সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি বিআরটিসির বাস, নেওয়া হচ্ছে যাত্রীও

প্রকাশ : 2021-04-17 12:21:24১ |  অনলাইন সংস্করণ

  নিউজ ডেস্ক   

সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি বিআরটিসির বাস, নেওয়া হচ্ছে যাত্রীও

সড়কে অবাধে চলাচল করছে ব্যক্তিগত গাড়ি। আছে মাইক্রোবাস, সিএনজি চলিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের দাপট। চলতে দেখা গেছে বিআরটিসির যাত্রীবাহী বাসও। সড়কে গাড়ির তুলনায় চেকপোস্টের তেমন নজরদারি নেই। অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে দায়িত্ব পালন করছেন সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার (১৭ এপ্রিল) করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের বেঁধে দেওয়া বিধিনিষেধের চতুর্থদিনে সকাল সোয়া ৯টার পর রাজধানীর ঢাকা-ময়মনসিংহ প্রধান সড়কে এ চিত্র দেখা গেছে। 

সড়কের পাশে সকাল ৮টা থেকে রাজলক্ষ্মী মোড়ে বেসরকারি এক ব্যাংকের এটিএম বুথের নিরাপত্তা কর্মী মো. রনি হাসান দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, অন্য দিনের তুলনায় আজ সকাল থেকে ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি দেখা গেছে। এছাড়া মানুষের চলাচলও বেড়েছে। গতকাল (শুক্রবার) ও তার আগের দিন এত গাড়ি ও মানুষ রাস্তায় দেখা যায়নি।

রনি হাসান জানালেন, গত কয়েকদিন যেভাবে চেকপোস্টে প্রতিটি গাড়ি চেকিং করা হয়েছিল, আজ সেভাবে পুলিশকে কাজ করতে দেখা যায়নি। এ কারণে গাড়ি নিয়ে সহজেই চলে যাচ্ছেন সবাই। শুক্রবারও অনেক গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজ তেমনটা দেখা যায়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, দ্রুত গতিতে ব্যক্তিগত গাড়িগুলো সড়কে ছুটছে। প্রায় প্রতিটি গাড়িতেই তিন থেকে চারজনের অধিক যাত্রী রয়েছে। কয়েকটি মাইক্রোবাস যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে হঠাৎ দেখা গেল মহাখালীগামী একটি বিআরটিসির বাস থামিয়ে যাত্রী তুলছে। এছাড়া রাস্তার পাশে পরিবহনের অপেক্ষায় ছিলেন বেশ কিছু যাত্রী। তাদের অনেকে বিভিন্ন গাড়ি ভাড়া করে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ আবার মোটরসাইকেল থামিয়ে যাত্রী ডাকছেন। এছাড়া চেকপোস্টে অধিকাংশ ব্যক্তিগত গাড়িকে চেক না করেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। অবাধে চলছে গাড়িগুলো। 

রাজলক্ষ্মী মোড়ে চেকপোস্টের দায়িত্বে থাকা উত্তরা পশ্চিম থানার একজন উপ-পরিদর্শক বলেন, আজ সব গাড়ি চেক করা হচ্ছে না। যেসব গাড়িতে স্টিকার বা প্রতিষ্ঠানের ফাইল দেখা যাচ্ছে সেসব গাড়ির চালককে কিছু জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। কাউকে কিছু বললে অফিসের দোহাই দেন। কেউ কেউ মুভমেন্ট পাশ দেখান।

তিনি জানান, এভাবে অফিস খুলে ও যাত্রীদের যাতায়াতের পাশ দিয়ে শতভাগ ‘লকডাউন’ কার্যকর করা যাবে না। অনেকেই মনে করেন পুলিশ যাত্রীদের হয়রানি করছে। তাদের তো অনুমতি আছে, তাহলে কেন তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে, এমন প্রশ্নও করেন কেউ কেউ।

উত্তরার প্রধান এই সড়কটিতে আজ পথচারীদের যাতায়াতও চোখে পড়ার মতো। সবাই ছুটছেন যে যার গন্তব্যে। বেশিরভাগ পথচারীকে মাস্ক পরতে দেখা গেলেও দুই-চারজনকে মাস্ক হাতে নিয়ে অথবা থুতনির নিচে নিয়ে হাঁটতে দেখা গেছে।

করোনার সংক্রমণ রুখতে সরকার দেশে কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। ১৪ এপ্রিল থেকে এই বিধিনিষেধ কার্যকর হয়েছে। এর আগে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য গণপরিবহন বন্ধসহ মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে ১১ দফা কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল সরকার। দুদিন পরে সে সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে সকাল-সন্ধ্যা গণপরিবহন চলার অনুমতি দেওয়া হয়। এর একদিন পর খুলে দেওয়া হয় শপিংমলও। এতে সরকারের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে সমালোচনা করেন বিশেষজ্ঞরা।

এরই মধ্যে করোনায় সংক্রমণ ও মৃত্যু দুটোই বাড়তে থাকে। প্রতিদিন মৃত্যু ও সংক্রমণের নতুন রেকর্ড হচ্ছে দেশে। এ পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন ‘প্রয়োজনে আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে পারে সরকার’।

এরপর গত ৯ এপ্রিল সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ১৪ এপ্রিল থেকে ‘কঠোর ও সর্বাত্মক লকডাউন’ দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। পরে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীও একই ইঙ্গিত দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ১২ এপ্রিল ১৩ দফা নির্দেশনা দিয়ে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে সরকার।

এই বিধিনিষেধ আরোপের পর চেকপোস্ট বসিয়ে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। যারা জরুরি প্রয়োজনে বের হয়েছেন, তারা মুভমেন্ট পাস দেখাতে পারলেই ছাড়া পেয়েছেন। আর যারা যৌক্তিক কোনো কারণ দেখাতে পারেননি, তাদের কাউকে মামলা আবার কাউকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে।

এদিকে বিধিনিষেধের মধ্যে যাদের একান্তই বাইরে যাওয়া প্রয়োজন হবে তাদের জন্য মুভমেন্ট পাসের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) সকালে movementpass.police.gov.bd ওয়েবসাইট ও অ্যাপসের উদ্বোধন করেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।