‘৭৫ উত্তর আগস্ট ও নভেম্বর বাঙালীর শোকের মাস
প্রকাশ : 2022-11-03 12:01:15১ | অনলাইন সংস্করণ
নিউজ ডেস্ক
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দিবাগত রাতের ভয়াবহতার কথা ভাবলে এখনও গা শিউরে ওঠে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সে রাত কাল রাত হিসেবে স্থান করে নিয়েছে।ঐ রাতে পাকিস্তানি বর্বর সেনাবাহিনী হত্যা করেছে নিরস্ত্র বঙালীদের।১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের পূর্ব মূহুর্তে ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানিদের দোসর আলবদর , আল শামস বাহিনী ঢাকার বুদ্ধিজীবীদের ঘর থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে । ১৯৭২ সাল থেকে জাতি ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী ও তাদের দোসরদের হাতে দেশের সর্বত্র প্রতিদিনই হত্যার শিকার হয়েছে বাঙালী,।নির্যাতিত হয়েছে নারীরা।
আগস্ট মাস বাঙালীর নিকট শোকের মাস। ১৫ আগস্ট ‘শোক দিবস’। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড কারবালার হত্যাকাণ্ডের চেয়েও ভয়াবহ। কারণ কারবালায় ইমাম হোসেনের সাথে সৈন্যবাহিনী ছিল। তাঁরা সংখ্যায় কম হওয়ায় এজিদ বাহিনীর নির্মমতার শিকার হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা সশস্ত্র ঘাতকদের নিরস্ত্রদের ঠান্ডা মাথায় হত্যা। এমন হত্যাকাণ্ড মানব ইতিহাসে খুব কমই ঘটেছে।
১৯৭৫ সালের আগস্টের হত্যাকাণ্ডের মাত্র আড়াই মাসের মাথায় ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে ১৫ আগস্টের ঘাতকরা হত্যা করে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী জাতীয় চার নেতাকে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, তাজউদ্দীন আহমদ প্রধান মন্ত্রী, এম মনসুর আলী অর্থমন্ত্রী, এ এইচ এম কামারুজ্জামান পূর্ণবাসন মন্ত্রী, খন্দকার মোশতাক আহমদকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী করে গঠিত হয়েছিল মুজিব নগর সরকার। খন্দকার মোশতাক শুরু থেকেই স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গোপনে কাজ শুরু করে । পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন করা ছিল তাঁর উদ্দেশ্য। যা আঁচ করে বিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ মোশতাককে নিলডাউন করে রাখে। পররাষ্ট্র মন্ত্রীর কাজ বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে পালন করেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। যার দরুন মোশতাক তাজউদ্দিনদের সুনজরে দেখতেন না।
খালেদ মোশারফ সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য রক্তপাতহীন পরিবর্তন ঘটান।নাটের গুরু জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্ধি করেন। মোশতাক চক্রকে ক্ষমতাচ্যুত করে প্রধান বিচারপতি আবু সাদত মোহাম্মদ সায়েম সাহেবকে রাষ্ট্রপতি করেন। এ সময়ে ছাত্র ইউনিয়ন শোক মিছিল করে ধানমন্ডি যায়। খালেদ মোশারফের মা ও ভাইকে মিছিলের অগ্রভাগে রাখার ফলে ষড়যন্ত্রকারীরা এইমর্মে একটি গুজব শহরময় ছডিয়ে দেয় যে,”খালেদ মোশারফ ভারতের ইঙ্গিতে ক্যু করেছে এবং জেলে আটক আওয়ামী লীগ নেতাদের নিয়ে নতুন সরকার গঠিত হবে।”
বঙভবনে অবস্থানকারী মোশতাক, রশিদের তখন মাথা গরম, চোখে নেই ঘুম।ঠান্ডা মাথায় তারা ঘাতকদের জেলে পাঠায় আটক নেতাদের শীর্ষ চার জনকে হত্যা করার জন্য। জেলগেটে ঘাতকেরা বাঁধা পেয়ে রাষ্ট্রপতি তাদের পাঠিয়েছে বলে জানায়। বঙ্গভবন থেকে ফোন করে রশিদ ও মোশতাক জেলারকে নির্দেশ দেয় ঘাতকদের ভিতরে প্রবেশ করার জন্য। ঘাতকেরা চার নেতাকে একত্রিত করে ব্রাশফায়ারে হত্যা করে। দ্বিতীয় বার গিয়ে বেয়নেট চার্জ করে। যতদূর জানা যায় হত্যা তালিকায় রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমদের নাম ছিল।তাঁরা অন্য জেলে থাকায় বেঁচে যান।
জেল হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় সুপরিকল্পিত ও গোপনীয়ভাবে। আগস্টের খুনীচক্র বিমানযোগে দেশত্যাগ করার আগে জেলহত্যার খবর গোপন রাখা হয়। জেনারেল ওসমানী ও মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান তা জানতেন কি না তাও অপ্রমাণিত।
বিজ্ঞ তাজউদ্দীন আহমদ আন্দাজ করতে পেরেছিলেন যে তাঁকে হত্যা করা হবে। বাসা থেকে তাঁকে জেলে নেবার সময় স্ত্রীকে তিনি বলেছিলেন,” ধরে নাও এটা শেষ বিদায়। ”জেলে হত্যার আগে তাঁদের এক রুমে জড়ো করার সময় সৈয়দ নজরুলকে তিনি বলেছিলেন অজু করে নেন সময় নেই।” তিনি জেল খানায় তাঁদের আন্তর্জাতিক রেডক্রসের তত্বাবধানে রাখারও দাবি জানিয়ে ছিলেন।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সফল নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছিলেন জাতীয় চার নেতা। মোশতাক চক্র তাই ঠান্ডা মাথায় তাঁদের হত্যা করে জাতিকে যোগ্য নেতৃত্বশূন্য করার জন্য। বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় এসে খুনীদের বিচার করেছে।
প্রতিবছর জেলহত্যা দিবস নীরবে চলে যায়। দিবসটি জাতীয় শোক দিবস-২ হিসেবে পালন করা উচিত বলে আমি মনে করি। এ ব্যাপারে তাজউদ্দীন পুত্র সোহেল তাজ যে তিনটি দাবি জানিয়েছেন তা মেনে নিতে আবেদন জানাই।