আন্তর্জাতিক ডেস্ক: করোনার প্রকোপে গোটা বিশ্বে মৃতের সংখ্যা দেড় লক্ষ ছাড়িয়ে গেল। নোভেল করোনা ভাইরাসে এখনও পর্যন্ত গোটা বিশ্বে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২২ লক্ষ ৬১ হাজার ৭৩৭ জন। মৃতের সংখ্যা ১ লক্ষ ৫৪ হাজার ২৫৬। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৫,৭২,১১০ জন। আমেরিকায় ইতিমধ্যেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭ লক্ষ পেরিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৭ হাজারেরও বেশি মানুষের। সেখানে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭,১০,০২১। মৃত্যু হয়েছে ৩৭,১৭৫ জনের। বিশ্বে মোট মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশই ঘটেছে মার্কিন মুলুকে। যদিও এরইমধ্যে সেখানে লকডাউন তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে। যাকে সমর্থন করেছেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলতি সপ্তাহে মিশিগান সহ আমেরিকার অন্তত তিনটি প্রদেশে নিষেধাজ্ঞা তোলার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান বহু মানুষ। মিশিগানের ঘটনায় বিক্ষোভকারীদের হাতে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রও দেখা গিয়েছে। তারপরই ধারাবাহিক ট্যুইটে মিশিগান, মিনেসোটা, এবং ভার্জিনিয়াকে ‘শৃঙ্খলমুক্ত’ করার দাবি তোলেন ট্রাম্প।
ভাইরাসের প্রকোপ রুখতে লকডাউন চলছে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে। ঘরবন্দি হয়ে রয়েছেন কমপক্ষে ৪৪০ কোটি মানুষ। এই সামাজিক দূরত্বের বিধি কঠোরভাবে মানার সুফলও মিলছে হাতেনাতে। বহু দেশে নতুন আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমতে শুরু করেছে। আর তারপরই একাধিক দেশের সরকার লকডাউন সরিয়ে অর্থনীতিকে সচল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। সুইজারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্কের মতো ইউরোপীয় দেশগুলিতে চলতি সপ্তাহেই খুলতে চলেছে স্কুল ও দোকানপাট। আমেরিকার পরেই সবচেয়ে বিপর্যস্তদের তালিকায় রয়েছে ইউরোপীয় দেশ ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন, জার্মানি, ব্রিটেন। জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে সংক্রমণের হার কমছে। তাই সোমবার থেকে ধাপে ধাপে দোকানপাট এবং স্কুলগুলি খোলার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। যদিও ইতিমধ্যেই মারণ এই ভাইরাসে সেদেশে মৃত্যু হয়েছে ৩ হাজার ৪০০ জনের। লকডাউন কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে ইতালিও। ভেনিসের রাস্তায় ফের ইতিউতি মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ছে। তবে, জাপান, ব্রিটেন এবং মেক্সিকোর মতো দেশ এখনও নিষেধাজ্ঞা তোলার ব্যাপারে কিছুই ঘোষণা করেনি। ব্রিটেনে মৃতের সংখ্যা ১৪ হাজার পার করতেই করোনার ভ্যাকসিন তৈরিতে টাস্ক ফোর্স গঠন করল বরিস জনসনের সরকার। যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন খুজে বের করা এবং তা উৎপাদনের পরিকাঠামো গড়ে তোলার ভার দেওয়া হয়েছে ওই টাস্ক ফোর্সকে। নেতৃত্বে রয়েছেন সরকারের মুখ্য বিজ্ঞান উপদেষ্টা স্যার প্যাট্রিক ভ্যালান্স।
অন্যদিকে, চীনের তরফে জানানো হয়েছে, করোনায় উহানে যত জনের মৃত্যু হয়েছে বলে সরকারি ভাবে ঘোষণা করা হয়েছিল, আসলে সংখ্যাটা তার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি। চীনের এই স্বীকারোক্তির পরই তোপ দাগতে শুরু করেছে আমেরিকা সহ পশ্চিমী দেশগুলি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি।’ বেজিং অবশ্য যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। এই বিষয়ে হু-কেও পাশে পেয়েছে তারা। হুয়ের কোভিড ১৯ বিভাগের টেকনিক্যাল লিড মারিয়া ভ্যান কারখভ বলেছেন, ‘আমার মনে হয়, সব দেশকেই এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। সবাইকে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে যে, আগের গণনা অদৌ সঠিক ছিল কিনা।’
পৃথিবীতে এমন কোনও কোনা বাকি নেই যেখানে থাবা বসায়নি এই মারণ ভাইরাস। আফ্রিকাতে এক রাতেই মৃতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। শনিবার মহাদেশের সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র নাইজিরিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এক সহযোগী। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমনের হার ধীরে ধীরে কমছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। স্পেনে মৃতের সংখ্যা শনিবার ২০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৯০ হাজার। সিঙ্গাপুরে আবার নতুন করে ৯৪২ জনের শরীরে মারণ ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে। আক্রান্তদের অধিকাংশই বিদেশি শ্রমিক।