নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষকে সুরক্ষিত রেখে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা চলছে। এজন্য জেলাভিত্তিক ক্ষুদ্রশিল্পসহ কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার ব্যবস্থা হচ্ছে। সেইসাথে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ানো হচ্ছে বলে তিনি জানান।
চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আজ (সোমবার) সকালে রংপুর বিভাগের আট জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে আমরা সতর্কমূলক ব্যবস্থা নিয়েছি বলেই সবাই অন্য দেশ থেকে ভালো আছি। এখন দেশের অর্থনীতির চাকাও চালু রাখতে হবে। এ জন্য সীমিত আকারে ব্যবসা-বাণিজ্য ও অফিস-আদালত খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে সারা বিশ্বের অর্থনীতি থমকে দাঁড়িয়েছে। এর প্রভাবে দেশের মানুষ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুসরণ করে সব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী যোগ করেন, ‘জেলাভিত্তিক ক্ষুদ্র শিল্পগুলো চালু করার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ঋণের সুদ দুই মাসের জন্য স্থগিত। মানুষ যেন ব্যবসা বাণিজ্য সচল রাখতে পারে সেজন্য সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। রেলও সীমিত আকারে চালু করা হয়েছে, পণ্য পরিবহনের জন্য। বেশি লোক সমাগম না হয় সেভাবে অনেক কিছু চালু করা হচ্ছে। ডিম দুধ কতটা উৎপাদন হচ্ছে সেটাও আমরা দেখছি। কেউ কেউ অভিমান করে দুধ ফেলে দিচ্ছেন। সেটা না করে অল্প দামে বিক্রি করে দিলেও তো কেউ খেতে পারল, আবার আপনারও কিছুটা হলেও লাভ হলো।’
শেখ হাসিনা বলেছেন, এরইমধ্যে আমরা ৫ মে পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছি। সেটিকে আমরা ১৫ মে পর্যন্ত বাড়াতে চাচ্ছি। নিজেকে সুরক্ষিত করতে হবে পাশাপাশি অপরকে সুরক্ষিত করতে এ সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় ২০০০ ডাক্তার ও ৫০০০ হাজার নার্স নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে তাদের ট্রেনিং দিচ্ছি। যেন এটা ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকা মেডিকেলের দ্বিতীয় অংশটা করোনাভাইরাসের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলায় জেলায় যেন করোনা চিকিৎসা হতে পারে সেজন্য পদক্ষেপ নিয়েছি। তবে সবাইকে বিনা কারণে ঘরের বাইরে যাওয়া বন্ধ করতে হবে। সেখান থেকে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঘটতে পারে ও মৃত্যুও ঘটতে পারে। তরুণদের দোকানে বসে আড্ডা দেওয়া বন্ধ করতে হবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
রংপুর বিভাগের জেলাসমূহের জেলা প্রশাসকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মঙ্গাপীড়িত রংপুর অঞ্চলে যেন আবার মঙ্গা ফিরে না আসে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। সীমিত বা নিম্নবিত্ত মানুষের দিকে নজর দিতে হবে। তাদের সহযোগিতার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। সেজন্য যা দরকার সেভাবে ব্যবস্থা নেবো আমরা।
ভিডিও কনফারেন্সের সময় করোনায় মারা যাওয়া পুলিশ সদস্যদের জন্য শোক প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া করোনা মোকাবেলায় দায়িত্বরত পুলিশ সশস্ত্র বাহিনী ও বিজিবিকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
আজ বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে রংপুর বিভাগের রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ ভিডিও কনফারেন্স শুরু হয়।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী ছয় ধাপে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোর জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মতবিনিময় করেছেন।