শাহরিয়ার আদনান শান্তনু
সাজেদ ভাইকে নিয়ে এই লেখাটা কীভাবে শুরু করবো চিন্তায় পড়ে যাই। একজন শিল্পী তো বটেই। তবে বিচিত্রিতা, ভিন্নতা, বহুমাত্রিক রূপ আছে তাঁর মধ্যে। প্রথমত তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে ১ নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন মিরসরাই অঞ্চলে।
তিসি মূলত ১৯৭২সাল থেকেই সংগীত নিয়ে কাজ শুরু করেন। মমতাজুল হক লুলু ও সুব্রত বড়ুয়া রনিকে সাথে নিয়ে গড়ে তোলেন সংগীতের দল ‘সুরেলা’। পরে ১৯৭৩ সালের শেষের দিকে লুলু, রনি, রুডি গনসালভেস, তাজুল ইমাম, আহমেদ নেওয়াজ, লরেঞ্জো, রউফ, নকীব খান, তপন চৌধুরী – এঁদেরকে নিয়ে নতুন করে সংগীতের দল গড়েন। যার নাম হলো – SOULS…. বাংলাদেশের ব্যাণ্ড সংগীতের ইতিহাসে এই দলটি অবিস্মরণীয় এক নাম।

সাজেদ ভাইয়ের সাথে আলাপচারিতায় অনেক অজানা তথ্য জানার সুযোগ হয়। এখানে একটি তথ্য না জানালেই নয়… SOULS এর প্রথম ম্যানেজার ছিলেন প্রয়াত রণজিৎ কুমার বিশ্বাস ( সাবেক সচিব, লেখক) ।
চূড়ান্ত বোহেমিয়ান শিল্পী সাজেদ ভাই। চূড়ান্ত চূড়া আকস্মিক সব ছেড়ে চলে গেলেন ডেনমার্ক। ১৯৮০- তে। ডেনমার্ক মিউজিক একাডেমি থেকে ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিক বিষয়ে উচ্চতর পড়ার জন্য ভর্তি হন। ১৯৮১ সালে শিক্ষা গ্রহণ করে চলে যান সুইডেন।
পরে সুইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃ-তত্ত্ব বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮২ সালে সুইডেনে world music team – UPPSALA য় অংশগ্রহণ করেন। মূলত এই পর্যায়ে এসে সাজেদ উল আলম নিজেকে অন্যভাবে গড়ে তুলতে প্রয়াসী হন। এই সময় তিনি ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকে অনুরক্ত হয়ে পড়েন। তিনি সেতার শেখা শুরু করেন। ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পযন্ত ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিখ্যাত ওস্তাদজীর কাছ থেকে সেতার ও তবলা বাজানোর প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৮৯ সাল থেকে তিনি সেতারের উপর কনসার্ট করেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। ১৯৯২ সালে এসে শিল্পী সাজেদ নিজেকে আবারও ভাঙ্গলেন।
এরপর তিনি রক ও জ্যাজ মিউজিকের প্রতি অনুরক্ত হলেন। ২০০০ সালে সাজেদ চলে যান স্পেন। এই দেশে এসে তিনি বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে রীতিমত গবেষণা করেন। প্রাচ্য ও প্রতিচ্যের সংমিশ্রণে ফিউশন ধর্মী মিউজিক সৃষ্টি ও পরিবেশনে মনোনিবেশ করেন। ২০১০ সালে দুটি ভিন্ন ঘরানার সংগীত দল গড়লেন।
RAGA-TALA dance and music …..
LUNAR SOUL ……
২০১৫ সালে Kirwani Orchestra নামে আরেকটি দল গঠন করেন। এই দলটি মূলতঃ ইষ্টার্ন ও ওয়েষ্টার্ন বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের ফিউশন বাজনা বাজিয়ে থাকে। ২০১৫ সালে এই দল নিয়ে সাজেদ ভাই বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে অনুষ্ঠান করেন।
ব্যক্তিগতভাবে সাজেদ ভাইয়ের সাথে আলাপ হয় ২০১৫ সালে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম আসেন। তবে কোন দল নেই সাথে। ছিলো কেবল স্ত্রী Dulce….
সাজেদ উল আলম চট্টগ্রামে। কিন্তু কোন অনুষ্ঠান হবে না… তা কি হয়? সুব্রত বড়ুয়া রনির উদ্যোগে আহমেদ নেওয়াজ ভাই ও আমি – এই তিনজনে মিলে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। এই আয়োজনে সাজেদ ভাই গান করলেন সত্তর ও আশির দশকের জনপ্রিয় পপ গান। SOULS এর জনপ্রিয় গানও করেন সাজেদ ভাই।
থিয়েটার ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম মিলনায়তনে মোহিত উল আলমের উদ্যোগে সেতার বাদনের অনুষ্ঠান হয়। শিল্পী সাজেদ ভাই গিটার নিয়ে সেই ‘সুরেলা’ গড়লেন। তারপর কত বহুমাত্রিকতায় নিজেকে মেলে ধরলেন।
সাজেদ ভাইয়ের স্ত্রী Dulce নিজে একজন চিত্রশিল্পী। এই দুইজনের চমৎকার বন্ধন শিল্প ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। সুস্থ, সুন্দর, নিরাপদ ও সুর নিয়ে থাকুন সাজেদ ভাই।
প্রাবন্ধিক, কলাম লেখক