মারজানা ফেরদৌস রুবা
নিশ্চুপ পৃথিবীটা আবার কর্মচাঞ্চল্যে জেগে উঠুক – মনে প্রাণে চাই। আর তো ভালো লাগছে না খোদা। কর্মহীন জীবন যে বড়ই কষ্টের। আমরা মানুষেরা পৃথিবীটাকে অসুস্থ বানিয়ে ফেলেছিলাম। আমাদের দুর্নিবার আকাঙ্ক্ষায় পৃথিবী তার স্বাভাবিক রূপ হারাতে বসেছিল। প্রকৃতি রুগ্ন হয়ে গিয়েছিল। আমরা ভুলেই গিয়েছিলাম পৃথিবীতে আরো অনেক অনেক প্রাণীর অধিকার আছে।
ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুজীব করোনা ভাইরাস আমাদের গৃহবন্দী করে প্রকৃতিকে জেগে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছে। হাসি ফুটেছে প্রাকৃতিক জগতে। আমরা অনুভব করছি আমরা এভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাভাবিক থাকতে পারবো না। সাময়িক থাকা যায় যদিও এবং থাকছিও। কিন্তু কতোদিন? মানুষ তো সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়েই মানুষকে চলতে হয়।
জানি, দুঃসময় দীর্ঘদিন থাকেনা। করোনাকালও থাকবে না, কেটে যাবে একদিন। কিন্তু সে স্বাভাবিক দিনটা যে কবে আসবে সেই অপেক্ষাতেই প্রহর কাটছে।
ভাবছি, রমজান মাস চলছে । রমজানের পরই ঈদ। এবারের ঈদটিও কী তবে ঘরে বসেই কাটবে যার যার মতো করে, অসামাজিক নিয়মে? অথচ ঈদ শুধু একটি ধর্মীয় উৎসবই না, পাশাপাশি একটি সামাজিক উৎসবও।
মাসব্যাপী রমজানের প্রার্থনা কি আমাদের করোনামুক্ত পৃথিবী ফিরিয়ে দেবে না? পাপ আমরা আসলে অনেক বেশিই করে ফেলেছিলাম। আমাদের সীমালঙ্ঘন ঘটেছিল মারাত্মকভাবে। করোনাকাল কি আমাদের মধ্যে বোধের জাগরণ ঘটাতে পেরেছে? বিচ্ছিন্ন হয়ে টিকে থাকা যে সম্ভবপর নয়, সেটা কি আমরা অনুভব করতে পারছি?
আমরা একে অন্যের পরিপূরক, চাইলেই একা একা জীবন যাপন করা যায়না। বন্দী থেকে থেকে আমাদের নাভিশ্বাস উঠছে। আমরা মুক্তির অপেক্ষায় হাহাকার করছি। আমাদের মুক্ত জীবন আমাদের মধ্যে যে বেপরোয়া গতি এনে দিয়েছিল আমরা সেটা থেকে বেরিয়ে এসেছি। এবার অঙ্গীকারাবদ্ধ হই পরষ্পর পরষ্পরের প্রতি সহযোগী মনোভাবাপন্ন হয়েই পথ চলবো।
আমাদের সহযোগিতাপূর্ণ আচরণ প্রকৃতির জন্যও আশীর্বাদ হবে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য রাখতে, পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারস্পরিক সহযোগিতাই একমাত্র পথ। বিশ্বাস করি, দ্রুতই মানুষের বোধের পূর্ণতা আসবে, সবার মাঝে ইতিবাচক বোধের জাগরণ ঘটবে। পৃথিবী আবার পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণভাবে জীবন যাপন করবে।