ দুর্যোগে হয়ে গেছে অমানবিক। তাই সৎকারের জন্য লাশ গ্রহণে আজ সকলে অপারগতা জানাচ্ছে, সকলেই সরে যাচ্ছে দূরে। আমি ঠিক জানিনা এমন অমানবিক পৃথিবীর মানুষ শেষবার হয়েছিল কখন, কবে? কখন, কবে মানুষ রক্তের বন্ধনকে অস্বীকার করেছিল এমন করে?
জাতীয় দুর্যোগ ও মহামারীর এ সময় যখন আমাদের সকলের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের গরীব, অভাবী ও প্রান্তিক মানুষের পাশে দাড়ানোর কথা, তখন আমরা দেখতে পাচ্ছি ত্রাণ সামগ্রী লুটের মহোৎসবে যোগ দিয়েছে আমাদের তথাকথিত জনপ্রতিনিধিরা। আমরা দেখতে পাচ্ছি সরকারের ঘোষিত প্রণোদনার টাকার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন দেশের বিত্তশালী ব্যবসায়ী সমাজ। অনেক ক্ষেত্রে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা প্রদানে গাফিলতির অভিযোগ উঠছে, রয়ে গেছে চিকিৎসা সামগ্রীর অপ্রতুলতার অভিযোগ।
আমার ধারণা করোনার এ দুর্ভোগের পরও বছর শেষে আয় এবং সম্পদ দুটোই বাড়বে সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম নেয়া দেশের ব্যবসায়ী লুটেরা গোষ্ঠীর। বছর শেষে মন্ত্রী, এমপি আর আমলাদের সম্পদের পাহাড় জমবে বিদেশের মাটিতে। দেশের ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠী আবারো ধর্মের নামে ধ্বংসের লীলাখেলায় মেতে উঠবে। ধর্ম ব্যবসায়ীরা পুনরায় গেয়ে যাবে বিভক্তি ও হানাহানির গান। ঘৃণার বিষ ছড়াবে, মানুষকে হত্যার কথা বলবে, বলবে দেশ থেকে সংখ্যালঘু ও বিধর্মীদের উচ্ছেদ ও বিতাড়নের কথা। দেশে সংখ্যালঘুদের জায়গা-জমি আবারো জবর-দখল হবে, আবারো হবে তাদের স্বপ্ন চুরি। দেশের গরীব মানুষ আরো গরীব হবে, বাড়বে নগরে ছিন্নমূল, অভাবী ও নিঃ¯^ মানুষের ভীড়।
অথচ আমাদের দেখার কথা ছিল এর উল্টোচিত্র। করোনার এ মহামারী হতে আমাদের আত্ম-সংযম ও আত্মত্যাগের শিক্ষা নেবার কথা ছিল। আমাদের দীক্ষিত হবার কথা ছিল সততা ও মিতব্যয়িতার। আমাদের জীবন আত্মশুদ্ধির পারদে মাপা উচিত ছিল। এ জীবন আসলেই কিছু নয়, যেকোন মূহুর্তে নিভে যেতে পারে জীবনের বাতি। তাই ভোগ-বিলাস ও অঢেল সম্পদের চিন্তা বাদ দিয়ে আমাদের আত্ম-মানবতার সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করা উচিত ছিল।
যদি আমরা করোনার এ মহামারী হতে শিক্ষা নিয়ে তা করতে পারি তবে হয়তো বর্তমান মানবসভ্যতা টিকে থাকবে আরো হাজার বছর। তা নাহলে হয়তো অচিরেই ধ্বংস হয়ে যাবে আমাদের বর্তমান মানবসভ্যতা এবং আমরা ডাইনোসরদের মত বিলীন হয়ে যাব একেবারে।
লেখক: অষ্ট্রিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি।