নিজস্ব প্রতিবেদক: পুলিশের বিদায়ী ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ প্রথম অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নেমেছিল। এবার ২০২০ সালে নতুন আরেকটি যুদ্ধে নেমেছে পুলিশ। এই যুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশের কোনো ট্রেনিং না থাকলেও আমরা মাঠে আছি, লড়ে যাচ্ছি। বিদায়ের প্রাক্কালে আজ মঙ্গলবার (১৪ এপ্রিল) সাংবাদিকদের সঙ্গে অনলাইনে মতবিনিময়ের সময় তিনি একথা বলেন।
বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিদায়ী আইজিপি বলেন, করোনা মোকাবিলায় প্রথম থেকেই মাঠে ছিল পুলিশ। যারা বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছে সেসব প্রবাসীদের ঘরে রাখতে তাদের খোঁজ-খবর নিতে কাজ করেছে পুলিশ। এমনকি সারাদেশে হাটে, মাঠে, ঘাটে, মসজিদে এবং মন্দিরে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করে যাচ্ছে। করোনা বিস্তার রোধের একটি উপায় ঘরে থাকা। দেশবাসীর উদ্দেশে আমি বলতে চাই, আপনারা ঘরে থাকুন, আমরা আপনাদের জন্য মাঠে রয়েছি।
তিনি বলেন, জনগণের ফোন পেয়ে পুলিশ এখন দ্বারে দ্বারে গিয়ে খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে। অনেকে মারা যাচ্ছেন যাদের স্বজনরা মরদেহের কাছে আসছে না। পুলিশ তাদের দায়িত্ব নিয়ে দাফন করছে। এছাড়াও অনেক এলাকা, অনেক সড়ক লকডাউন হয়েছে। করোনার ঝুঁকিতে সেখানে কাউকে চলাফেরা করতে দেয়া হয় না। অথচ সেখানেও রাস্তায় দাড়িয়ে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।
বিদায়ী আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী তার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সাংবাদিকদের বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই পুলিশের স্বচ্ছ ইমেজ প্রতিষ্ঠায় এবং মানবিক পুলিশ হিসেবে পুলিশ বাহিনীকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। জনতার পুলিশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একান্তভাবে কাজ করে গেছি। পুলিশ হবে জনতার এবং মানবিক। সাধারণ মানুষও পুলিশকে এখন মানবিক পুলিশ হিসেবেই দেখতে পাচ্ছে। যে কারণে ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে মানুষ পুলিশের কাছে সাহায্য চাচ্ছে। পুলিশও তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে সাহায্য পৌঁছে দিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমার কর্মকালীন নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত স্বচ্ছ। জঙ্গি, সন্ত্রাস ও মাদক নির্মূলে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি।
জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, পুলিশের দৃশ্যমান সাফল্য মানুষের মধ্যে আস্থার সৃষ্টি করেছে। আপনাদের জন্য আমরা রাস্তায় রয়েছি। পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় ঘরে ঘরে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে নিজ উদ্যোগে। জীবাণুনাশক স্প্রে ছিটানো হচ্ছে। করোনা আক্রান্ত মানুষদের নিজ উদ্যোগে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। মহাসড়কগুলোতে কাজ করে যাচ্ছে তারা। যাতে জাতীয় জরুরি সার্ভিসগুলো এবং সাপ্লাই লাইন ঠিক থাকে। পুলিশ হাসপাতালগুলোতে করোনা ইউনিট আইসোলেশনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে বিদায়ী আইজিপি বলেন, পুলিশ বাহিনী কোনও ব্যক্তির দায় নেয়নি এবং নেবেও না। অভ্যন্তরীণ তদন্তের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-নীতি ও আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সেগুলো মেনেই যেসব পুলিশ সদস্য অপরাধ করে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হয়।
প্রসঙ্গত, ডক্টর মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর আইজিপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের আজই শেষ দিন। বুধবার (১৫ এপ্রিল) তার স্থলাভিষিক্ত হবেন র্যাবের মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ। এরপর জাবেদ পাটোয়ারী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেবেন।