নিউজ ডেস্ক: পৃথিবীটা ছোট হতে হতে আজ মুঠোর মধ্যে বন্দি। লকডাউনের জেরে মানুষের প্রধান সঙ্গী হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট আর মোবাইলের ছোট্ট স্ক্রিন। কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় দিনের বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছেন, কেউবা দেখছেন সিনেমা, ওয়েব সিরিজ আবার কেউ অনলাইন গেমে অবসর যাপনে মেতেছেন। সাময়িক এই অবসরের কর্মবিমুখতার ফলে ইন্টারনেট আসক্ত হয়ে পড়ছে গোটা দুনিয়াই। কিন্তু, অদূর ভবিষ্যতে লকডাউন উঠে গেলে স্বাভাবিক জীবনেও এই আসক্তির ঘোরতর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন মনোবিদরা।
দেশজুড়ে সম্পূর্ণ লকডাউনের আবহ নিত্য জীবনে বিরাট প্রভাব ফেলেছে। দীর্ঘদিন ধরে লকডাউন চলার ফলে অনেক ক্ষেত্রেই মানুষকে গ্রাস করছে আলস্য, কর্মবিমুখতা। ফলে গোটা দিনের বেশিরভাগটাই মোবাইলের পর্দায় কাটাচ্ছেন পড়ুয়া থেকে চাকুরীজীবী সবাই। লকডাউনের ২৩ দিনের মধ্যেই অনেকেই হয়ে পড়েছেন মোবাইল আসক্ত। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত আসক্তি ভবিষ্যতে জীবনের স্বাভাবিক ছন্দে ফিরে যেতে বেশ খানিকটা সমস্যার সম্মুখীন করতে পারে সাধারণ মানুষকে। এমনকী এই মোবাইল নির্ভরতা কাটাতে সময় লেগে যেতে পারে প্রায় ৬ মাস।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ-হাসপাতালের মনোরোগ চিকিৎসক ডাঃ দিলীপ মণ্ডল বলেন, সারাদিন মোবাইলের সঙ্গে সময় কাটালে আসক্তি আসা স্বাভাবিক। কিন্তু, তা থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে হবে। অবিলম্বে অতিরিক্ত মোবাইল নির্ভরতা কাটাতে না-পারলে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। তাঁর মতে, অবসর যাপনের জন্য বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলুন, কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে অনলাইন আড্ডা মারুন এবং পরিবারের সঙ্গে বেশি সময় কাটান। এইসময় নিত্যনতুন রান্না করার উপদেশ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
জিনগত বিশেষজ্ঞ ডাঃ দীপাঞ্জনা দত্ত জানিয়েছেন, মোবাইল বা এই ধরনের প্রযুক্তির সঙ্গে সীমাহীন সময় কাটানো উচিত নয়। দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য মোবাইল নির্ভর থাকাই বাঞ্ছনীয়। তাঁর মতে, ব্যবহারকারীকে সেই সময়টুকু নিজে থেকেই ঠিক করতে হবে। যদি দেখা যায়, কেউ অতিরিক্ত মোবাইল নির্ভর হয়ে পড়েছেন, সেক্ষেত্রে তাঁর পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবদের বিশেষ ভূমিকা পালন করতে হবে। আসক্তি থেকে সেই ব্যক্তিকে বের করে আনার জন্য তাঁদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে স্বাভাবিক কর্মজীবনে ফিরলে ধীরে ধীরে এই আসক্তি থেকে মুক্তি মিলবে বলেই আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে যুবসমাজকে অনেক বেশি সচেতন এবং দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কোনওভাবেই যাতে কর্মবিমুখ মনোভাব উঁকি দিতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি এবং কুঁড়েমি একত্রে চেপে বসলে স্বাভাবিক জীবনের লক্ষ্যবিন্দুটাই নড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কায় মনোবিদরা।