অসীম সাহা
তোমরা অবরুদ্ধ কৃত্রিম কারাগারের ভেতর আমাকে বন্দি করে রেখেছো।
আমি জানি না, আমার কী অপরাধ।
অথচ আমাকে এই নিঃসঙ্গ, একাকী প্রহরে নিজের ছায়ার ভেতরে
নিজেকেই প্রতিবিম্বিত দেখে মনে হচ্ছে, এই কি আমি?
কই, এই মুখে তো কোনো অপরাধের চিহ্ন নেই,
এই বুক তো একবারের জন্যে
ভয়ের কাঁপুনিতে শির শির করে উঠছে না! তা হলে তোমরা আমাকে
এই অপাংক্তেয় কারাগারে বন্দি করে রেখেছো কেন?
আসলে তোমরা ইতিহাসের পাতায় চোখ উল্টে দেখোনি
তোমরা ঝাঁসীর রানি লক্ষ্মী বাঈয়ের কথা শোনোনি
ঘোড়ার পিঠে তলোয়ার হাতে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত
সুলতানা রাজিয়াকে তোমরা চেনো না;
অসুরবিনাশিনী দশভুজধারিণী শ্রীদুর্গার শক্তিকে
তোমরা নির্বোধ অজ্ঞতায় উপেক্ষা করেছো।
আমি এদের উত্তরাধিকার নিয়ে এই বাংলায় জন্মেছি
আমার রক্তে এক দুঃসাহসী রাজকুমারের রক্ত প্রবাহিত
আমার রক্তে দ্রাবিড়, মঙ্গোলীয় ও কৌম রক্তের ধারা;
তোমরা আমাকে বধ করবে,
তোমরা আমাকে এই বাংলার শেকড় থেকে উৎপাটিত করবে;
তোমরা আমাকে বৃন্তচ্যুত করে দিয়ে ফেলে দেবে অচেনা মাটিতে?
এতোটাই শক্তি ধরো তোমাদের কাপুরুষ বুকের পাঁজরে?
এতোটাই রক্তলোভী, ক্ষমতার লোভে মত্ত হিংস্র মীরজাফর!
আমাকে তোমরা ভয় দেখিও না
আমি এই মৃত্তিকার ভেতরে প্রবিষ্ট হয়ে আছি মৃত্তিকার প্রথম সন্তান
এদেশের তৃণমূল মানুষের গর্ভে আমি জন্ম নিই নিরবধিকাল
আমাকে ধ্বংস করে, এরকম কৌরবের জন্ম হয়নি বাংলার মাটিতে।
আমি সেই সাহসের সন্তান, নক্ষত্রের বুক থেকে অগ্নি সঞ্চয় করে
জন্ম নেয়া পিতার সাহস নিয়ে মুহ‚র্ত মুহ‚র্ত শুধু মহাশূন্য উথাল-পাথাল করে
বিদ্ধ করি অসুরের উদ্ধত বুকের পাঁজর।
আমাকে ধ্বংস করে, এরকম দুর্বৃত্তের জন্ম হয়নি পৃথিবীতে আজো!