হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে যা করবেন

প্রকাশ : 2024-04-21 16:27:09১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচতে যা করবেন

গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। রাজধানী ঢাকায় ৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। আগামী দিনে এই তাপপ্রবাহ আরও বাড়বে বলে সতর্ক করে দিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর । অসহনীয় এই গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকে। এ সময় সবচেয়ে বেশি ভয় হিটস্ট্রোক বা সানস্ট্রোকের। তবে হিটস্ট্রোক হওয়ার আগে পূর্বাভাস পাওয়া যায়। সর্তক হতে হয় সে সময়েই।

মানুষের শরীরের ভেতরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাইরে যদি ৪০ থেকে ৪৫ ডিগ্রি থাকে বা তাপমাত্রা শূন্যে নেমে যায় শরীরের তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৫-ই থাকবে। যে কোনও স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে তাপমাত্রা রেগুলেট করে মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস গ্রন্থি। এই জন্য অতিরিক্ত গরমে শরীর থেকে ঘাম নির্গত হয়ে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়। আবার অতি ঠান্ডায় বিভিন্ন হরমোনকে নিয়ন্ত্রণ করে রক্তনালিকে সঙ্কুচিত করে শরীরের তাপমাত্রা বাড়ায়। ফলে বাইরে যতই ঠান্ডা থাকুক, শরীরের ভেতরে তাপমাত্রা ঠিক থাকে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে হাইপোথ্যালামাসের কার্যক্ষমতা কমে গেলে শরীরের ভেতরে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের কাজ ঠিক মতো হয় না। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে হার্ট, কিডনি, লিভার বিকল হতে শুরু করে। হার্ট বিট বেড়ে যায়। মাসল ক্র্যাম্প হয়। ব্লাডপ্রেশার কমে যায়। ঘাম কমে যায়, মাথা ঘোরে, কথা অসংলগ্ন হতে পারে, শরীর জ্বরে পুড়ে যাওয়ায় মতো গরম হয়ে যায়, এগুলোই হিটস্ট্রোকের আগাম লক্ষণ।

হিটস্ট্রোকের আগাম লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হল, জ্বরের মতো গা গরম হয়ে যাওয়া। তাই অনেকেই সাধারণ জ্বরের সঙ্গে পার্থক্য করতে পারেন না। ফলে চিকিৎসা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। জ্বর হলেও গা তেতেপুড়ে যায়, যা হিটস্ট্রোকের আগাম লক্ষণ । টানা রোদে কাজ করলে, ঘরে বা কারখানায় গরমের মধ্যে একটানা কাজ করার পর শরীর তেতেপুড়ে যাওয়ার মতো গরম হলে ধরে নিতে হবে সেটা হিটস্ট্রোকের আগাম সতর্কতা। ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাসজনিত জ্বর হলে আগে শীত করবে, কাঁপুনিও দিতে পারে। প্রথমটার ক্ষেত্রে দেরি না করে তাকে ছায়ার মধ্যে, পাখার তলায় বা এসি রুমে বসিয়ে যতটা সম্ভব তার পোশাক খুলিয়ে পর্যাপ্ত পানি দিয়ে পুরো শরীর মুছিয়ে দিতে হবে। রোগীর যদি জ্ঞান থাকে তা হলে পানি, ওআরএস স্যালাইন খাওয়ানো যেতে পারে। এতে শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা কমবে। কিন্তু আচ্ছন্ন বা অজ্ঞান অবস্থায় থাকলে ঠোঁট ফাঁক করিয়ে পানি বা ওআরএস খাওয়ানো একদমই উচিত নয়। পানি ফুসফুস বা শ্বাসনালিতে ঢুকে গেলে বিপদ বাড়বে। তাই তাড়াতাড়ি নিকটবর্তী স্বাস্থকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া দরকার।

হিটস্ট্রোক এড়ানোর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ, সকাল দশটার পর এবং বিকেল পাঁচটার আগে রাস্তায় না বেরোনোই ভালো। কিন্তু এই রুটিন মেনে চলা সম্ভব না হলে সর্তকতা মানতে হবে। বাইরে গেলে ছাতা নিন বা মাথায় কাপড় বেঁধে নেবেন, সানগ্লাস ব্যবহার করবেন। মাস্ক বা সুতির ওড়না দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নেওয়া ভাল। সঙ্গে পানি রাখবেন। পরতে হবে হালকা সুতির পোশাক। সকাল ১০টার মধ্যে বাড়িতে রান্না বা কাপড় কাচার মতো পরিশ্রমের কাজ সারতে পারলে ভালো।

 আরও কয়েকটি সচেতনতা 

  •  দিনে অন্তত দু’বার গোসল করতেই হবে। বিকেলে বাচ্চারা খেলে আসার পর ভালো করে গোসল করিয়ে দেবেন।
  •  বাইরে বেরোনোর আগে পানি খেয়ে নিন। রোদ থেকে এসে কিছুটা জিরিয়ে নিয়ে পানি খেতে হবে। প্রস্রাব ঠিক মতো হচ্ছে কি না খেয়াল রাখুন। গরম থেকে এসেই ঠান্ডা পানি খাবেন না। এতে সর্দি-কাশি, গলা ব্যথার সম্ভাবনা থাকে।
  • জ্বর এলে সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ খাবেন না। দু-একদিনে জ্বর না কমলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অন্যান্য কোনও উপসর্গ থাকলে চিকিৎসককে বলুন।
  • বাইরে থেকে এসেই এসি ঘরে না ঢুকে একটু বাইরে জিরিয়ে নিন। এসি অফিসে ঢোকার সময়েও আগে ছায়ায় দাঁড়িয়ে জিরিয়ে নিন।
  •  হালকা খাবার খান।  ডাবের পানি, বাড়িতে তৈরি ফলের রস, লাস্যি, আখের রস, ছাতুর শরবত খান।
  • ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের পোশাক পরুন।
  • বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হবেন না। একান্তই বের হওয়া লাগলে ভারি কাজ এড়িয়ে চলুন, ঘনঘন বিরতি নিন এবং বিশ্রামের জন্য ছায়া বা শীতল জায়গা খুঁজুন, ছাতা ব্যবহার করুন।

 

সা/ই