হাতিরঝিলের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের রায়ে আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা

প্রকাশ : 2022-11-07 14:34:30১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

হাতিরঝিলের বাণিজ্যিক স্থাপনা উচ্ছেদের রায়ে আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা

রাজধানীর হাতিরঝিলকে জাতীয় সম্পত্তি ঘোষণাসহ কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়েছেন আপিল বিভাগ।একই সঙ্গে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজউকের করা আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) শুনবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাজউকের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ আজ সোমবার এ আদেশ দেন।আপিল বিভাগের এই আদেশের ফলে হাতিরঝিলে থাকা বাণিজ্যিক স্থাপনা আপাতত সরাতে হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন রাজউকের আইনজীবী হাছান ইমাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থাপনাগুলো যেভাবে আছে, সেভাবেই থাকবে।’

হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পের লে–আউট প্ল্যানের বাইরে অবৈধ স্থাপনা ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার বৈধতা নিয়ে ২০১৮ সালে পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট হয়। রিটটির চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে গত বছরের ৩০ জুন হাইকোর্ট কয়েক দফা নির্দেশনা ও পরামর্শসহ রায় দেন।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজউক লিভ টু আপিলের পাশাপাশি স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করে, যা গত ১৯ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।

আজ আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী ইমাম হাছান।রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ব্যবসায়ীদের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম।

পরে মনজিল মোরসেদ বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজউকের করা লিভ টু আপিল শুনবেন আপিল বিভাগ। লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার শীর্ষে থাকবে বলে আদেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়েছে।

রাজউকের আইনজীবী হাছান ইমাম বলেন, হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদনটি করা হয়। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা দিয়েছেন। ফলে হাইকোর্টের রায়ের আগে যেভাবে হাতিরঝিলে কার্যক্রম চলছিল, সেভাবেই কার্যক্রম চলবে। অর্থাৎ আপাতত বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করতে হচ্ছে না।

হাইকোর্টের রায়ের নির্দেশনা ও পরামর্শ
হাতিরঝিলের পানি ও এর নান্দনিক সৌন্দর্য মহামূল্যবান জাতীয় সম্পত্তি উল্লেখ করে তার সংরক্ষণ-উন্নয়নে কয়েক দফা নির্দেশনার পাশাপাশি ৯ দফা পরামর্শ দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, হাতিরঝিল এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্টসহ সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বরাদ্দ-নির্মাণ সংবিধান, পরিবেশ আইন, পানি আইন ও তুরাগ নদের রায় অনুযায়ী বেআইনি ও অবৈধ।

রায়ে আরও বলা হয়, হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় বরাদ্দকৃত সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান অবৈধ ও এখতিয়ারবহির্ভূত মর্মে তার বরাদ্দ বাতিল ঘোষণা করা হলো। রায়ের অনুলিপি পাওয়ার পরবর্তী ৬০ দিনের মধ্যে সব হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদের জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো।

হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার জন্য একটি আলাদা কর্তৃপক্ষ তথা ‘হাতিরঝিল লেক সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সরাসরি অধীনে গঠন করার পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) প্রকৌশল বিভাগ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪তম ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডকে যৌথভাবে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকার স্থায়ী পরামর্শক নিয়োগ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় হাইকোর্টের রায়ে।

হাইকোর্টের অপর পরামর্শে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য মাটির নিচে আন্তর্জাতিক মানের শৌচাগার স্থাপন করতে বলা হয়।

আদালতের দেওয়া পরামর্শের মধ্যে রয়েছে নির্ধারিত দূরত্বে বিনা মূল্যে জনসাধারণের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। পায়ে চলার রাস্তা, বাইসাইকেল লেন ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা। পানির জন্য ক্ষতিকর—এমন যান্ত্রিক যান তথা ওয়াটার ট্যাক্সি সার্ভিস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা। লেকে মাছের অভয়ারণ্য করা। হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি প্রকল্পটি বাংলাদেশের প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানী স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর নামে নামকরণ করা। হাতিরঝিল-বেগুনবাড়ি সম্পূর্ণ প্রকল্পটি সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও পরিচালনার ব্যয় রাজস্ব বাজেট থেকে বরাদ্দ করা।

হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, প্রতিটি ফোঁটা পানি অতি মূল্যবান। পানির চেয়ে তথা সুপেয় পানির চেয়ে মূল্যবান আর কোনো সম্পদ এ পৃথিবীতে নেই। সুতরাং প্রতি ফোঁটা পানির দূষণ প্রতিরোধ একান্ত আবশ্যক।