জাকির হোসেন সুমন, ব্যুরো চিফ ইউরোপ: মহামারী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতালিতে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। বুধবার দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ২৫ হাজার ছাড়িয়েছে। ইতালির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার প্রধান অ্যাঞ্জেলো বোরেল্লি নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, গত ২৪ ঘন্টায়ব করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪৩৭ জন। এনিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৮৫ জনে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, বুধবার নতুন করে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে ৩ হাজার ৩৭০। ফলে দেশটিতে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক লাখ ৮৭ হাজার ৩২৭ । অ্যাঞ্জেলো বোরেল্লি বলেন, করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ও জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। ইতালিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমে বাড়ছে সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরার সংখ্যা।
গত একদিনে সর্বোচ্চ সুস্থ ২ হাজার ৯৪৩ জন করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। এনিয়ে সুস্থতার সংখ্যা ৫৪ হাজার ৫৪৩ জন। আমরা আশাবাদী খুব শিগগিরই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে ইতালি।
এদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতালিতে আট বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। তবে মোট কতজন বাংলাদেশি ইতালিতে আক্রান্ত হয়েছেন, তা জানা না গেলেও ৮ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে দেশটির বাংলাদেশি কমিউনিটি। যদিও বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে নিশ্চিত কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
মিলানে স্থানীয় মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুস সোবহান জুনায়েদ জানান, ‘মারা যাওয়া ৮ বাংলাদেশির মধ্যে ৪ জনকে ধর্মীয় রীতিনীতি ও রাষ্ট্রীয় নির্দেশনা মেনে তার তত্ত্বাবধানে মিলান মুসলিম কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মাওলানা জুনায়েদ আরও জানান, ইতালিতে করোনায় বিপর্যস্ত প্রবাসীদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলা কমিউনিটি। তাদের ফান্ড থেকে অসহায় বাংলাদেশিদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
যারা মারা গেছে, গত ২০ মার্চ (শুক্রবার) মিলানের নিগোয়ারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ৫৫ বছর বয়সী গোলাম মাওলা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইতালির বাণিজ্যিক এলাকা মিলানে স্বপরিবারে বসবাস করে আসছিলে। তার গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী।
এর পরে ৩০ মার্চ (সোমবার) মিলানে নারায়ণগঞ্জের অপু (৪২), ২ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) মিলানে কুমিল্লার মজিবুর রহমান ( ৪৬ বছর), ৮ এপ্রিল বেরগামোতে শরীয়তপুরের মোঃসালাউদ্দি ছৈয়াল (৪২), বেরগামোতে মানিকগঞ্জের মিজান (৪৫), রোমে পিরোজপুরের আনোয়ার হোসেন হিরু (৭২), ১১ এপ্রিল মিলানে সুনামগঞ্জের মানিক মিয়া (৪১) করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সবশেষে ১৬ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে ইতালির কোরামোনায় শাহজাহান মির্জা (৩০) নামে আরও এক প্রবাসী বাংলাদেশির মৃত্যু হয়। তার দেশের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়। এ নিয়ে করোনায় ইতালিতে আট বাংলাদেশির মৃত্যু হলো।
এদিকে করোনা ঠেকাতে ইতালিতে লকডাউনের সময় ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে এর আগে জরুরি কারণে কিছু কিছু এলাকায় লকডাউন তুলে নেওয়া হতে পারে জানিয়েছে দেশটির সরকার ।
ইতালির অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন অঞ্চলের শিল্পগুলোকে চালু রাখার প্রয়োজন মনে করছে সরকার। সম্প্রতি কিছু এলাকায় কম জনবল নিয়ে শিল্প প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি পেয়েছে। অনেকগুলো শহরে ৪০ শতাংশের বেশি কাজকর্ম শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইতালির ভেনেতোর আঞ্চলিক গভর্নর লুকা জাইয়া।