সায়েদুর রহমান
আমরা যারা প্রবাসে আছি বিশেষ করে ইউরোপে করোনা ভাইরাস তাদের জন্য নতুন অভিজ্ঞতার দ্বার খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে যারা ইউরোপ বা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হয়ে আসেন তারা প্রায় সকলের লক্ষ্য থাকে এসব দেশে কাজ করে নিজের, পরিবার এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো। সেজন্য ইউরোপে এমন অনেক বাংলাদেশীকে পাওয়া যায় যারা একটি দিনের জন্য ঘরে বসে থাকেননি। দিনে ১২/১৪ ঘন্টা কাজ করেন এমন মানুষ আমি প্রবাস জীবনে অনেক দেখেছি। কাজে যাওয়া-আসা পথসহ দিনে ৪/৫ ঘন্টা ঘুমান, সাতদিনের সাতদিনই কাজ করেন এমন মানুষের সাথেও এ দীর্ঘ প্রবাস জীবনে পরিচয় ঘটেছে।কিন্তু করোনা’র এ দুর্যোগকাল তাদের জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতার রসদ নিয়ে হাজির হয়েছে। তারা বন্দি বা ঘরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন। আমি যেখানে থাকি সে অষ্ট্রিয়াতে প্রায় ৯৫% লোকজন লকডাউনের বিধি-নিষেধ মেনে চলেছেন। বাঙ্গালীদের ক্ষেত্রে এ হার নিশ্চিত ভাবে ৯৯.৯৯% হবে। আমরা যারা প্রবাসে আছি তারা প্রায় ৯০ ভাগ মানুষ এসব দেশের আইন-কানুন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলার চেষ্টা করি। আমরা আমাদের কাজের স্থানে শতভাগ সততার সহিত কাজ সম্পাদন করার চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের সুনামের কথা বলে শেষ করা যাবে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিষ্ঠানের চাবি বাংলাদেশের লোকজনের হাতে থাকে কেননা এসব দেশের লোকজন বিশ্বাস করে বাঙ্গালী আর যাই করুক চুরি করবে না।
অষ্ট্রিয়াতে গতকাল হতে লকডাউন উঠিয়ে নিয়েছে। অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দিয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীরা লকডাউনের সময় হোম স্কুল বা অনলাইনের মাধ্যমে তাদের স্কুলের সিলেবাস ধারাবাহিক ভাবে অব্যাহত রেখেছেন। মে মাসের ৪ তারিখে এখানকার Kindergarten ও Volksschule( প্রাথমিক বিদ্যালয়) খুলে যাবে। Hauptschule বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৮ তারিখে খুলবে। অন্যান্য স্কুল, পেশাভিক্তিক বিভিন্ন স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয় আগামী মাসের প্রথম দিকে খুলে দেবে। অধিকাংশ বাঙ্গালী এখানে হোটেল বা রেষ্টুরেন্টে কাজ করে। আশা করা যায় তারা সকলে ১৫ তারিখের মধ্যে কাজে যোগদান করিবে। ইতালী, স্পেনসহ ইউরোপের প্রায় সব দেশ এ মাসের মাঝামাঝি তাদের লকডাউন উঠিয়ে নেবার চিন্তা করছে। ইউরোপের দুটি দেশ সুইডেন ও ইউক্রেন কিছু বিধি-নিষেধ ছাড়া আনুষ্ঠানিক লকডাউন ঘোষনা করেনি। দেশ দুটিতে করোনার এ মহাদুর্যোগেও জনজীবন মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। এছাড়া রাশিয়া এবং যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে লকডাউনের সময়সীমা নিশ্চিতভাবেই বৃদ্ধি পাবে।
লকডাউন উঠে গেলেও সমগ্র ইউরোপে কিছু বিধি-নিষেধ বলবৎ থাকবে। যেমন সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা, দশজনের বেশী লোক একত্রে জমায়েত না হওয়া, ধর্মীয় প্রার্থনালয় বন্ধ রাখা, বাস-ট্রাম ও ট্রেনে বাধ্যতামূলেক মাস্ক পরিধান করা, স্কুল সমুহে কম জমায়েত এবং বাধ্যতামূলেক ভাবে ক্লাসরুমে থাকা ও মাস্ক পরিধান করা। আশা করা যায় এসব বিধি-নিষেধ পালনের মাধ্যমে ইউরোপসহ সমগ্র বিশ্ব হতে আমরা করোনা ভাইরাসকে বিতারিত করতে পারবো। তবে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য শংকার বিষয় হল সমগ্র বিশ্ব জুড়ে পর্যটন ব্যবসার ধস। সেক্ষেত্রে হয়তো অনেক প্রবাসীকে কর্মহীন থাকতে হবে যা ডকুমেন্টহীন প্রবাসী এবং ইতালী, স্পেন, পর্তুগাল ও গ্রীসে বসবাসরত বাঙ্গালীর জীবনে নিশ্চিতভাবে বিপর্যয় ডেকে আনবে। কেননা ঐসব দেশগুলোতে সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা তেমন শক্তিশালী নয়। তারপরও প্রক্যাশা করি, করোনার বিরুদ্ধে এ যুদ্ধে মানবজাতি সহসাই জয়লাভ করবে।
লেখক: সায়েদুর রহমান, ভিয়েনা, অষ্ট্রিয়া প্রবাসী।