নিউজ ডেস্ক: করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে দেশব্যাপী চলমান গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি জানান, সরকার সাধারণ ছুটি আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করায় দেশব্যাপী চলমান গণপরিবহন বন্ধের সিদ্ধান্ত বাড়ানো হলো। শনিবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় সরকারি বাসভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জনান।
করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনা নামক এ অদৃশ্য শক্তিকে পরাজিত করতে আমাদের সবাইকে দল মত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সব মত পার্থক্য ভুলে সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সবাইকে ধৈর্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে। এ লড়াইয়ে জিততে হলে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৩১ দফা নির্দেশনা ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই।
তিনি বলেন, একটি কুচক্রী মহল এ দুর্যোগকালে বিভিন্ন গুজব ছড়াচ্ছে। এসব গুজবের বিরুদ্ধে সবাইকে সচেতন থাকার এবং গুজব সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এদিকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপপ্রধান তথ্য অফিসার মো. আবু নাছের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও এ তথ্য জানিয়েছেন।
এতে বলা হয়, জরুরি পরিষেবাসমূহ, খাদ্যদ্রব্য, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, জ্বালানি, ওষুধ, ঔষধশিল্প ও চিকিৎসা বিষয়ক সামগ্রী পরিবহন, কৃষিপণ্য, সার ও কীটনাশক, মৎস্য এবং প্রাণিসম্পদ খাতের দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, শিশুখাদ্য, জীবনধারণের মৌলিক উপাদান উৎপাদন এবং পরিবহন, গণমাধ্যম ও ত্রাণবাহী পরিবহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। তবে পণ্যবাহী যানবাহনে যাত্রী পরিবহন করা যাবে না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
এদিকে করোনাভাইরাসের প্রকোপ মোকাবেলায় সাধারণ ছুটির মেয়াদ ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ সময়ে পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বাইরে বের হওয়াও নিষিদ্ধ করেছে সরকার। শুক্রবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রজ্ঞাপনে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এতে বলা হয়, এই নির্দেশনা অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, আগের ছুটির ধারাবাহিকতায় ১৫ ও ১৬ এপ্রিল এবং ১৯ থেকে ২৩ এপ্রিল সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হল। সাধারণ ছুটির সময় আগামী ১৭-১৮ এপ্রিল এবং ২৪-২৫ এপ্রিল সাপ্তাহিক ছুটি সংযুক্ত থাকবে।
বর্ণিত ছুটি অন্যান্য সাধারণ ছুটির মতো বিবেচিত হবে না জানিয়ে আদেশে এই ছুটির সময় যেসব নির্দেশাবলী কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে তাও বলে দেয়া হয়েছে।
১. করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রশমনে জনগণকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে।
২. অতীব জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ঘরের বাইরে বের না হতে সবাইকে অনুরোধ করা হল।
৩. সন্ধ্যা ৬টার পর কেউ ঘরের বাইরে বের হতে পারবেন না। এ নির্দেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
৪. এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে সীমিত করা হল।
৫. বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তাকে দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করতে হবে।
আদেশে বলা হয়েছে, জরুরি পরিষেবার (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস, ফায়ার সার্ভিস, পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট ইত্যাদি) ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থা প্রযোজ্য হবে না।
এতে আরও বলা হয়, কৃষিপণ্য, সার, কীটনাশক, জ্বালানি, সংবাদপত্র, খাদ্য, শিল্প পণ্য, চিকিৎসা সরঞ্জামাদি, জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহন এবং কাঁচা বাজার, খাবার, ওষুধের দোকান ও হাসপাতাল এ ছুটির আওতার বাইরে থাকবে।
আদেশে আরও বলা হয়েছে, জরুরি প্রয়োজনে অফিস খোলা রাখা যাবে। প্রয়োজনে ঔষধশিল্প, উৎপাদন ও রফতানিমুখী শিল্প কারখানা চালু রাখতে পারবে।
জনপ্রশাসনমন্ত্রণালয়ের ওই প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, মানুষের জীবন জীবিকার স্বার্থে রিকশা-ভ্যানসহ যানবাহন, রেল, বাস সার্ভিস পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে।
জনগণের প্রয়োজন বিবেচনায় ছুটিকালীন বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।