নিউজ ডেস্ক: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দরিদ্রদের জন্যে নির্ধারিত ওএমএস কার্ডে নিজের স্ত্রী, মেয়েসহ আত্মীয় স্বজনের নাম তালিকাভুক্ত করায় জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক শাহ আলমের ওএমএস ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে।
বুধবার (১৩ মে) বিকেলে জেলা ওএমএস কমিটির সভায় ডিলারশিপ বাতিলে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে ৮৪ ধনী ব্যক্তি ও দ্বৈত নাম, এক ঘরের দুইজনের নাম, ঠিকানা খুঁজে না পাওয়া এমন আরও সাতজনসহ মোট ৯১ জনের তালিকাও বাদ দেওয়া হয়েছে বলে ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ওএমএস কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌঁলা খান।
খোঁজ নিয়ে যানাযায়, জেলা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলমের বিরুদ্ধে তাঁর স্ত্রী, কন্যাসহ পরিবারের ১২ সদস্যের নাম ওএমএস চাল ক্রয়ের তালিকায় রাখার অভিযোগ উঠে। এছাড়া একাধিক ওয়ার্ডে কাউন্সিলরদের স্বজন ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম ছিল একাধিক তালিকায়। এরপর নরেচরে বসে স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টরা।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুবীর নাথ চৌধুরী ডিলারশিপ ও স্বচ্ছলদের নামের তালিকা বাতিল হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, শাহ আলম ওএমএসের ডিলার হওয়া স্বত্বেও স্ত্রী-কন্যাসহ এক ডজন স্বজনের জনের নাম তালিকায় উঠে আসে। এ ঘটনারপর পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ লুৎফুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওএমএস এর ডিলার শাহ আলমকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে সন্তোষজনক জবাব দিতে পারায় শাহ আলমের ওএমএস ডিলারশিপ বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তালিকা থেকে ৯১ জনের নামও বাদ দেয়া হয়েছে।
এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাবে শাহ আলম তালিকায় তার স্ত্রীর নাম থাকার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। তবে অন্যান্য স্বজনেরা গরীব বলে তিনি উল্লেখ করেন। পাশাপাশি স্থানীয় সংশ্লিষ্টরা এসব নাম তালিকায় উঠিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
এ ব্যপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, প্রতিটি তালিকা অধিকতর যাচাই বাছাই করে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। যাচাই বাছাই কালে কোথাও অচ্ছতা পাওয়া মাত্র আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। স্বচ্ছতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে কাউকে বিন্দু মাত্র কাউকে ছাড়দেয়া হবেনা।
জানা যায়, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার ও জেলা আওয়ামী লীগ শিল্প-বানিজ্য সম্পাদক আলহাজ্ব মো. শাহআলমের বিরুদ্ধে ভিক্ষুক, ভবঘুরে, সাধারণ শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, পরিবহন শ্রমিক, চায়ের দোকানদার, হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকজনের বদলে নিজের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের নাম বিশেষ ওএমএস তালিকায় ওঠানোর বিষয়টি বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
এরপরই তদন্তে নেমে প্রশাসন তার স্ত্রী-সন্তানসহ ১৩ জনের নাম পায় তালিকায়। তারা হচ্ছে শাহআলমের স্ত্রী মোছাম্মৎ মমতাজ আলম, মেয়ে আফরোজা, ডিলারের কাতার প্রবাসী শ্যালকের স্ত্রী মোছাম্মৎ জান্নাতুল ইসলাম, আরেক শ্যালকের স্ত্রী আছমা ইসলাম, বোন শামসুন্নাহার, মালয়েশিয়া প্রবাসী ভাতিজা নাছির, ভাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া পরিবহন শ্রমিক সমিতির সভাপতি মো. সেলিম, আরেক ভাই মো. আলমগীর, শ্যালক মো. তাজুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম, বোনের দেবর আতাউর মিয়া, লুৎফুর মিয়া ও মাহবুব মিয়া।
ওয়ার্ড পর্যায়ে কাউন্সিলরের নেতৃত্বে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর,সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী একজন,শিক্ষক প্রতিনিধি, রেডক্রিসেন্ট, এনজিও, ইমাম,পুরোহিত ও গণমাধ্যম প্রতিনিধির সমন্বয়ে গঠিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এই তালিকা প্রণয়ন করবে বলে নির্দেশনা থাকলেও আওয়ামী লীগ নেতা শাহআলম নিজের কর্তৃত্বে তালিকা করে তার পরিবারের লোকজনের নাম ঢুকিয়ে দেন বলে অভিযোগ।
এ নিয়ে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে খবর প্রচারিত হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তোলপাড় শুরু হয়। বিভিন্ন মহল থেকে নিন্দার ঝড় ওঠে। নদী রক্ষা সংগঠন নোঙর এর জেলা সমন্বয়ক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শামীম আহমেদ তার ফেইসবুকে লেখেন, আমি লজ্জিত এমন মানুষ আমাদের ব্যবসায়ী নেতা, রেডক্রিসেন্ট’র মতো সংস্থার নেতা, যে আদর্শকে বুকে লালন-পালন করি সে রাজনৈতিক দলের নেতা! আমি লজ্জিত, আমি মর্মাহত….।
এ ব্যাপারে শাহআলম বলেন, এ ব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিলর বলতে পারবেন। তারা যাচাই-বাছাই করে তালিকা চূড়ান্ত করেছে। তা ছাড়া আমি কোনো কার্ড বণ্টন করিনি। আমি হলাম কেবল ডিলার। ডিলার কোনো কার্ড দিতে পারে না।”
এ ব্যাপারে পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকবুল হোসেন বলেন, তার ওয়ার্ডের কাউতলী এলাকার ওএমএস এর তালিকা তৈরি করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা শাহআলমের বড় ভাই সাঈদুর রহমান। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তালিকাটি তিনি যাচাই-বাছাই না করে পৌরসভায় জমা দিয়েছেন। এটি তার ভুল হয়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।