শাহরিয়ার আদনান শান্তনু
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে বিজ্ঞজনেরা নানাভাবে গবেষণা করেছেন। আমার বড় বাবা শ্রী যোগেশ চন্দ্র সিংহ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথকে দেখেছেন একজন ধ্যানমগ্ন মনীষী রূপে। বড় বাবা ১৯৬৪ সালে লিখেছেন ‘ধ্যানী রবীন্দ্রনাথ’। ছোটবেলা থেকেই বইটির সাথে পরিচিত। কিন্তু পড়া হয়েছে আরও পরে। তবে – ‘ধ্যানী রবীন্দ্রনাথ’ বুঝতে অনেক সময় লেগেছে ।
রবীন্দ্রনাথকে তিনি আবিষ্কার করেছেন তাঁরই বিভিন্ন লেখার সূত্র ধরে । একজন ধ্যানমগ্ন মানুষ ধ্যান শেষে মানব চরিত্রের ভিন্ন ভিন্ন রূপ আবিষ্কার করেছেন – এবং তা তাঁর লেখনীতে আমাদের জানিয়েছেন। প্রথমে আমার প্রচণ্ড কৌতূহল ছিল – এই বইয়ের নাম কেন ‘ধ্যানী রবীন্দ্রনাথ’? মনে যখন এই প্রশ্ন – ততদিনে বড় বাবা পরপারে। ঐ সময়কালে এই বইটি ব্যাপক আলোচিত ও সমাদৃত হয়েছিল। এই বইয়ের কিছু কিছু অংশ তুলে ধরলাম –
পৃষ্ঠা-১২৯
”যখন আমি পাব তোমায়
নিখিল মাঝে,
সেই ক্ষণে হৃদয়ে পাব
হৃদয় রাজে” —-
কবির একমাত্র কামনা তাঁহার আমিকে নিঃশেষে ভস্মীভূত করিয়া , বৈষয়িক সীমার অতীতে নিঃস্বার্থ নিখিল কর্মে, সত্যের প্রকাশ অনুভব করিবেন। মানুষের সঙ্গে মিলনের মধ্য দিয়া সংসার কর্মের শতবিধ দ্বন্দ্ব বিরোধের মধ্যেও ভূমার প্রকাশকে অব্যাহত রাখিতে তিনি ছিলেন নিত্য প্রয়াসী।

পৃষ্ঠা – ৩৪১
”মরণ রে তুঁ হুঁ মম শ্যাম সমান ,
তাপ বিমোচন করুণ কোর তব
মৃত্যু অমৃত করে দান” —-
এই একটি কথা কত ভঙ্গীতে কত লেখায়, কত আলাপে ও আলোচনায় , বিভিন্ন ক্ষেত্রে কত মুখে মুখে ধ্বনিত হইয়াছে। কিন্তু ইহার চিরন্তন নবীনতায় ম্লানতা আসে নাই। বৈদান্তিকভাবে সদা অভিষিক্ত কবি মনবুদ্ধি চিত্তের সামগ্রিক একাগ্রতা সহকারে এই তত্ত্বের সম্মুখীন হইয়াছেন , প্রাণ-ধর্মের নিগুঢ় শক্তির বিশাল ঐশ্বর্য লইয়া ।
সবচেয়ে মজার বিষয় এই যে, বড় বাবা রবীন্দ্রনাথকে এই বিশ্ব চরাচরে একজন ধ্যানমগ্ন মনীষীরূপে আবিষ্কার করেছেন। বইটির ইতি টেনেছেন কবিগুরুর কবিতা দিয়ে – নিজের কোন লেখা দিয়ে নয়।
”কাঁটায় আমার অপরাধ আছে
দোষ নাই মোর ফুলে ;
কাঁটা ওগো প্রিয় থাক মোর কাছে
ফুল নিও তুমি তুলে।”
(পৃষ্ঠা – ৩৪৭)
ধ্যানী রবীন্দ্রনাথ
শ্রী যোগেশ চন্দ্র সিংহ
প্রকাশকাল –
১৯৬৪, ১২ মার্চ
প্রকাশনায় – সিগনেট লাইব্রেরী , আন্দরকিল্লা , চট্টগ্রাম ।
লেখক শাহরিয়ার আদনান শান্তনু
প্রাবন্ধিক,কলাম লেখক ।