শিউ মতিন
আজ মানুষ যে পরিবর্তন ও নাজুক পরিস্থিতিতে আছে তার জন্য নিশ্চয়ই মানুষ প্রস্তুত ছিলনা। সভ্যতার চরম শিখরে যে, সে কি ভাবতে পারে, কোন কিছুই তার আয়ত্তে থাকবেনা! আমরা মানুষেরা বুঝতেই পারিনা আমাদের মন কী বিচিত্র, আমাদের মাঝেই লুকিয়ে আছে অমানবিক আচরণ। ঘাপটি মেরে আছে, সুযোগ পেলেই কিলবিল করে বেরিয়ে আসে ছোবল দিতে। আবার অসম্ভব ভাল দিকটি লতার মতো লতিয়ে উঠে সবুজে ভরে দিয়েছে চারদিক।
করোনার এই সময়ে আমরা দেখি মাকে জঙ্গলে ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে সন্তান, বাবার লাশ দাফনে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে সন্তান, অসুস্থ প্রতিবেশীর সংস্পর্শে আসতে হবে ভেবে দরজা খুলছেনা, পাড়া-প্রতিবেশীরা জোট বাঁধছে গোরস্থানে কবর দিতে দেবেনা, সারারাত ছেলের লাশ নিয়ে রাস্তায় বসেছিলেন মা, সিঁড়িতে স্বামীর লাশ নিয়ে দুই শিশু কন্যাসহ স্ত্রী সারারাত অপেক্ষা করেছেন ভোরের। আরও কতো নেতিবাচক ঘটনা!
কিন্তু কী বিচিত্র এ-ই মানুষ। এ-র উলটোটাও তো দেখছি, পড়ছি।ছয়মাসের অন্তসত্ত্বা ডাক্তার মেয়েটি হাসপাতালে করোনা রোগীর সেবা করছে, দাফন কাফনের জন্য এগিয়ে এসেছে কোন এক বা একাধিক তরুণ, শ্বাশুড়ী স্বামী হাসপাতালে যেতে দেবেনা বলে চিঠি লিখে বাবার কাছে চলে এসেছে সদ্য বিবাহিতা মেয়েটি, গাড়ি করে ঘুরে ঘুরে খাবার বিতরণ করা মেয়েটি, ডিউটিরত ট্রাফিককে শরবত পাঠানো সেই খালাম্মা, এক ভিক্ষুক তার সব জমানো টাকা দিয়ে দিয়েছেন করোনা রোগীর সাহায্যে। আরও কতো কতো ইতিবাচক উদাহরণ।
মানুষ কী আশ্চর্য ধাতুতে গড়া! একদিকে মন্দ তো আরেকদিকে দ্বিগুণ ভালো।
কিন্তু প্রকৃতির সাথে আমরা যে অন্যায় করেছি এতোদিন প্রকৃতি তা ক্ষমা করবেনা কখনো। দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ।প্রকৃতিকে ছিঁড়ে খুড়ে মানুষের যে উল্লাস, তার প্রতিশোধ নিচ্ছে প্রকৃতি, খাঁচায় বন্দী মানুষ। চার দেওয়ালে ঘুরপাক খাচ্ছে… আহা স্বাধীনতা…। প্রকৃতি যেন নতুন রূপে, নতুন অবয়বে। বৃষ্টিস্নাত প্রকৃতি তার অপরূপ সৌন্দর্য্যে সোনালী আভায় উদ্ভাসিত…প্রকৃতি যেন ফিরে পেয়েছে তার স্বাধীনতা, চরম প্রতিশোধে সে চমকিত, হাসির হিল্লোলে ঝিকিমিকি, মানুষের দূর্দশায় প্রকৃতি দুঃখিত নয়, না হয় এমন গৃহত্যাগ করার মতো জোছনায় ভাসিয়ে দেয় চরাচর! বাতাস এমন হাস্নাহেনার সৌরভে মুখরিত করে চারদিক! এমন জোছনা…দিন ভ্রমে পাখি ডেকে উঠে।
আহা! আহারে! আর কত দূর। বৃক্ষ হয়ে উঠার! সমুদ্র আর পাহাড় হয়ে উঠার! সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠার!