কেশব মুখার্জি
আজ ভোরে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মীরপুরে, গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু-র আত্মস্বীকৃত এক খুনিকে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বরখাস্ত হওয়া ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদকে । আরও দুই মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামির মতো খুনি মাজেদের অবস্থানও এতদিন ছিল অজানা । এছাড়া আরও তিন মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামির মধ্যে দু’জন আছে মার্কিন দেশে, অপর এক আসামি কানাডায় ।
করোনা সংক্রান্ত কারণে আত্মগোপনকারি এই খুনী বাংলাদেশে ফেরেন বলে জানাগেছে । বাংলাদেশের স্থপতি, তাঁর দশ বছরে শিশুপুত্র-সহ তাঁর পরিবারের সকল সদস্যদের যেসব ঘৃণ্য খুনিরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল, ২০০৯ সালে বিচারের চূড়ান্ত রায়ে সেইসব খুনিদের মধ্যে ১২ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় । ইতোপূর্বে এক আসামি পলাতক অবস্থায় ২০০২ সালে জিম্বাবুয়েতে মারা যায় । ২৭ জানুয়ারি ২০১০, মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর করা হয় ।
১৯৭৫-এর ১৫ অগাস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর, ২৩ অগাস্ট (১৯৭৫) সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, মনসুর আলী এবং এ-এইচ- এম- কামরুজ্জামান বাংলাদেশের এই চার জাতীয় নেতাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আসনে বসেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম ষড়যন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক । ৩ নভেম্বর (১৯৭৫), মোশতাকের নির্দেশে খুলে দেওয়া হয় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার । এবং পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র অনুসারে ১৫ অগাস্টের খুনিরা কারাগারের ভিতরে ঢুকে, নির্দিষ্ট সেলে পৌঁছে, নৃশংসভাবে চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করে । উদ্দেশ্য বাংলাদেশকে রাজনৈতিক নেতৃত্বশূন্য করা । শুধু বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা নয়, ওই চার জাতীয় নেতা হত্যায়ও অংশ নিয়েছিল আব্দুল মাজেদ ।
ঢাকায় গ্রেফতার হওয়ার পর, জেরার উত্তরে আসামি জানিয়েছে, যে, ২০/ ২২ বছর সে পশ্চিম বাংলার রাজধানী কলকাতায় আত্মগোপন করেছিল ।
আব্দুল মাজেদের কথা যদি সত্যি হয়, তবে প্রশ্ন আসে, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি, বঙ্গবন্ধুর এক হত্যাকারী কী করে পশ্চিম বাংলার রাজধানীতে এত বছর আত্মগোপন ক’রে থাকতে পারলো ? এবং কার বা কাদের আশ্রয়ে সে ছিল ? আর কোনও পলাতক খুনি এখনও এখানে আত্মগোপন করে অবস্থান করছে কি-না ? এ বিষয়ে তদন্ত হওয়া প্রয়োজন নয় কি ?
(কেশব মুখার্জি কলাম লেখক, কোলকাতা থেকে )